প্রকাশিত: ২১/০৫/২০১৮ ৮:৫৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৪২ এএম

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশ জুড়ে চলছে মাদক বিরোধী অভিযান। জঙ্গি দমনের মতো এবার মাদক দমনে অভিযানের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভিযানে শুরুর পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে অনেক মাদক ব্যবসায়ী। অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে এখনো বরাবরে মতো ধরাছোঁয়ার বাইরে দেশের ইয়াবা সম্রাট টেকনাফের হাজী সাইফুল করিম।

চট্টগ্রামের সরকার দলীয় এক নেতা হাজী সাইফুলকে সরাসরি শেল্টার দিচ্ছেন। মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালীন সময়েই সরকার দলীয় ওই নেতাকে দেশের নাম্বার ওয়ান ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুলের ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। তাই সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকা দেশের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিমকে ধরা হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হাজী সাইফুলকে দমানো না গেলে দেশ থেকে ইয়াবা নির্মূল সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ঙ্কর মরণনেশা ইয়াবা। ধ্বংসের পথে দেশের যুবসমাজ। আর এর পেছনে রয়েছে দেশের নাম্বার ওয়ান ইয়াবা ব্যবসায়ী হাজী সাইফুল করিম ও তার পরিবারের ১০ সদস্যের ভয়াবহ সিন্ডিকেট।

এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করা সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামে অবস্থান করে সারা দেশের ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করছে। চট্টগ্রামে দেশের প্রধান এই ইয়াবা কারবারীকে শেল্টার দিচ্ছে চট্টগ্রামের সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। ওই নেতার প্রভাব খাটিয়ে হাজী সাইফুল ও তার পরিবার বহাল তবিয়তে থেকে বিস্তৃত করে যাচ্ছে তাদের ইয়াবা ব্যবসা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্রয় পেয়ে সাইফুল করিম ও তার পরিবার একাজ করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বশেষ তালিকায় বাংলাদেশে ইয়াবার ১ নাম্বার ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে টেকনাফের শীলবনিয়া পাড়ার এই হাজী সাইফুল করিমকে। হাজী সাইফুল করিম সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে ‘এসকে’ নামেই পরিচিত।

তালিকায় দেখা গেছে, শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম এবং তার ভাই রেজাউল করিম, রফিকূর করিম, মাহাবুবুল করিম ও আরশাদুল করিম মিকি সারাদেশে সবচেয়ে বড় ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

সাইফুল করিমের দুই শ্যালক- টেকনাফ বিএনপির নেতা জিয়াউর রহমান ও  শ্রমিক দলের নেতা আবদুর রহমানও এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইয়াবার গডফাদারের তালিকায় এই দুইজনের নামও রয়েছে।

সাইফুল করিমের ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলামও এই ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। সাইফুল করিম ও তার ইয়াবা সিন্ডিকেটের সব সদস্য এখন প্রকাশ্যে থেকেই তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা এখন টেকনাফে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণও করছে।
সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সাইফুল নিজেকে টেকনাফ বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক বলে পরিচয় দেন। তার বৈধ ব্যবসার সাইনবোর্ডের নাম এসকে ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু গত ৯-১০ বছর ধরে এককভাবে ইয়াবা ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।

সাইফুল করিমের ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূল শক্তি হিসেবে রয়েছে তার মামা মিয়ানমারে মংডুর আলী থাইং কিউ এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহিম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় দেখা গেছে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাঠান সাইফুলের মামা ইব্রাহিম ও তার অন্য সহযোগীরা। সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা মিয়ানমার থেকে এই ইয়াবা এনে সারা দেশে পাচার করেন।

ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইফুল করিম ওরফে হাজী সাইফুলের নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। মাদক ব্যবসা করে সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন অবৈধভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক।

অভিযোগ উঠেছে, এই কালো টাকা দিয়ে সাইফুল তার ভিত অনেক শক্তিশালী করেছেন। হাত করেছেন অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে।

সাইফুল করিম বিয়ে করেছেন টেকনাফের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিএনপির রাজনীতিবিদ মো. আবদুল্লাহর ছোট বোনকে। সাইফুলের শ্যালক জিয়াউর রহমান উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। অপর শ্যালক আবদুর রহমান উপজেলা শ্রমিক দলের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের রয়েছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সর্বশেষ যে তালিকা করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, সাইফুল করিম স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ায় তিনি অর্থ দিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তিনি চট্টগ্রামের ভিআইপি টাওয়ারে অবস্থান করেন। চট্টগ্রামের টেরিবাজারে “বিনয় ফ্যাশন” নামের একটি কাপড়ের দোকানের আড়ালে তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ইয়াবা পাচার করে।

সাইফুল করিম দাবি করেছেন, তিনি ও তার পরিবারের কেউই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত নন। তিনি টেকনাফ স্থলবন্দরে মিয়ানমারের সাথে ব্যবসা করেন। একটি বিশেষ মহল তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়েছে। তিনি ও তার পরিবার ষড়যন্ত্রের স্বীকার বলে দাবি করেন সাইফুল।

সরকার দলীয় নেতার সাথে সম্পর্কের কথা তিনি স্বীকার করে বলেন, একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পর পর ৪ বার তিনি সেরা করদাতা হয়েছেন। সেরা করদাতা পুরষ্কার গ্রহন অনুষ্ঠানে ওই নেতার সাথে তার পরিচয় হয়। কয়েকদিন আগে ছোট ভাই আরশাদুল করিম মিকির বিয়ে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিলে তিনি সামাজিকতা রক্ষা করতেই বিয়েতে অংশগ্রহন করেন। এর বাইরে ওই নেতার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলেও সাইফুল করিম দাবি করেন। সূত্র : পরিবর্তন.কম

পাঠকের মতামত

আজ পহেলা বৈশাখ

আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১ ...

বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

বান্দরবানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত রুমা,রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। ...

বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

পটিয়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার মোঃ ...