প্রকাশিত: ১৩/০৭/২০১৮ ৭:৪৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৪৭ এএম

ডেস্ক নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়, এর শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যকার সম্পর্কে ভীতিকর থাকে। এটি আস্থা, বাধ্যবাধকতা, পারস্পরিক আবেগ এবং আরো অনেক কিছুর ওপর তৈরি।

শিক্ষকেরা যদি হন মা-বাবা, তবে ক্যাম্পাস হলো বাড়ি। ফলে সহজাতভাবেই অলিখিত চুক্তিতে লেখা চুক্তিতে আবদ্ধ থাকে ওই সম্পর্ক। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বন্ধন ভেঙে না গেলেও তাতে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করার চেষ্টার সময় একদল ছাত্র ক্ষমতাসীন দলের অ্যাক্টিভিস্টদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নীরব থেকেছে।

একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সমবেত হওয়ার চেষ্টা করলে ক্ষমতাসীন দলের অ্যাক্টিভিস্টদের হাতে আক্রান্ত হয়। আক্রমণের তীব্রতা ছিল নজিরবিহীন। এক দলীয় ক্যাডার হাতুড়ি দিয়ে এক ছাত্রের পিঠে আঘাত করে। হাতুড়ি দিয়ে তার পা দুটিতে আঘাত করা হয়, তার পিঠে মারাত্মক জখম করা হয়। আরো খারাপ বিষয় হলো, ছেলেটি সরকারি হাসপাতালে সংক্ষিপ্ত সময় থাকার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়, তাকে অন্যত্র চিকিৎসা নিতে হয়।

গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ ও সন্ত্রাসী

এদিকে ঢাকায় নেতাদের হেফাজতে নিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড মানেই সাধারণত কঠোর ও নির্মম জিজ্ঞাসাবাদ। তবে অন্য সবকিছুর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গ্রেফতার হওয়া অ্যাক্টিভিস্টদের জঙ্গিদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি এখানেই থেমে থাকেননি, আরো সামনে বেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

তবে যেমনটি মনে হয়েছিল, সেভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। এমনকি সরকারপন্থী লোকজনও হামলাকারী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিন্দা করে। পরে ভিসি তার অবস্থান বদল করে বলেন, তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনি আটকদের ‘জঙ্গি’ বলেননি, তবে তারা জঙ্গিদের মতো তাদের বক্তব্য প্রচারে ভিডিও ব্যবহার করেছে।

এই বাকসর্বস্ব বক্তৃতা ও অতিশয়োক্তির বাইরে থাকা সঙ্কট সম্ভবত চাপ ও অনেক ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরিণতি। প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তঃনিহিত ভূমিকা ও তারা যাদের সাথে সম্পর্কিত তাদের সাথে সম্পর্ক এখন প্রশ্নের মুখে। ভঙ্গুর সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিচালনার ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষমতাসীন দলের অ্যাক্টিভিস্টদের শক্তি প্রদর্শন দুঃখজনক মনে হলেও আইন শৃঙ্খলা প্রয়োগকারীদের আচরণও প্রশ্নের মুখে পড়ে। অন্যদের ওপর শারীরিক হামলার পরও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা যদি অবাধে ঘোরাফেরা করতে পারে, তবে তাদের ভূমিকা আর অ্যাক্টিভিস্টদের পর্যায়ে থাকে না, বরং তারাও আইনপ্রয়োগকারীকে পরিণত হয়ে যায়। ফলে শাসন পরিচালনার সীমারেখা এবং এর জের ধরে রাষ্ট্রের প্রকৃতি নিয়েই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে কেন দমনপীড়ন কাজ করে না

বাংলাদেশ যদি সমাজতান্ত্রিক ধরনের একদলীয় রাষ্ট্র হতো, তবে এই পদ্ধতি হয়তো কাজ করত। কিন্তু বাংলাদেশ তো তা নয়। এর খুবই সক্রিয় মিডিয়া থাকলেও বাস্তবতা ভিন্ন। বৈধ মিডিয়াগুলো নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মুখে রয়েছে, অনলাইন পোর্টালগুলো পূর্ণ বা আংশিক ব্লকসহ নানা ধরনের সেন্সরশিপের মুখে পড়ে। সবচেয়ে কার্যকর সেন্সরশিপ হলো সেল্ফ সেন্সরশিপ। অনেক ক্ষেত্রে এর মানে দাঁড়ায় এই যে রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে বা ভয় পেয়ে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে খবর বা মন্তব্য নিয়ে তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকা। এরপর অনিবার্যভাবেই আসে তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধ করতে মালিকদের ভূমিকা।

তবে যে সমাজে ব্যাপক ও প্রবল ইন্টারনেট রয়েছে, সেখানে সেন্সরশিপ কেবল সরকারি মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর ফলে ইউটিউব ও ফেসবুকে নিম্নমানের আইটেমের ছড়াছড়ি। এসব আইটেম সমালোচনামূলক, কটূক্তিপূর্ণ এবং অনেক সময় ভুয়া হলেও সবসময়ই ব্যাপকভাবে দেখা হয়। ফলে মিডিয়া জগৎ ও অ্যান্টি-মিডিয়া জগতের উপস্থিতির ফলে সেন্সরশিপকে অনেকাংশেই অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার দুর্বলতা পরিষ্কার হয়ে যায়।

কোটা আন্দোলন ও অপ্রয়োজনীয় জটিলতা

কোটা আন্দোলনের কথায় ফিরে যাওয়া যাক। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কোটা পুরোপুরি বিলুপ্ত অসম্ভব, তবে সংস্কার অনিবার্য। এ নিয়ে পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার চেয়ে বাস্তব নীতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে অনেক বেশি সমন্বয় প্রতিফলিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর কোটা রাজনীতিকরণ হলেও প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও নারীদের জন্য কোটা খুবই প্রয়োজনীয়। কোটার অবসান ঘটানো মানে মানবাধিকারের নীতিমালা অস্বীকার করা।

ফলে জবাব নিহিত রয়েছে নিয়োগব্যবস্থা সংস্কার সাধন, এমনকি অ্যাক্টিভিস্টরা পর্যন্ত তা বলছেন। বিভ্রান্তি না বাড়িয়ে সত্যিকারভাবে যা ঘটছে তা বলাই সর্বোত্তম। অর্থাৎ ব্যবস্থাটি পর্যালোচনা করে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক দাবিসহ সব দাবির সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা।

এতে বেশি কিছু করার প্রয়োজন হয় না। তবে সেভাবে তা হচ্ছে না। এর বদলে ক্ষমতাসীন দলের অ্যাক্টিভিস্টরা অন্যান্য ছাত্রকে পিটিয়ে কোটাব্যবস্থার চেয়েও মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...