প্রকাশিত: ২৩/০৪/২০১৭ ৯:৫২ পিএম

নিউজ ডেস্ক ::
মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে ‘ক্রসফায়ার’ই প্রধান উপায় বলে মনে করছে পুলিশ। ‘শতভাগ’ মাদক নির্মূলে পুলিশের ‘সর্বাত্মক অভিযান’-এর সময় কয়েকটি জেলায় ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ নিজেই মনে করছে, মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা পুলিশের সায় ছাড়া সম্ভব নয়। ক্রসফায়ারের ব্যাপারে পুলিশের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় মাদক নিয়ে অন্তত ২০টি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ সূত্র জানায়। এ অবস্থায় কাল ঢাকায় পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। এতে মাদক নির্মূল অভিযানের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) সৈয়দ তৌফিক উদ্দীন বলেন, দেশে মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। জানতে চাইলে মানবাধিকারকর্মী নূর খান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিচারের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিজের হাতে নেওয়া উচিত হবে না। প্রচলিত আইন যথেষ্ট শক্তিশালী না হলে কঠোর আইন করা হোক বা ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হোক। আইনের শাসন নিশ্চিত করা গেলে ক্রসফায়ার করে আর মাদক ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতে হবে না। যশোরে সপ্তাহ খানেক আগে পুলিশের ভাষায় দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে একছের আলী ও সাইফুর রহমান নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে একাধিক মামলা আছে। গত ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্দুকযুদ্ধে নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু নিহত হন। কাউসার ভূঁইয়া ও রিপন মিয়ার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত চারজনের বিরুদ্ধে ৫ থেকে ১১টি মাদক মামলা আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়া প্রত্যেক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ন্যূনতম ৫টি থেকে শুরু করে ১০-১২টি পর্যন্ত মাদকের মামলা আছে। মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের অবস্থাও একই রকম ছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ শীর্ষ ৪০ মাদক ব্যবসায়ীর নাম চূড়ান্ত করেছে বলেও জানান তিনি। রাজশাহীতে ১৩ মার্চ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আফজাল হোসেন ওরফে ফয়সাল (৩২) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। মতিহার থানার জাহাজঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, নিহত ফয়সালের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রির মামলা আছে। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাদক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও অপব্যবহার রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের নির্দেশনা দেন। চলতি বছরে পুলিশ সপ্তাহের স্লোগান হচ্ছে ‘জঙ্গি-মাদকের প্রতিকার, বাংলাদেশ পুলিশের অঙ্গীকার’। এই প্রেক্ষাপটে গত ৩১ জানুয়ারি সারা দেশে মাদক নির্মূলে ১০ দফা নির্দেশনা জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযান নজরদারি করছেন এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম আলোকে বলেন, মাদক কোথায়, কারা, কীভাবে বিক্রি করছে, সে সম্পর্কে মাদকসেবীরা যেমন জানে, পুলিশও জানে। পুলিশ শুধু জানেই না, পুলিশের কোনো কোনো সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে থাকেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের প্রতি যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তার প্রথমেই বলা হয়েছে, যেসব পুলিশ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন, তাঁদের চিহ্নিত করে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা, প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান অবশ্য দাবি করেছেন, মাঠপর্যায় থেকে বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রমাণ করা যায়নি। তবে মাদক এখন আর সুলভ নয়। তারপরও প্রচুর মাদকদ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে, আসামি গ্রেপ্তারও হচ্ছে। কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, রাজশাহী ও সিলেটে পুলিশ বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারের দাবি করলেও মাদক ব্যবসার সঙ্গে কোনো পুলিশের সম্পৃক্ততার কথা জানাতে পারেনি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন ও সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা এই তথ্য দেন। সুজ্ঞান বলেন, তাঁরা পুলিশের সম্পৃক্ততার কথা মাঝে মাঝে শোনেন, কিন্তু কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। [প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রথম আলোর ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন। –

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...