প্রকাশিত: ০৭/০৪/২০১৮ ৮:০৭ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:৩০ এএম


কালেরকন্ঠ::
ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্রে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগের পাহাড় জমছে পুলিশের টেবিলে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কিশোরী ও তরুণীর সংখ্যা বেশি। গভীর সম্পর্ক হওয়ার পর ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে তাদের। প্রতারকদের কেউ কেউ ভুয়া আইডি ব্যবহার করছে। পুলিশের তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগ বলছে, প্রতিদিনই অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানীর এক বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীর অভিজ্ঞতা পুলিশকেও স্তম্ভিত করে দিয়েছে। সম্প্রতি মেয়েটি নিজে ডিএমপি সদর দপ্তরের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যায়। সমস্যা গুরুতর হওয়ায় পরিবারকে জানায় পুলিশ। এখন মেয়েটির মনোচিকিত্সা চলছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে সাইবার ক্রাইমের শিকার যারা হচ্ছে তাদের ৭০ শতাংশ নারী এবং তাদের বয়স ২৫ বছরের নিচে। প্রেম, বিয়েসহ নানা প্রেক্ষাপটে নারীদের ফেসবুক ফাঁদে ফেলে প্রতারিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন হারানোর পর ‘ফেক আইডি’ ব্যবহার করে বিপাকে ফেলা হচ্ছে নারীদের। বিশেষ করে যেসব মোবাইল ফোন ছিনতাই হয় সেগুলো থেকে কৌশলে তথ্য বের করেও তাদের বিপদে ফেলা হচ্ছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছয়টি সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর। এসব সুপারিশে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি ফেসবুকসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের নানা বিষয় রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার (ডিসি) আলিমুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে যাচ্ছে সামাজিক প্রতিরোধ অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

রাজধানীর একটি খ্যাতিমান বিদ্যাপীঠের এক তরুণী শিক্ষার্থী সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে সম্প্রতি ডিএমপি সদর দপ্তরের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যায়। ওই শিক্ষার্থী জানায়, প্রায় ছয় মাস আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছেলের সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। আন্তরিক ‘প্রশ্ন আউট হওয়া মাত্রই আমি তোমাদের দিয়ে দেব, রিয়াল প্রশ্ন বের হলে আমিই দেব, তোমাদের বলতে হবে না’—এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘোষণা দেন এহসানুল কবির নামের এক তরুণ। পরিচয় গোপন করে অপকর্ম করলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ধরা পড়েছেন র্যাবের ফাঁদে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাব-৩-এর সদস্যরা। জানা গেছে, এহসানুল কবির রংপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়ার ছেলে।

র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এহসানুল কবির রাজধানীর মালিবাগ বাজার রোডের শেলটেক ড্রিম ভবনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার গোরিয়ালি গ্রামে। তিনি টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র বিতরণের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভুয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও বিতরণ করতেন। তবে রংপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাঁর ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে।

র্যাব-৩-এর সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল জানান, এহসানুল নিজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ‘Per Question 300 টাকা HSC’ এবং ফেসবুকের নিজস্ব আইডি ‘Kusen Deta’ খুলে প্রশ্ন ফাঁসসংক্রান্ত বিভিন্ন প্রচারণা চালাতেন। তিনি নিজেই ওই গ্রুপগুলোর অ্যাডমিন। দীর্ঘদিন ধরেই এহসানুল প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এসংক্রান্ত লোভনীয় ও অনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করতেন। এহসানুলের ব্যবহূত মোবাইলে মেসেঞ্জার গ্রুপের সদস্যসংখ্যা হাজারের বেশি। নামে-বেনামে তাঁর নামে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে অনেক গ্রুপ রয়েছে। র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, তিনি প্রশ্ন ফাঁসের ঘোষণা বা বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছেন নিয়মিত। সেখানে আহসান বলেছেন, ‘সবাইকে প্রশ্ন দেব, তবে অরজিনাল ছাত্র হতে হবে, আগে কমন, পরে টাকা।’ আরেকটি পোস্টে বলেছেন, ‘প্রশ্ন আউট হওয়া মাত্রই আমি তোমাদের দিয়ে দেব, রিয়াল প্রশ্ন বের হলে আমিই দেব, তোমাদের বলতে হবে না।’ এহসানুল ৩০টির বেশি WhatsApp-‰র অ্যাডমিনদের সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসসংক্রান্ত প্রচারণা চালাতেন এবং ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সক্রিয় ছিলেন।

পাঠকের মতামত

টেলিটকের ৪৮ লক্ষ গ্রাহকের সমস্যা দূর করার জন্য যাদুকরি পদক্ষেপ : পলক

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক বলেছেন, জীবন কানক্টেভিটি হবে বিটিসিএলর লাইফ ...