প্রকাশিত: ২২/১১/২০১৭ ৮:১০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১০:৪৫ এএম

নিউজ ডেস্ক::
পুলিশি তৎপরতায় এখন ইয়াবা পাচারের কৌশল পরিবর্তন করেছে ব্যবসায়ীরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে সম্প্রতি নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। কখনও মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাঙ্কের ভেতরে বিশেষ চেম্বার তৈরি করে আবার কখনও কাভার্ড ভ্যানে বিশেষ চেম্বার তৈরি করে ব্যবসায়ীরা ইয়াবা পাচার করছে। নিরাপদে ইয়াবা পাচার করতে কোনও কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ী পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
কার্গো গাড়িতে করে চলছে ইয়াবা পাচারসম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি অভিযানে বিষয়টি উঠে এসেছে। সবশেষ সোমবার (২০ নভেম্বর) এ ধরনের একটি নতুন কৌশলের সন্ধান পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন ফিশারি ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি মাছ বোঝাই কাভার্ড ভ্যান থেকে এক লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ইয়াবাগুলো উদ্ধারের সময় তারা দেখেন, ওই কাভার্ড ভ্যানটির সামনের অংশে লোহার বডির সঙ্গে একটি বিশেষ চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। ওই চেম্বার থেকেই ইয়াবাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদক দেখেন, ওই কাভার্ড ভ্যানের সামনের দিকে লোহার বডির সঙ্গে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি বিশেষ চেম্বার তৈরি করা হয়। ওই চেম্বারের নিচের দিকে ৩ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি একটি দরজা রাখা হয়েছে। দরজাটি ঢেকে দেওয়ার জন্য ভেতরের পাশে দুই দিকে দুটি লোহার ছোট পাত লাগানো হয়েছে। যাতে স্ক্রু দিয়ে একটি লোহার প্লেট লাগিয়ে দিয়ে রঙ করে দিলে কোনও চিহ্নই পাওয়া যাবে না। স্বাভাবিকভাবে কেউ বুঝতেই পারবে না সেখানে একটি দরজা আছে।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা কাভার্ড ভ্যানটি আটকের পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইয়াবার সন্ধান পাচ্ছিলেন না। পরে মাছগুলো নামিয়ে কাভার্ড ভ্যানের ভেতরের অংশে ভালোভাবে চেক করার সময় বিশেষভাবে তৈরি ওই চেম্বারের দরজার সন্ধান পান তারা।
ইয়াবাপাচার চক্রের গ্রেফতারকৃত কয়েকজননগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এ এ এম হুমায়ুন কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইয়াবার সন্ধান পাচ্ছিলাম না। পরে মাছের বক্সগুলো নামিয়ে কাভার্ড ভ্যানের ভেতরের অংশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার সময় হঠাৎ আমাদের একজন চেম্বারের ওই অংশে নরম পুডিং এর অস্তিত্ব পান। এরপর ওই অংশে ভালো করে দেখার পর আমরা চেম্বারের দরজার সন্ধান পাই। পরে ওই চেম্বারের ভেতর থেকে ইয়াবাগুলো উদ্ধার করা হয়।’
পুলিশ সদস্যরা ধারণা করছেন ইয়াবা পাচারের উদ্দেশ্যে কাভার্ড ভ্যানটি তৈরির সময় বিশেষ ওই চেম্বারটি তৈরি করা হয়। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবে এ কাভার্ড ভ্যানটি তৈরি করে থাকতে পারেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ইয়াবাসহ জব্দ ‘এসআরপি কার্গো সার্ভিস’ লেখা কাভার্ড ভ্যানটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র রাস্তায় নামিয়েছে। রবিবার রাতে এটি টেকনাফ থেকে মাছ নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যাচ্ছিল। কাভার্ড ভ্যানে ২৫ টন মালামাল পরিবহনের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও তারা দ্রুত গতিতে চালানোর জন্য পাঁচ থেকে সাত টন মালামাল পরিবহন করছিল।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘কাভার্ড ভ্যানটিতে যে কৌশলে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছিল,তাতে আমরা নিশ্চিত ইয়াবা পাচারের উদ্দেশ্যেই কাভার্ড ভ্যানটি তৈরির সময় ওই চেম্বার তৈরি করা হয়। কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ী পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচারের উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করে থাকতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের তৎপরতার কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এখন কৌশল পরিবর্তন করছেন। গত কয়েক মাসে পরিচালিত বেশ কয়েকটি অভিযানে আমরা তথ্য পেয়েছি- পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।’ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অনেকে এখন পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছেন বলে তার ধারণা।
তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধ একটি চক্র ইয়াবা পাচারের জন্য কাভার্ড ভ্যানগুলো রাস্তায় নামিয়েছে। আমরা তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছি।’
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মধ্যরাতে ৩৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ একরাম নামে এক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একরাম তার মোটরসাইকেলের তেলে ট্যাঙ্কের একটি অংশে বিশেষ চেম্বার তৈরি করে ওই ইয়াবাগুলো পাচার করছিলেন।সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...