প্রকাশিত: ১৮/০৪/২০১৯ ৭:০৭ এএম

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ছুরিকাঘাতে এক কলেজছাত্রীকে হত্যা করেছে এক বখাটে। ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রকাশ্যে কোনাবাড়ী কাঁচাবাজারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তার মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।

ছুরি মারার পরপরই স্থানীয়রা ছুরিসহ মোস্তাকিম রহমান (১৯) নামে এক যুবককে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সে মহানগরীর সালনার জালা মার্কেট এলাকার আবুল কালামের ছেলে। পরিবারের সঙ্গে সে কোনাবাড়ীর আমবাগ এলাকায় ভাড়া থাকত। স্থানীয় লিংকন কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলেও আর পড়ালেখা করেনি মোস্তাকিম। তাকে আহত অবস্থায় পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত শারমিন আক্তার লিজা (১৭) কোনাবাড়ী ক্যামব্রিজ কলেজের প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের ছাত্রী এবং কোনাবাড়ীর আমবাগ ঈদগাহ মাঠ এলাকার গাড়িচালক শফিক আহাম্মদের মেয়ে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় ছিল লিজা।

পুলিশ ও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ১টায় বর্ষ উত্তীর্ণ পরীক্ষা শেষ হলে হেঁটে বাসায় ফিরছিল লিজা। কোনাবাড়ী কাঁচাবাজারের আলুর আড়তের সামনে পৌঁছলে সামনে থেকে এসে মোস্তাকিম লিজার পথরোধ করে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পকেট থেকে ছুরি বের করে লিজার বুকে আঘাত করে। লিজার চিৎকারে বাজারের ব্যবসায়ীরা ছুটে এসে মোস্তাকিমকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক লিজাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আলুর আড়তের মালিক ব্যবসায়ী মো. শামীম জানান, দুপুর দেড়টার দিকে মেয়েটি (লিজা) হেঁটে তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। মোস্তাকিম সামনের দিক থেকে এসে লিজার পথ আটকে দাঁড়ায়। এ সময় মোস্তাকিমের সঙ্গে আরো দুই যুবক ছিল। চিৎকার শুরে তিনি তাকিয়ে দেখেন লিজার বুকে ছুরি বিঁধে আছে। ছেলেটি (মোস্তাকিম) ছুরির বাঁট ধরে টানাটানি করছে। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে লিজা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ দৃশ্য দেখে ব্যবসায়ীসহ পথচারীদের কেউ মেয়েটিকে উদ্ধার আর কেউবা ছেলেটিকে আটক করে পিটুনি দেয়। এই ফাঁকে তার দুই সহযোগী পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ আহত অবস্থায় মোস্তাকিমকে তুলে নিয়ে যায়। লিজাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

লিজার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একমাত্র মেয়ের মৃত্যুতে বাবা শফিক প্রায় অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। মা তাছলিমা বেগম ও ভাই সুজন লিজাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকায় তাঁরাও বাড়িতে নেই। প্রতিবেশীরা জানায়, মোস্তাকিম পথেঘাটে লিজাকে প্রেম নিবেদনের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করত। দুই মাস আগে বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। লিজা ও তার পরিবার ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এ অবস্থার মধ্যেই লিজাকে খুন করা হলো।

কোনাবাড়ী থানার ওসি মো. এমদাদ হোসেন জানান, লিজার পরিবারের কেউ এ বিষয়ে এখনো অভিযোগ করেনি। ঘাতক মোস্তাকিমও উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে গুরুতর আহত। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই কেন সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। লিজার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

লিংকন মিলিনিয়াম কলেজের সভাপতি মো. শরীফ জানান, কলেজে ভর্তি হলেও মোস্তাকিম নিয়মিত ক্লাসে আসত না। প্রায়ই কলেজের মেয়ের উত্ত্যক্ত করত। শাসন করতে গেলে শিক্ষকদের সঙ্গেও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করত।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান, এসব বিষয়ে তাঁর কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনার পর স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছেন মোস্তাকিম বেয়াদব প্রকৃতির ছেলে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাথরুমে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতকের ঠাঁই হল নার্স মিনারার কোলে

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ২ দিনের ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিলেন ...

ঈদগাঁওতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউপি নির্বাচনে কারসাজি ও দুর্বৃত্তায়ন সহ্য করা হবেনা

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, দীর্ঘ আট বছর পর ...