প্রকাশিত: ২০/০৭/২০১৮ ৯:০৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৩০ এএম

প্রথমে ‘ভালোবাসার সম্পর্ক’ থাকলেও একপর্যায়ে যখন রিফাত বেলায়েত জানতে পারে প্রেমিক শেখ আল আমিন বয়সে তার চেয়ে ছোট তখন তাকে সম্পর্কের বিষয়ে নিষেধ করে দেন। কিন্তু শেখ আল আমিন তার পিছু না ছাড়ায় মারধরের শিকার হয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

শেখ আল আমিন হোসেন ও রিফাত বেলায়েত দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার শিক্ষার্থী। প্রেমের বিষয়ে দু’জন ভিন্ন বক্তব্য দিলেও তারা যে ভালো বন্ধু ছিল এতে কারো দ্বিমত নেই। তবে বর্তমানে দু’জনের সম্পর্ক অনেকটাই শত্রুতার।

গত সোমবার সন্ধ্যায় রিফাতের উপস্থিতিতে আল আমিনের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েকজন যুবক সূর্যসেন হলের ব্যাডমিন্টন কোর্টের সামনে আল আমিনকে প্রচণ্ড পেটায়। এক পর্যায়ে আল আমিন অজ্ঞান হয়ে গেলে সহপাঠীরা তাকে ঢামেকে নিয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বলছেন, ওই বিভাগের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে ঘটনাটি আল আমিন আর রিফাতের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।

নিজেদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে কী এমন সমস্যা চলছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে এক বন্ধু হাসপাতালের বিছানায় কাঁতরাচ্ছে? চ্যানেল আই অনলাইনের এমন প্রশ্ন ছিল রিফাতের কাছে। জবাবে রিফাত বলেন: আল আমিনের সঙ্গে আমার ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। শুরুতে সে আমার কাছে তার বয়স লুকায়। আমি জানতাম আমরা সমবয়সী, কিন্তু পরে জানতে পারি সে আমার কয়েকদিনের ছোট। আর আমি ছোট কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবো না সেটা তাকে জানিয়ে দেই। কিন্তু আল আমিন কখনোই আমার পিছু ছাড়তো না। আমার পেছন পেছন বাসায় আসত, আমি যে বাসে উঠি ওই বাসে আমাকে ফলো করত।

‘পরে এক পর্যায়ে আল আমিনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়, যা বন্ধুত্বের থেকেও বেশি। আমি শুরুতে তার সঙ্গে কোনো সম্পর্কে জড়াতে না চাইলেও পরে সেটা হয়ে গেছে।’

তবে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে রিফাতের সঙ্গে ভালবাসার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আল আমিন। তিনি বলেন: আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, তবে আমাদের দু’জনের বোঝাপড়াটা ভাল ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে আমি রিফাতকে অনেক সাহায্য করতাম।

রিফাত বলেন: গত বছর ঈদুল আযহার পর অন্য একটা ছেলের কাছে আমার সম্পর্কে কিছু শুনে সে আমার বাসায় এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে যায়। আমার মা তাকে বার বার চলে যাওয়ার কথা বললে টানা দশ মিনিট আমাকে আঘাত করে আল আমিন।

‘‘পরে বাসা থেকে নামার সময় আমি দারোয়ানকে বললে আল আমিনকে আটকে রাখা হয়। লোকজন জানতে চাইলে নানান অসংগতির কথা চিন্তা করে আমার মা ওকে ছেড়ে দেয়। পরে আমরা কোন পুলিশি পদক্ষেপেও যাইনি।

এরপর আমার মা আল আমিনের বাবাকে ফোন দিলে তিনি অনুশোচনা প্রকাশ করেন। কিন্তু আমাকে বাসায় দেখতে আসবে বললেও পরে তিনি আর দেখতে আসেননি। ওনাকে ফোন দিলেও আমার সঙ্গে ধমকের সুরে কথা বলত।’’

রিফাত বলেন: এর মাঝে আমাদের মিড টার্ম পরীক্ষা আসে, তখন আল আমিন আমার অন্যান্য সহপাঠী ও অনুজদের সামনে চিৎকার করে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।

রিফাতের পরিবার পুলিশি পদক্ষেপে না গেলেও আল আমিন ঠিকই বছর দেড়েক আগে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিল। তবে পুলিশ সেটা না নিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাপারটি নিজেরাই মিটিয়ে ফেলার অনুরোধ করে।

নিজের মারধরের প্রতিশোধ নিতে আল আমিনকে বন্ধু বা ভাড়াটে কাউকে দিয়ে পিটানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে রিফাত বলেন: যারা আল আমিনকে পিটিয়েছে তারা কেউই আমার পরিচিত না। কারণ ওই সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে আল আমিনের দেখা হয়, ওর সঙ্গে একটা ছেলে ছিল। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সে আমাকে মারতে চেষ্টা করে। আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকরা এসে তাকে মারধর করে।

আল আমিনকে পেটানোর সময় সেখানে রিফাত উপস্থিত থাকলেও যখন একদল যুবক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন ঘটনাস্থলে রিফাতকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রিফাত বলেন: আশপাশে আমার কোন বন্ধু ছিল না। তাই ওই পরিস্থিতিতে এগিয়ে না গিয়ে আমি চলে আসি।

তবে রিফাতের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আল আমিন জানান ভিন্ন কথা। হাসপাতালের বিছানায় থাকা আল আমিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভালোই চলছিল। পরে রিফাতের একটা গোপনীয় বিষয় আমি জানতে পারলে তার মাকে জানাই, এটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।বিভিন্ন সময় সে ফোনে গালিগালজ ও মারার হুমকি দিত। পরে সোমবার সন্ধ্যার পর কয়েকজন যুবকের দ্বারা আমাকে উপর্যপুরি মেরে আঘাত করে হাসাপাতালে পাঠায়।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়: আল আমিনের এমআরআই করা হয়েছে। শনিবার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। মাথায় খুব বেশি আঘাত থাকায় তার প্রচুর ব্যথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আল আমিন এখন কিছুটা ভাল রয়েছে।

ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ঘটনার পরেই আমরা প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখেছি, এটা দুই সহপাঠীর অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তাই আমরা তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...