প্রকাশিত: ২৬/০৫/২০১৮ ১২:৪৪ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:২৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের পুলিশ গত এক সপ্তাহে মাদক-বিরোধী অভিযানে পঞ্চাশেরও বেশি মাদক পাচারকারীকে হত্যা করেছে। মানবাধিকার কর্মীরা আশঙ্কা করছেন এই অভিযানে ব্যাপক বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে এবং এটা ফিলিপাইন-স্টাইলের প্রচারণায় রূপ নিতে পারে।

অভিযান নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তি বিরোধী দলের কর্মী ছিল। সে কখনও মাদক ছুঁয়েও দেখেনি।

ওই নিহত ব্যক্তিসহ আরেক নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদেরকে মৃত অবস্থায় পাওয়ার বেশ কয়েক ঘন্টা আগে তাদেরকে পুলিশের হেফাজতে নিতে দেখা গেছে। অথচ কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাতের বেলা সন্ত্রাসী গংদের সাথে পুলিশের গুলি বিনিময়ের সময় তারা নিহত হয়েছে।

বাংলাদেশ গত সপ্তাহে এই মাদক বিরোধী অভিযান শুরু করেছে। অবৈধ মাদক বিশেষ করে ইয়াবার ব্যবসা বেড়ে গেছে – এমন যুক্তিতে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে।

এই মাদকগুলো সাধারণত প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে। কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী গত বছর ৩০০ মিলিয়ন বড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ইয়াবা ব্যবসা বেড়ে যাওয়ার পেছনে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং যে সব জেলে তাদের নিয়ে এসেছে, তাদের দায়ি করেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর আগে ইসলামী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চালানো হয়েছিল, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযান চালানো হবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে কয়েক ডজন অভিযুক্ত নিহত হয়েছিল।

গত সপ্তাহে অভিযান শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সকালে নয়জন অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এই নিয়ে ১০ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫২ জনে।

এদের মধ্যে একজন হলো আমজাদ হোসেন। পুলিশ জানিয়েছে, নেত্রকোনায় মাদকের গোপন আস্তানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সে। এ সময় গংয়ের সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পাল্টা গুলি চালালে হোসেন নিহত হয়।

নেত্রকোনা জেলার পুলিশের এএসপি আশরাফুল আলম গার্ডিয়ানকে জানান, তার  বিরুদ্ধে ১৪টি হত্যা মামলা, সহিংসতা এবং মাদক সংক্রান্ত মামলা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা তার বাড়িতে অভিযান চালাই এবং সেখান থেকে বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয়”।

তিনি বলেন, “পরে ক্রসফায়ারে নিহত হয় সে। তার গ্রুপের কিছু লোককে চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পাল্টা গুলিতে নিহত হয় সে”।

কিন্তু তার ভাই মাহিদ আহমেদ আনসারী গার্ডিয়ানকে বলেন, হোসেনের সাথে মাদক ব্যবসার কোন সম্পর্ক নেই। তিনি দাবি করেন, কথিত ক্রসফায়ারের বেশ কয়েক ঘন্টা আগে তাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

তিনি বলেন, “ওই হঠাৎ তল্লাশির সময় পুলিশ আমার ভাইকে নির্দয়ভাবে পেটায়। সে মাদক বিক্রি করতো বলে যে অভিযোগ, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাকে হত্যা করার কারণ হলো, সে বিরোধী দল বিএনপির ছাত্র শাখার জনপ্রিয় কর্মী ছিল”।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষের দিকে যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি করার অংশ হিসেবেই তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে।

ঢাকা-ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশের এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় “সারা দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে”।

“এগুলো বিচার-বহির্ভূত হত্যা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এগুলোর সাথে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা জড়িত। বাহিনীগুলো একই সাথে বিচারক, আইনজীবী এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে”।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত।

সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ডিরেক্টর মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেছেন, “একজন মন্ত্রী মাদকাসক্তদের গুলি করতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী এটাকে জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের সাথে তুলনা করেছেন। তাই উদ্বেগের কারণ রয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনী হয়তো কোন দায়বদ্ধতা এবং নজরদারি ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাবে”।

পাঠকের মতামত

কঠোর নির্দেশনার পরও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ছাড়ছে না ভোটের মাঠ

সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা ...

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...