প্রকাশিত: ০৯/১১/২০১৭ ৮:২০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:২৫ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::
ভারত মহাসাগরে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলা, উদ্ধার কার্যক্রম, নৌ বাণিজ্য রুট সক্রিয় রাখতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বসছে বিশ্বের ২৯ দেশের নৌ প্রতিনিধিদের সম্মেলন। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া চারদিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন উপলক্ষে ভারত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী ১১ দেশের নৌ বাহিনীর জাহাজ নৌ মহড়ায় অংশ নেবে।

কক্সবাজারে আয়োজন হতে যাওয়া এ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৭ নভেম্বর উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনিয়ে এটি প্রধানমন্ত্রীর ৮ম বার কক্সবাজার সফর।সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের সেনা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে কক্সবাজারে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া চলতি বছরের ৬মে কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্ভোধন এবং আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী।

২৬ নভেম্বর থেকে কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী রয়েল টিউলিপ হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই সম্মেলনে আগত বিদেশি প্রতিনিধিরা ঢাকা থেকে চাটার্ড বিমানে করে কক্সবাজারে যাবেন। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর আয়োজনে অনুষ্ঠেয় সম্মেলন উপলক্ষে পর্যটন শিল্পে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

নৌ বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ গত দুই বছর ধরে ভারত মহাসাগরীয় নেভাল সিম্পোজিয়াম অপারেশন কমিটির চেয়ারম্যান। আগামী জানুয়ারিতে শেষ হচ্ছে এই দুই বছরের মেয়াদ।

ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী নৌ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সাগরে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, তথ্য আদান প্রদান, নৌ বাণিজ্য রুট জলদুস্য মুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন।

এই সম্মেলনে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী ১১ দেশের নৌবাহিনীর জাহাজ ও প্রতিনিধি ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

সব মিলিয়ে ২৯ দেশের নৌ প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ২৬ নভেম্বর এই সম্মেলনের উদ্বোধন হলেও ২৭ নভেম্বর উপস্থিত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সম্মেলন চলবে।

বঙ্গোপসাগরে আসা বিদেশি জাহাজগুলো দিয়ে আগত নৌবাহিনীর সদস্যরা যাতে হোটেলে পৌঁছাতে পারে সেজন্য কক্সবাজার রেজু খালের মোহনায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। সেখানে একটি অস্থায়ী পল্টুন বসানো হবে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবালের সাথে। তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলন। আমাদের নৌবাহিনী প্রধান যেহেতু এই কমিটির চেয়ারম্যান, তাই আমরা তা আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি।

তিনি বলেন, ভারত মহাসাগর রুট দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭২ শতাংশ পণ্য আদান প্রদান হয়ে থাকে। এছাড়া তেলের ক্ষেত্রেও এই রুটটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই রুটটি যাতে আরো জনপ্রিয় ও নিরাপদ থাকতে পারে সেজন্য ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোর নৌবাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। এই সম্মেলন সেই সমন্বয়কে জোরদার করবে।

একইসাথে ভারত মহাসাগরে সংঘটিত যেকোনো দুর্যোগে একসাথে কাজ করবে উপকূলবর্তী দেশের নৌবাহিনীগুলো। এ লক্ষ্যে সাগরের মহড়ার পাশাপাশি স্থলভাগেও অনেক কর্মসূচি রয়েছে।

রেজু খালের মোহনায় ড্রেজিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাগরপথে আসা অনেকে যাতে তীরে উঠতে পারে সেজন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা চার দিনের জন্য কক্সবাজারে জড়ো হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এতে কক্সবাজার ব্র্যান্ডিং হবে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আমাদের কক্সবাজারের যে সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা রয়েছে তা এসব দেশের প্রতিনিধিরা দেখার সুযোগ পাবে।

এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারের জন্য বিশাল সুযোগ জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কৈয়ুম বলেন, ‘নৌবাহিনীর এই সম্মেলনে অনেক বিদেশি অতিথিরা আসবে। এতে পর্যটন স্পট হিসেবে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও তারকা মানের হোটেল সুবিধা রয়েছে তা এই শহরে আসতে পর্যটকদের আকর্ষণ করবে।

নৌবাহিনীর এই সম্মেলন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের জন্য অপূর্ব সুযোগ উল্লেখ করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘এতোগুলো দেশের প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে আসবে এতে অবশ্যই ব্র্যান্ডিং হবে কক্সবাজার। আমি তো মনে করি নৌবাহিনীর এ সম্মেলনে প্রকারান্তরে লাভবান হবে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প।’

পাঠকের মতামত