প্রকাশিত: ১৪/০৯/২০১৭ ৯:৩২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৩৪ পিএম

নিউজ ডেস্ক::
‘সেফ জোন’ (নিরাপদ অঞ্চল) তৈরি করতে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাব রাখল না মায়ানমার সরকার। মায়ানমারের ভেতরে সীমান্তের কাছে ওই অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দেয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। মায়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র কার্যালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে দেশটির জাতীয় দৈনিক মায়ানমার টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

স্টেট কাউন্সিলর অফিসের মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ইউ জ্য তে বলেছেন, নিরাপদ অঞ্চল তৈরির পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে মায়ানমার সরকার। ‘সেফ জোন’একবার প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক কর্তারা এর নিয়ন্ত্রণ নেবেন।

গত সপ্তাহে রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রসের মাধ্যমে নিরাপদ অঞ্চল তৈরির জন্য মায়ানমারকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেই পি দোতে ইউ জ্য তে নিরাপদ অঞ্চল তৈরির প্রস্তাবের ব্যাখ্যা করেন। একইসঙ্গে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে কেন অংশ নেবেন না সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সু চি’র কার্যালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, রাখাইন রাজ্যের দুটি সম্প্রদায়ের পুনর্বাসন ও মানবিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যেই জাতিসংঘের সম্মেলনে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন স্টেট কাউন্সেলর। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, সুরক্ষা এবং নিরাপত্তায় গুরুত্বারোপ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তিনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। এছাড়া সু চি’র সফর বাতিলের পেছনে সন্ত্রাসীদের হামলা ও প্রেসিডেন্ট ইউ তিন কিয়াওয়ের অসুস্থতাও রয়েছেন।

মায়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে বা জিরোলাইনে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর ঢল প্রতিদিনই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। সেই তৎপরতায় সহায়সম্বলহীন রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমার অংশে একটি ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ অঞ্চল করার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে এবং সেটা তাদেরই সমাধান করতে হবে বলে বাংলাদেশ মনে করে। সে কারণে বাংলাদেশ মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা করছে বলেও উল্লেখ করেন এইচ টি ইমাম।

তিনি বলেন, জেনেভা, ওয়াশিংটনসহ সব জায়গায় আমাদের রাষ্ট্রদূতরা কাজ করছেন, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আসে এবং এটির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমার অংশে নিরাপদ অঞ্চল বা ‘সেফ জোন’ করার প্রস্তাব আলোচনায় এসেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের কাছে বাংলাদেশ সেই প্রস্তাব দিয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে গণমাধ্যমের কাছে সরাসরি কোনো জবাব মেলেনি। তবে এইচ টি ইমাম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ জোন তৈরির বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।

মায়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টা যেমন বাংলাদেশ করছে, একইসাথে বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবেও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে। এইচ টি ইমাম বলেছেন, দ্বিপাক্ষিকভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ মায়ানমার সরকারের কাছে তিনটি ‘গঠনমূলক’ প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যৌথভাবে সীমান্ত পরিদর্শন এবং সীমান্ত প্রহরা। তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যে প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে সেটা হলো সশস্ত্র আক্রমণকারী বা জঙ্গী যারা, তাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে বিজিবি এবং দরকার হলে বাংলাদেশ আর্মি এবং বার্মিজরা মিলে একটা অপারেশন করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত নির্যাতন চালানো হচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে তারা স্রোতের মত বাংলাদেশে ছুটে আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে ও পরে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...

মিয়ানমারের পরবর্তী নির্বাচন দেশব্যাপী নাও হতে পারে: জান্তা প্রধান

মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরলে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের। তবে সে নির্বাচন ...

এমভি আবদুল্লাহতে বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র বসিয়েছে জলদস্যুরা

সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিজস্ব ...