প্রকাশিত: ২০/০৩/২০১৭ ৯:৫৩ এএম

নিউজ ডেস্ক::
সীতাকু-ের কলেজগেট এলাকার বাড়ি ‘ছায়ানীড়ে’ নিহত কামালউদ্দিনের স্ত্রী জোবাইদা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার জঙ্গি জহির ওরফে জসিমের ছোট বোন। জহিরের আরেক বোন আনজি আরা বিয়ে করেছেন অপর জঙ্গি হাসানকে। গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় বোমাসহ যে দুই জঙ্গি ধরা পড়ে, তাদেরই একজন হাসান। অপরজন ঢাকা থেকে বাড়িছাড়া এক মেজরের ছেলে অমি।

জানা যায়, জহির, কামাল ও হাসানের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল গ্রামে। জহিরের বাচ্চার বয়স যখন মাত্র পাঁচদিন, তখনই স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরজিনাসহ বাড়ি ছাড়েন। বর্তমানে সেই বাচ্চার বয়স ছয় থেকে সাত মাস। গত বুধবার দুপুরে সীতাকু-ের লামারবাজার এলাকায় পুলিশের হাতে বোমা ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ ধরা পড়েন জহির ওরফে জসিম ও তার স্ত্রী আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানা। তারা দুজন পুলিশের ১২ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ছায়ানীড়ে অভিযান চালায়। সেখানে গুলি ও আত্মঘাতী হামলায় এক নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়।

জানা যায়, গত বছর ১০ রমজানে যখন জহির, কামাল ও হাসান বাড়ি ছাড়ে, তখন জোবাইদা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গত বৃহস্পতিবার সীতাকু-ের কলেজ রোডের ছায়ানীড় ভবনে পুলিশের অভিযান চলাকালে গুলিতে ও আত্মঘাতী হামলায় কামাল ও জোবাইদা নিহত হন। পরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ মাস বয়সী শিশুটির লাশ উদ্ধার করে।

গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে ছেলে কামাল ও পুত্রবধূ জোবাইদার লাশ শনাক্ত করেন মোজাফফর আহমদ।

জহিরেরা আট ভাই ও চার বোন। আর কামালরা হচ্ছে ছয় ভাই ও এক বোন। সাধারণত একটি পরিবারে এত বেশি সংখ্যা রোহিঙ্গাদের মধ্যেই দেখা যায়। পুলিশের ধারণা, কামাল ও জহিরের পরিবারের আদি নিবাস মিয়ানমারে।

কামালের বাবা মোজাফফর আহমদ দাবি করেন, তাদের আদি নিবাস কক্সবাজার জেলার মহেশখালী। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি নাইক্ষ্যংছড়িতে এসে বসবাস শুরু করেন। আর জহিরের পরিবার রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি আসে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কামালের বাবা হয়তো মিয়ানমার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি আসেন। সেখান থেকে বাইশারি চলে যান। কারণ যোগাযোগ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জোয়ারিয়ানালা থেকে কোনো স্থানীয় লোক বসবাসের জন্য প্রতিকূল বাইশারিতে যাওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া জহির, তার স্ত্রী আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানা, কামাল ও তার স্ত্রী জোবাইদার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো লেখাপড়াও নেই।

জহিরের বাবা মোজাফফর আহমদ জানান, বাড়ি ছাড়ার আগে জহির ও কামাল হালচাষের কাজ করত। মাঝে মাঝে গ্রামের অন্য যুবকদের মতোই মাদ্রাসা ও অন্যান্য এলাকায় ওয়াজ মাহফিল শুনতে যেত।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মোহাং শফিকুল ইসলাম বলেন, জহির কিংবা কামাল বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাদের জন্মও বাংলাদেশে। তাদের পূর্বপুরুষের কেউ যদি মিয়ানমার থেকে এসে থাকে, সেটা আলাদা কথা।

ছেলে ও পুত্রবধূকে শনাক্ত করলেন বাবা

সীতাকু- প্রতিনিধি জানান, নিহত জঙ্গি কামালউদ্দিন ও স্ত্রীর স্বজনদের গতকাল রোববার চট্টগ্রামে এনেছে জেলা পুলিশ। কামালের বাবা মোজাফফর আহমদ গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছেলে ও পুত্রবধূকে শনাক্ত করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় সীতাকু-ের জঙ্গি আস্তানা ছায়ানীড় ভবনের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা।

তিনি বলেন, কামালের মা-বাবা ও ভাইকেও আনা হয়েছে। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের সীতাকু- থানায় রাখা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, সীতাকু- পৌরসভার প্রেমতলায় ছায়ানীড় ভবনে জঙ্গি আস্তানায় আরও বোমা-বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জঙ্গিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপের ধ্বংসাবশেষও উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার ওই আস্তানার একটি কক্ষ থেকে নতুন করে ১০টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুদিনে পুলিশ ওই আস্তানা থেকে ২৫টি বোমা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে শনিবার ৭টি এবং গতকাল ১৮টি বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে পুলিশ। আস্তানার তিনটি কক্ষের মধ্যে আরও একটি কক্ষ তল্লাশির বাকি আছে।

সীতাকু-ের ছায়ানীড় ভবনের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি বলেন, দেশে এ পর্যন্ত যত জঙ্গি আস্তানা পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এই আস্তানায় সবচেয়ে বেশি বোমা ও বিস্ফোরক মজুদ ছিল। এটা এ পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া জঙ্গিদের সর্ববৃহৎ বোমার গুদাম। আস্তানার দ্বিতীয় কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে আরও এক ড্রাম বোমা তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কক্ষে পাওয়া গেছে জঙ্গিদের ব্যবহৃত ল্যাপটপের ধ্বংসাবশেষ। এর আগে শনিবার ৬টি ড্রামে পাওয়া যায় বোমা তৈরির কাঁচামাল। এর মধ্যে ৫টিতে হাইড্রোজেন ফারঅক্সাইড আছে। প্রতি ড্রামে ৪০ লিটার করে ২০০ লিটার হাইড্রোজেন ফারঅক্সাইড রয়েছে। আরেকটি ড্রামে ৪০ লিটার অ্যাসিড পাওয়া গেছে।

পোড়া ল্যাপটপের ফরেনসিক সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হবে বলে এসপি জানিয়েছেন। জঙ্গি আস্তানার দেয়ালের এক স্থানে ‘দাওলাতুল ইসলাম’ লেখা পাওয়া যায়। পুলিশ সুপার বলেন, এ বিষয়টির তদন্ত চলছে।

পাঠকের মতামত