প্রকাশিত: ২০/০৩/২০১৯ ১২:৩২ পিএম

মাহাবুবুর রহমান ::
পাহাড় কেটে সরকারি খাস জমিতে বিলাশ বহুল বাড়ি নির্মাণ করছে রোহিঙ্গারা। কোন ধরনের সরকারি অনুমতির তোয়াক্কা না করে শহরের বেশ কিছু এলাকাতে একের পর এক বাড়ি নির্মাণ করে চলছে রোহিঙ্গারা,তবে এদের মধ্যে বেশির ভাগই ২০/২৫ বছর আগে আসা রোহিঙ্গা। বর্তমানে সে সব রোহিঙ্গাদের ছেলে মেয়েরা সবাই দেশে বিদেশে প্রতিষ্টিত। তারাও এখন ব্যাপক প্রভাবশালী।

এদিকে বেশ কয়েকজন সচেতন ব্যক্তির তথ্যমতে অসংখ্য রোহিঙ্গা বাড়ি নির্মাণ করছে। তবে প্রশাসনের এ বিষয়ে কোন দৃষ্টি নেই এখনি এসব রোহিঙ্গাদের প্রতিহত করা না গেলে ভবিষ্যতে স্থানীয়দের জন্য করুন পরিনতি বয়ে আনবে বলে জানান স্থানীয়রা।

শহরের সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং অফিসের পেছনে আবু নামের এক ব্যক্তি জানান এই এলাকাতে আগে এত বেশি পরিমাণ ঘর বাড়ি ছিল না তবে এখন অসংখ্য ঘর বাড়ি হয়ে গেছে ফলে এখানে জমিও বেশ মূল্যবান হয়ে গেছে।

ইতি মধ্যে আমাদের এলাকাতে অনেক রোহিঙ্গা জমি কিনে বাড়ি ঘর তৈরি করছে। সম্প্রতি এখানে নুরুল ইসলাম নামের এক স্বীকৃত রোহিঙ্গা ছাদ দিয়ে পাকা বাড়ি করছে। অবশ্য সেই রোহিঙ্গা নুরুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে স্বপরিবারে বসবাস করছিল। বর্তমানে তার ছেলে মেয়েরা বিদেশে গিয়ে ভাল টাকা আয় করছে। অনেকে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে এনজিওতে চাকরি করছে তার এখন অনেক টাকা। পরিস্থিতি এমনযে এখন তাকে কেউ রোহিঙ্গা বলতেও সাহস পায়না। যদি রোহিঙ্গারা এভাবে নিয়ন্ত্রনহীণ হয়ে পড়ে তাহলে একদিন স্থানীয়রাই তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে।

কক্সবাজার শহরের ইসলামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেখানে ২৫ বছর আগে আসা রোহিঙ্গা এক ব্যক্তি বিশাল জমিতে একটি বাড়ি নির্মাণ করছে। ইতি মধ্যে বাড়িটির ছাদ হয়ে গেছে আরো একটি ছাদ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,উনার ছেলে মেয়েরা এখন অনেকে মালয়েশিয়া সহ ভিন্ন রাষ্ট্রে আছে আর এখানে থাকা ছেলে মেয়েরা অনেকে স্কুল কলেজে ভাল ডিগ্রিও নিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ বর্তমানে যেখানে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে কিছুদিন আগেও উঁচু পাহাড় ছিল সেই পাহাড় কেটেই বাড়ি নির্মাণ করছে তারা।

আরো পড়ুন :: চকরিয়ায় ডাকাতি, পুলিশ এসল্টসহ ছয়টি মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল গ্রেপ্তার
এদিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেন, বৃহত্তর পাহাড়তলীতে অন্তত ৫০ জনের অধিক রোহিঙ্গা ছাদ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছে। এছাড়া অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গা কাচাঁ পাকা বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। ৭ নং ওয়ার্ডকে মানুষ মিনি মায়ানমার হিসাবে চিনে। বর্তমানে যে সব রোহিঙ্গা ছাদ দিয়ে পাকা বাড়ি করছে তারা মূলত অনেক বছর আগে আসা রোহিঙ্গা, তাদের বেশির ভাগেরই ছেলেরা এখন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া থাকে। সেখান থেকে বিপুল টাকা পয়সাও আয় করছে আর এখানে সবার ভোটার আইডি কার্ডও হয়ে গেছে।

শহরের ঘোনারপাড়া এলাকার নাজমুল আলম বলেন,আমি ১৫ বছর আগে ২ গন্ডা রেজিষ্ট্রার্ড জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছি আমি এখনো পাকা বাড়ি করতে পারিনি। তবে এখানে অন্তত ১০০ এর বেশি পাকা দ্বিতল এবং ৩ তলা বাড়িও করেছে রোহিঙ্গারা। তবে তাদের এখন রোহিঙ্গা বলা কঠিন কারন তারা এখন খুব প্রভাবশালী এবং অনেকে সরকারি দলের রাজনীতি করে অথবা নেতাদের সাথে থাকে তাই উল্টো আমরা স্থানীয়রা তাদের ভয় করে চলতে হয়।

বৈদ্যঘোনা এলাকার রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন,খাজা মঞ্জিল এলাকা,ফাতেরঘোনা,বৌ বাজার এলাকা,ইসুলুঘোনা,টেকনাফ পাহাড়,সাহিত্যিকা পল্লী,বিজিবি ক্যাম্প,সৈকত আবাসিক এলাকা,টিএন্ডটি পাহাড় সহ আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা থাকে এর মধ্যে ২০০/৩০০ পাকা বাড়ি করা হয়েছে।

এসব রোহিঙ্গাদের যদি দমন করা না যায় আমাদের স্থানীয়দের অবস্থা খুবই খারাপ হবে। যদিও ইতিমধ্যে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। রোহিঙ্গাদের সন্তানরা এখানে খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, ইভটিজিং সহ প্রতিনিয়ত নানান অপরাধ করছে কিন্তু তারা টাকার জোরে সব কিছু থেকে পার পেয়ে যায়।

আলাপকালে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকি জামশেদ বলেন,এটা সত্যি অনেক রোহিঙ্গা আমাদের এলাকায় পাকা বাড়ি করছে,তাদের অনেক ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে ভাল আয় করছে আবার তারাই এখানে বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্য করে ভাল টাকা আয় করছে যা স্থানীয়রাও পারছে না। আর মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের স্থানীয় অনেক পুরুষ বা মহিলা রোহিঙ্গাদের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এতে অনেক সময় কিছু করা যায় না।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ হেলাল উদ্দিন কবির বলেন, রোহিঙ্গারা অনেকে বাড়ি গাড়ি করছে এটা সঠিক, আবার অনেকে রাজনৈতিক ভাবে শক্ত অবস্থান করে ফেলেছে এটা আমাদের জন্য ভাল নয়। এছাড়া অনেকে ভোটার আইডি কার্ড করে ফেলেছে। আর রোহিঙ্গা বিষয়টি এখন স্থানীয় পর্যায়ে নেই তাদের বাড়িঘর করা সহ আরো অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আসতে হবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে কি পরিমান রোহিঙ্গা শহরে বা এর আশেপাশে বসবাস করছে তাদের একটি তালিকা করা দরকার।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন রোহিঙ্গা বা অন্যকেউ যদি সরকারি খাস জমিতে পাকা বাড়ি করে থাকে তাহলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের তালিকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...