প্রকাশিত: ২১/১০/২০২১ ১০:১৮ এএম

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া

কক্সবাবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে প্রতিনিয়তই দিনেরাতে রাতে সমানতালে পাচার হচ্ছে লাখ লাখ টাকার গাছ-কাঠ! সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে শুরু করে সামাজিক বনায়নও রেহাই পাচ্ছে না। পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িয়ে পড়েছেন কাঠপাচারে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলে এ বনের গাছ-কাঠ পাচারের মহোৎসব। এ ৮মাস বনকর্মীদের কাছে দুহাতে টাকা কামানোর ‘সিজন মৌসুম’ নামেও বেশ পরিচিত!
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ফান্ডসহ সরকারী অর্থায়নে সৃজিত বন বাগান ধ্বংসের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে সরকারের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পেকুয়া উপজেলার ১টি রেঞ্জ অফিসের আওতায় ৩টি বন বিট থেকে চলছে কাঠ পাচারের মহোৎসব। পাচার হওয়া এসব কাঠ-গাছ পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে স্থাপিত অবৈধ করাতকলে নিয়ে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। পাচার হওয়া গাছ-কাঠগুলোর মধ্যে রয়েছে আকাশমণি, জারুল, জাম, গামারি, কড়ই ও গর্জনসহ নানা প্রজাতির গাছ। দিনে এসব গাছ কেটে রাতভর তা পেকুয়ার বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন সমিলে পাচার করা হয়। রাত যত গভীর হয় পাল্লা দিয়ে ততই বাড়তে থাকে পেকুয়ার বারাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে গাছ-কাঠ পাচারের উৎসব।

পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া রেঞ্জের টইটং বন বিট, বারবাকিয়া বন বিট, ও পহরচাঁদা বন বিটের নিয়ন্ত্রণাধীন বনাঞ্চল থেকে থেকে প্রতিদিন নির্বিচারে এসব মূল্যবান গাছ কাটা হচ্ছে। আর এ তিন বন বিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারীরা বন নিধনে মেতে উঠেছে।

অনুসন্ধনে আরো জানা যায়, বিশেষ করে পেকুয়া বাজার, টইটং বাজার, হাজী বাজার, আরবশাহ বাজার ও বারবাকিয়া বাজারের অবৈধ সমিলগুলোতে এসব গাছ-কাঠ পাচার করা হচ্ছে। বারবাকিয়া ও টইটং বনবিটের বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আমির হোসেন গজনবীর সাথে স্থানীয় স্থানীয় কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেটের রয়েছে দহরম-মহরম ‘লেনাদেনা’ সম্পর্ক। জিপ প্রতি ১ হাজার টাকা, মিনি ট্রাক ৩ হাজার টাকা , বড় ট্রাক ৫থেকে আড়াই হাজার টাকা, টিসি ট্রাক ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছে পহরচাঁদা ও বারবাকিয়া বন বিটের কর্মকর্তা! আমির হোসেন গজনবী এসব চাঁদার টাকা উত্তোলনের জন্য শীলখালী ইউনিয়নের সবুজ পাড়া গ্রামের মোক্তার নামের একজন লোকককে নিয়োগ দিয়েছে। মোক্তার নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে বনবিটের লোক পরিচয় দিয়ে প্রতিদিনি সকাল-সন্ধ্যা পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন কাঠ-গাছ ব্যবসায়ী ও অবৈধ করাতকলের মালিকদের কাছে গিয়ে বন বিভাগের নাম ভাঙ্গিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে।

বন বিভাগের লোক পরিচয় চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোক্তার বলেন, বারবাকিয়া ও পহরচাঁদা বিট কর্মকর্তার কথামতে তিনি বিভিন্ন কাঠ ও গাছ ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা উত্তোলন করেন। উত্তোলিত সব টাকা বিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবীকে দিয়ে দেওয়া হয়। পরে উত্তোলিত সিংহভাগ টাকা গজনবী নিজেই পকেটস্থ করেন বলে মোক্তার জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বারবাকিয়া রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গত এক মাস ধরে নির্বিচারে পাচার ও হরিলুট হচ্ছে সরকারী অতি মূল্যবান বৃক্ষ মাদার ট্রি-গর্জন। স্থানীয় প্রভাবশালী গাছ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও বনকর্মীদের সহায়তায় মাদার ট্রি পাচার অব্যাহত রয়েছে। টইটং বনবিট, পহরচাঁদা বিট ও বারবাকিয়া বন বিটের অধীন রিজার্ভ ফরেষ্টের বিভিন্ন স্পট থেকে মাদার ট্রি গর্জন সহ নানা প্রজাতির গাছ বন বিভাগের স্থানীয় অফিসগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অনেকটা প্রকাশ্যেই পাচার করা হয়।
টইটং ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, ধনিয়াকাটা পূর্ব পাড়ার সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই সরকারী বনাঞ্চলের গাছ পাচার হয়। বন বিভাগকে গাছ পাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে বললেও তারা কথা শুনেনা।

বারবাকিয়ার বাসিন্দা মো: ইলিয়াছ অভিযোগ করে জানান, বারবাকিয়া বনবিট কর্মকর্তা গজনবীর কারণেই বনাঞ্চল নিধনের পাশাপাশি জবর দখলও হচ্ছে। তিনি রেঞ্জারের অপসারণ করতে উর্দ্ধতন বন বিভাগের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বারবাকিয়া ও পহরচাঁদা বনবিট কর্মকর্তা আমির হোসেন গজনবীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ অস্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে মুফোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

পাঠকের মতামত