প্রকাশিত: ২০/০৬/২০১৮ ৭:০৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৪ এএম

নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর কাজ সমন্বয় করতে ‘যৌথ কনসালটেটিভ ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করা হচ্ছে। এ গ্রুপের সদস্য হিসেবে থাকছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা (ইউএনআরসি)।

স্থানান্তর কার্যক্রম শুরুর আগে গ্রুপের প্রতিনিধিরা সরেজমিন ভাসানচর পরিদর্শন করবেন। এক লাখ রোহিঙ্গাকে ধারণ করতে চলতি মাসেই ভাসানচরকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে আগ্রহী করে তুলতে আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে ১১টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে এ বিষয়ে ৪ ও ১২ এপ্রিল বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের সহায়তা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা বেশ জটিল কাজ। এ জন্য কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানান্তর কাজে পাশে থাকার জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদে ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ নেয়া হবে। অতিবৃষ্টি, ভূমিধস বা পাহাড়ি ঢলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সম্পর্কে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি স্থানান্তরের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত হ্যান্ডবিল বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এ কাজে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি এনজিওকে সংযুক্ত করতে বলা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক কক্সবাজারকে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।

ভাসানচরে আয়ের পথ সৃষ্টি করতে ছোট দোকান, বিক্রয় কেন্দ্র পরিচালনার পাশাপাশি মহিষ, হাঁস-মুরগি পালন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছচাষ, কুটিরশিল্পসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান ও আয়ের পথ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হবে।

এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ বিভাগ মন্ত্রণালয় ও মিল্ক ভিটাকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ভাসানচরে অস্থায়ী আবাসন গড়ে তুলতে একনেক বৈঠকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় ভাসানচর ভাঙন প্রতিরোধসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে নৌবাহিনী রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তুলবে। সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রাম ১৪৪০টি ব্যারাক হাউস ও ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।

এ ছাড়া সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মাদ্রাসাসহ অন্য অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি সাইক্লোন সেন্টার স্টেশন ও দু’টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এ জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, এক লাখ রোহিঙ্গার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভাসানচরে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অগ্নিপ্রতিরোধ ও আপদে সাড়া দেয়ার জন্য ফায়ার স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সূত্র মতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম তদারকিসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনার একটি অফিস স্থাপন এবং সেখানে জনবল নিয়োগ করা হবে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য ট্রান্সপোর্ট পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সশস্ত্র ও নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে প্রাথমিক ১৫০ কোটি টাকা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এক হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। পুরোপুরি বর্ষা মৌসুমের আগেই কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ছাড় করা অর্থ দিয়ে বাঁধ নির্মাণে ১৬৯ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণে ৯ কোটি টাকা, ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশনে ৯ কোটি টাকা, টিউবওয়েল ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা, জরুরি টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার নির্মাণে দুই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।

এ ছাড়া লাইন ও কেবল খাতে ২০ কোটি টাকা, সোলার প্যানেল খাতে ১০ কোটি টাকা ও অন্য খাতে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।

জানা গেছে, চরটি সমুদ্র তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল হওয়ায় ভরা মৌসুমে অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যায়। এ সময় মৌসুমি বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়া, ঢেউয়ের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সাইক্লোন সিগন্যালসহ সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ফলে শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে সেখানে কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়া সম্ভব নয়। এ কারণে সেখানে দ্রুত কাজ চলছে।

পাঠকের মতামত