প্রকাশিত: ২৮/০৩/২০২০ ৬:৫৪ পিএম
পুলিশ দেখেই হাতজোড় করলেন বৃদ্ধ
পুলিশ দেখেই হাতজোড় করলেন বৃদ্ধ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
কিন্তু উপায় নেই বলে কাগজ কুড়াতে বের হয়েছিলেন প্রায় ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। তাকে বাজারে দেখে পুলিশ তার দিকে এগিয়ে যায়। সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। ভীতসন্ত্রস্ত বৃদ্ধ ডিসিকে দেখেই হাতজোড় করে ক্ষমা চান। আবেগ আপ্লুত ডিসি তখন চাল-ডাল কেনার টাকা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে বাড়ি পাঠান।

শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রাজশাহীর তানোর উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে বিষয়টির বিবরণ দিয়েছেন রাজশাহীর ডিসি হামিদুল হক। এটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। মানবিক এ ধরনের কাজে প্রশংসায় ভাসছেন ডিসি হামিদুল হক।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে লোকজনের বাড়িতে অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য তানোর উপজেলা পরিদর্শনে যাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তানোর পৌরসভার মেয়র, অফিসার ইনচার্জসহ তানোর বাজার পরিদর্শন করি।

অকারণে যে সব লোকজন বাজারে ছিলেন তাদের বাজার থেকে সরিয়ে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার দিকে যাওয়া। এ সময় হঠাৎ ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধকে রাস্তার ধারে কিছু পুরনো, ছেঁড়া কাগজ নাড়াচাড়া করতে দেখে কাছে যাই।

ডিসি লেখেন, আমরা কাছে যেতেই এবং সঙ্গে পুলিশ দেখে তিনি কিছুটা ভয় পেয়ে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাবা আমার যদি কোনো ভুল হয়, মাফ করে দাও, আমি আর বাজারে আসবো না।’

আমি সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধকে বললাম কোনো ভুল না। ভীষণ মায়া লাগল বৃদ্ধকে দেখে। এ বয়সে তার ঘরে থাকার কথা। নাতি-পুতিদের সঙ্গে খেলা করার কথা। কিন্তু দরিদ্রতা তুমি তাকে এই চৈত্রের প্রখর রৌদ্রে ক’টি টাকার জন্য, সামান্য চাল কেনার অর্থের জন্য কিছু ছেঁড়া কাগজ কুড়াতে বাধ্য করেছ।

তার উপর বিশ্ব কাঁপানো করোনা। কিন্তু এই বৃদ্ধের দরিদ্রতাকে করোনা পরাজিত করতে পারেনি। তাকে আটকে রাখতে পারেনি ঘরের কোণে।

হামিদুল হক লেখেন, বৃদ্ধকে সামান্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বললাম, আপনি কিছু চাল-ডাল কিনে বাড়ি চলে যান। কিছুদিন আর বাজারে আসবেন না। তিনি বললেন, বাবা আর আসব না। মনটি খারাপ হয়ে গেল। জানি না তার বাড়িটি কেমন, তার বাড়িতে কে কে আছেন! উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিতে বললাম।

বৃদ্ধের মঙ্গল কামনা করে ডিসি লেখেন, হায় করোনা! তুমি সবাইকে একটু করুণা কর। অন্তত নাম না জানা এই বৃদ্ধের কোনো ক্ষতি কর না। এই মিনতি করি। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুন। সারা বিশ্ব হোক করোনা ও করুণামুক্ত। ভালো থেকো বৃদ্ধ বাবা। আমি তোমার খবর রাখব নিশ্চয়।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, বৃদ্ধ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি। দরিদ্রতার নির্মমতাকে সাক্ষী রেখে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন। এমন করে কয়জন! তার আত্মসমর্পণ আমাদের সবাইকে আবেগ আপ্লুত করেছে। আমরা তার খেয়াল রাখব। শনিবার সকালেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ওই বৃদ্ধের খোঁজ নিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, আমরা ওই বৃদ্ধের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে, তার বাড়ি মোহনপুরে। অনেকটা মানসিকভাবে অসুস্থ। শুক্রবার ও মঙ্গলবার তানোরে হাট বসে। এই দু’দিন তিনি এসে কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে যান। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সাধ্যমতো সহায়তা দেয়া হবে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...