প্রকাশিত: ২১/১০/২০১৮ ১০:৪৪ পিএম

নিউজ ডেস্ক::

২৫০-২৬০ রানকে এই উইকেটে ভাল স্কোর বলছিলেন মাশরাফি। তার দল করলো আরো বড় রান, ২৭১। সেই রান তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে যা করল; তার নাম ২৮ রানের হার! ২৪৩ রানেই শেষ জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দৌড়। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল ২৮ রানে। একাই সান্তনা তাদের পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারা হলো!

লড়াই হবে। জিম্বাবুয়ে পুরো শক্তি নিয়ে এসেছে। সেরাদের নিয়েই সিরিজে নেমেছে। বাংলাদেশের কন্ডিশন এবং উইকেট তাদের বেশ চেনাজানা। সিরিজ শুরুর আগে জিম্বাবুয়েকে ঘিরে এমনতর ইতিবাচক সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে নামা জিম্বাবুয়েকে দেখে মনে হলো ব্যাটিংয়ের মৌলিক নীতিই যেন ভুলে গেছে এই দলটি।

এই ম্যাচে লড়াই, প্রতিদ্ব›িদ্বতা, উত্তেজনা-ইত্যকার কিছু খোঁজা হাস্যকর শোনায়। শক্তিমান বাংলাদেশের সামনে জিম্বাবুয়েকে বড্ড বেশি অসহায় দেখালো সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে। যদিও শেষের দিকে এসে শন উইলিয়ামস ও কাইল জারভিস ধুমধাম হাঁকিয়ে জিম্বাবুয়ের হারের ব্যবধান খানিকটা কমান।

উত্তেজনা-আনন্দের যা কিছু ঝিলিক তার সবকিছু মিললো শুধু ম্যাচের প্রথমভাগে; বাংলাদেশের ইনিংসে। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ব্যাটে। একপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা চটজলদি ডাগআউটে ফিরে আসছেন। আর অন্যপ্রান্তে ইমরুল কায়েস দক্ষতার সঙ্গে ইনিংসকে সামনে বাড়াচ্ছেন। শুরুর ছয় উইকেটের পতন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংসে এমন দৃশ্যেরই দেখা মিললো। সপ্তম উইকেটে সাইফুদ্দিন যোগ দিয়ে ইমরুলের অবদানে নিজের নামও যোগ করেন। শুরুতেই অবশ্য স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন। কিন্তু টিভিতে রিপ্লে দেখে থার্ড আম্পায়ার রড টাকার জানান-সাইফুদ্দিন নটআউট! ওটা ক্লিন ক্যাচ ছিল না।

ইফুদ্দিনের ঘুরে দাড়ানোর সেই শুরু। শেষ ওভারে যখন আউট হলেন ততক্ষনে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। ইমরুলের সঙ্গে সাইফুদ্দিনের সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ যোগ করে ১২৭ রান। দাপুটে এই সময়টায় নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন ইমরুল কায়েস। ১১৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৮ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পুরো করার পর ইমরুল বাকি সময়টায় টি-টুয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালান। পরের ২২ বলে হাঁকান ৪০ রান! তার ১৪০ বলে ১৪৪ রানের ইনিংসে ১৩টি বাউন্ডারি এবং ৬টি ছক্কা! ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান রেকর্ডের (১৪৪) মালিকানায় মুশফিকের সঙ্গে এখন ইমরুল যৌথভাবে দাবিদার। ১৫৪ রান নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছেন তামিম ইকবাল।

 

ফর্ম নেই-এই অভিযোগে এশিয়া কাপের দলে জায়গা পাননি ইমরুল কায়েস। কিন্তু টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তামিম ইনজুরিতে পড়লে এবং মাঝপথে ওপেনারদের বেহাল দশা দেখে হঠাৎ ‘এসওএস’ পাঠিয়ে দেশ থেকে তাকে ডেকে আনা হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ছয় নম্বরে অপরিচিত ব্যাটিং পজিশনে খেলতে নেমেই সেই ম্যাচে অপরাজিত ৭২ রানে হাসে ইমরুল কায়েসের ব্যাট। আর মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ১৪৪ রানের বিশাল সেঞ্চুরির ইনিংস সামনের অনেকদিন ওপেনিং পজিশনে তার থাকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

