প্রকাশিত: ২২/০৫/২০১৭ ৭:০৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৪৮ পিএম

উত্তর প্রদেশ: প্রকাশ্য রাস্তায় চুটিয়ে প্রেম করবেন, সাবধান! ভুলেও এগোবেন না। ভারতের উত্তর প্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ শপথ নেয়ার পরই যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড গঠন। রাস্তাঘাটে প্রেমিক যুগলের প্রকাশ্য অশালীনতা বন্ধ করার লক্ষ্যেই থানায়-থানায় এই অ্যান্ডি রোমিও স্কোয়াড গঠনের নির্দেশ দেন যোগী।

কিন্তু নিয়ম পালনের নামে এই স্কোয়াড অনেক ক্ষেত্রেই বাড়াবাড়ি করছে, সীমা অতিক্রম করে অকারণে হেনস্থা করছে তরুণ-তরুণীদের। এমন খবর মিলেছিল স্কোয়াড গঠিত হওয়ার পরই।

এবার অ্যান্টি রোমিওদের বাড়াবাড়ির চূড়ান্ত নিদর্শন সামনে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও’র মাধ্যমে। ‘অখিলেশ যাদব ফ্যানস’-এর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এই ভিডিও’য় দেখা গেছে, প্রকাশ্যে অশালীনতা নিবারণের নামে কীভাবে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে এক প্রেমিক যুগলকে।

ঘটনাটি উত্তর প্রদেশের কোন অঞ্চলের তা অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি। সরকারি নির্দেশে গঠিত অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হাতেই ওই যুগল নিগৃহীত হচ্ছেন, নাকি কোনো স্বঘোষিত রোমিও-বিরোধীরা আক্রমণ চালাচ্ছে দু’জনের উপরে, তা-ও জানা যায়নি। কিন্তু যেটুকু জানা যাচ্ছে তা থেকে এটা স্পষ্ট যে, শালীনতা রক্ষার নামে চূড়ান্ত নিগৃহীত হতে হয়েছে এক যুগলকে।

ওই যুবক-যুবতী রাস্তায় দাঁড়িয়ে একান্তে কথা বলেছিলেন বলে জানা যায়। সেই সময়েই শালীনতার ‘পুলিশ’রা হামলা চালায় তাদের উপরে। প্রকাশ্যে প্রেম করার ‘অপরাধে’ শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। বেল্ট, রড দিয়ে মারা শুরু হয় দু’জনকে। দু’জন হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে থাকেন। কিন্তু তাতে মন ভেজেনি নিগ্রহকারীদের।

অ্যান্টি রোমিওরা জোর করতে থাকে, দু’জনকে এই মুহূর্তেই বিয়ে করতে হবে। যুগল হাত জোড় করে বলেন, তাদের এখনো বিয়ের বয়সই হয়নি। বয়স হলেই বিয়ে করে নেবেন তারা। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট হয়নি অ্যান্টি রোমিও বাহিনী। সেসময় বিয়ে করার জন্য জোর করার পাশাপাশি চলতে থাকে মার এবং গালিগালাজ।

যুবতী তখন মনের জোর সংগ্রহ করে বিব্রতকারীদের বলেন, ‘যদি আপনাদের বাড়ির কোনো মেয়ে এমন কাজ করত তাহলে আপনারা কী করতেন?

এ কথায় যেন আগুনে ঘৃতাহূতি পড়ে। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে অ্যান্টি রোমিও বাহিনী। যুবতী যে বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন তা বুঝতে পেরেছিলেন তার সঙ্গীও। সেই কারণে যুবতী কথাটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ চেপে ধরেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে।

অ্যান্টি রোমিও বাহিনীর সদস্যরা দু’জনকে টানে নিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকে, ‘দেখাচ্ছি, আমাদের বাড়ির মেয়েরা এমনটা করলে তাদের সঙ্গে কী করতাম! তাদের সঙ্গে কী হতে চলেছে তা কল্পনা করে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন যুবক-যুবতী।

শেষ পর্যন্ত দু’জনের কী পরিণতি হলো তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি। কিন্তু শালীনতা রক্ষার নামে এ হেন নির্যাতন মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

পোস্ট করার কয়েকদিনের মধ্যেই কয়েক লাখ ভিউ এবং শেয়ার পেয়ে গেছেএই ভিডিও। সবাই প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চাচ্ছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার দাবি সরকারের কানে পৌঁছে কি-না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পাঠকের মতামত