প্রকাশিত: ১৭/০২/২০১৭ ১০:৪৩ পিএম

বিদেশ ডেস্ক;;
সুফি মাজারে বোমা হামলার পর পাকিস্তানজুড়ে চলছে শোকের মাতম। শুক্রবার ভোর শুরু হওয়া নিরাপত্তা অভিযানে এরইমধ্যে ৪৪ জন সন্দেহভাজনকে হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গি পরিচয় দিয়ে তাদের হত্যা করেছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। হামলার প্রতিক্রিয়ায় হামলাস্থল কালান্দার মাজারসহ প্রদেশের অন্যান্য মাজারগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

সিন্ধু প্রদেশের শেহওয়ান এলাকার লাল শাহবাজ কালান্দার নামের সুফি মাজারে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত ৮৮ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছে আলজাজিরা।

শেহওয়ানে পুলিশি প্রহরার মধ্যেই শুক্রবার ফরেনসিক তদন্তকারী দল পৌঁছায় মাজারে। তখনও মেঝেতে তাজা রক্তের ছোপছোপ দাগ। নিহতদের তালিকায় ২০ শিশু থাকায় শেহওয়ানের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সিন্ধের প্রাদেশিক সরকার তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে।

সামাজিক মিডিয়াগুলোও ভরে উঠেছে শোকের বাণীতে। শোকের পাশাপাশি রয়েছে ক্ষোভও। অনেকেই বলছেন, চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ মাজার থেকে নিকটস্থ হাসপাতালের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার দূরে।

পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফ সভাপতি ইমরান খান এ আত্মঘাতী বোমা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন টুইটারে, ‘আমি শোকাহত। লাল শাহবাজ কালান্দারের মাজারে নারী ও শিশুসহ নিরীহ মানুষদের লক্ষ্য করে নিন্দনীয় এ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমি শোকে মুহ্যমান।’

হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া হুঁশিয়ারি দেন, জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে। এ ঘটনার নেপথ্যের কুশীলবদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধের মাধ্যমে এই আক্রমণের জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পরে নাম প্রকাশ না করে পাকিস্তানের এক সরকারি কর্মকর্তা ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপিকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ভোর শুরুর আগে থেকে অভিযান শুরু করেছে।’

শুক্রবার সূর্যোদয়ের আগ থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় নিরাপত্তা অভিযান। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি ও সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন তাদের সবশেষ খবরে সন্দেহভাজন ৪৪ সন্ত্রাসীকে হত্যার কথা জানিয়েছে। তবে বিনা বিচারে এইসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। আর এই অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে ডন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভোররাত থেকেই অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তান। হামলার পর নিরাপত্তার নামে কালান্দার মাজারসহ প্রদেশের অন্যান্য মাজারগুলোও বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আফগান এলাকায় আত্মগোপনে থাকা ৭৬ ‘সন্ত্রাসী’র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কাবুলকে আহ্বান জানিয়েছে তারা। পাশাপাশি আফগানিস্তানের সঙ্গে তাদের দুটি সীমান্তপথ বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান।

আল জাজিরার কামাল হায়দার বলেছেন- চামানে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম সীমান্তপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যে পথ দিয়ে পাকিস্তানের কোয়েটা শহর থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহারে যাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই বন্ধ করা হয় তোরখাম সীমান্ত।

২০১৪ সাল থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানে পাকিস্তানি তালিবান ও তাদের সঙ্গীদের তৎকালীন সদর দফতর উত্তর ওয়াজিরিস্তানের উপজাতীয় অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজার যোদ্ধাকে হত্যা করা হয় এবং ভেঙে ফেলা হয় তালিবানদের অবকাঠামো। অন্তত ৫৮৩ জন সৈন্য মারা যান ওই অভিযানে। তার পর থেকে সহিংসতা কমে গেলেও বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চলেছে এখানে সেখানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত বছর কোয়েটায় হাসপাতালে বোমা হামলায় ৭৪ জন নিহত হয়। ইস্টার ডে পার্কের বোমা হামলায় মারা যায় ৭০ জন। তবে বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগেরগুলোকে। ২০১৪ সালে পেশোয়ারের এক স্কুলে ১৫৪ জনকে হত্যা করে জঙ্গীরা, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল স্কুলশিশু। ওই হামলার পর শেহওয়ানেরটাই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।

পাঠকের মতামত