সামনে বছরের বিশ্বকাপের একাদশেও সম্ভবত ইমরুলের এই সেঞ্চুরি তাকে আগাম জায়গা করে দিলো! ৩০ ওভারে ১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এই ম্যাচে বড়জোর আর কতদুর যেতে পারবে-এমন একটা শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে ডাগআউটে, এমনকি প্রেসবক্সেও! তবে ২২ গজে থাকা ইমরুলের ব্যাট নির্ভরতা দিল। সেই শক্তিতেই বাংলাদেশের ইনিংস পৌছে গেল ২৭১ রানের বড় সঞ্চয়ে।

৩০ বছর বয়সে সবচেয়ে ‘বর্ষীয়ান’ বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হওয়া ফজলে রাব্বী মাহমুদ ব্যাটসম্যান হিসেবে এই ম্যাচকে খুব দ্রুতই ভুলে যেতে চাইবেন। অভিষেকে অনেক ‘বিখ্যাত’ ক্রিকেটারের মতো তিনিও শূণ্য রানে আউট! বোলিংয়েও যখন এলেন ততক্ষনে বাংলাদেশ ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি প্রায়। ৩ ওভারে ১৬ রানের বোলিংকে আহামরি কিছু বলার উপায় নেই। এই ম্যাচে ফিল্ডিংকেই কেবল নিজের আনন্দময় সময় হিসেবে ভাবতে পারেন ফজলে রাব্বী। সরাসরি থ্রোতে ডোনাল্ড ত্রিপানোকে রানআউটের পুরো একক কৃতিত্ব তার।

 

রান তাড়ায় নামা জিম্বাবুয়ের ভালো’টা হলো শুধু ওপেনিংয়ে। প্রথম উইকেট জুটিতে ৪৮ রানের পর জিম্বাবুয়ের ইনিংসের বাকি সময়টায় যা দেখা গেল, তা শুধু ব্যাটসম্যানদের আসা আর যাওয়া! নাজমুল ইসলাম অপু ও মেহেদি হাসান মিরাজের স্পিন এবং মুস্তাফিজের পেসের সামনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব দেখে গ্যালারির দর্শকরাও সহমর্মিতা জানালো; জিম্বাবুয়ের উইকেট পড়ছে, কিন্তু তেমন বেশি হাততালি কই! ৩৬ ওভারে ১৪৬ রানে জিম্বাবুয়ের ৬ উইকেট পতনের পর এই ম্যাচের অপেক্ষা রইল একটাই-বাংলাদেশ জিতছে কত রানে?

সেই অপেক্ষা শেষ করতে জিম্বাবুয়ে একটু বেশি সময় নিলো শুধু, এই যা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 
বাংলাদেশ: ২৭১/৮ (৫০ ওভারে, লিটন ৪, ইমরুল ১৪৪, ফজলে রাব্বী ০, মুশফিক ১৫, মিঠুন ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ০, মেহেদি মিরাজ ১, সাইফুদ্দিন ৫০, মাশরাফি ২*, মুস্তাফিজ ১*, জারভিস ৪/৩৭, চাতারা ৩/৫৫)
জিম্বাবুুয়ে: ২৪৩/৯ (৫০ ওভারে মাসাকাদজা ২১, জুওয়াউ ৩৫, টেইলর ৫, আরভিন ২৪, সিকান্দার রাজা ৭, শন উইলিয়ামস ৫০* পিটার মুরস ২৬, ত্রিপানো ২, মাভুতা ২০, জারভিস ৩৭, চাতারা ২*, মেহেদি মিরাজ ৩/৪৬, নাজমুল ইসলাম অপু ২/৩৮, মুস্তাফিজ ১/২৯)
ফল: বাংলাদেশ ২৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা: ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় ম্যাচ: ২৪ অক্টোবর, চট্টগ্রাম।

পাঠকের মতামত