প্রকাশিত: ০৮/০৫/২০২২ ৯:৩৩ এএম

মুফতি ইবরাহিম সুলতান::lam
নবীজির সংস্পর্শে থাকা এবং তাঁর সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করা সাহাবিদের গর্ব এবং পরম আগ্রহের একটি অনুষঙ্গ ছিল। তাই বিভিন্ন সময় ও সুযোগে অসংখ্য সাহাবি নবীজির সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে অনেকের তা নিয়মিত হয়ে ওঠেনি। তবে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন এমন ছিলেন যাঁরা নিয়মিত তাঁর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।

নিম্নে কয়েকজন সাহাবির সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো—

আনাস ইবনে মালেক (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দীর্ঘ সময়ের প্রিয় সেবক সাহাবি আনাস (রা.) মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখার সন্তান ছিলেন। তাঁর উপনাম আবু হামজা। মা উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান (রা.)। হিজরতের ১০ বছর আগে মদিনায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন ১০ বছর তখন তাঁর মা তাঁকে নিয়ে রাসুল (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলেন, আনসারদের নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই আপনাকে কিছু না কিছু হাদিয়া দিয়েছে; আমি তো কিছু দিতে পারিনি। আমার আছে এই ছেলে। সে লিখতে জানে। আপনার খিদমতের জন্য একে কবুল করে নিন। সেদিন থেকে আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর খিদমতে আত্মনিয়োগ করেন এবং রাসুল (সা.)-এর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানা ১০ বছর খিদমত করেন। (আনসাবুল আশরাফ, পৃষ্ঠা ১০২২)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতের বরকতে তিনি অসংখ্য হাদিসও বর্ণনা করেন। আল্লামা জাহাবি (রহ.) বলেন, আনাস (রা.) রাসুল (সা.)-এর দুই হাজার ২৮৬টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে যৌথভাবে বুখারি-মুসলিম ১৮০টি এবং এককভাবে বুখারি ৮০টি ও মুসলিম ৯০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এমনকি আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর জন্য বরকতের বিশেষ দোয়াও করেছেন। যার ফলে তিনি সুদীর্ঘ হায়াত, অঢেল সম্পদ ও অনেক সন্তান লাভ করেন। তাঁর মৃত্যুর সন নিয়ে মতভেদ থাকলেও সর্বাধিক প্রসিদ্ধ অভিমত হলো, তিনি ৯৩ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৪/৪২৩)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) : আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ইবনে গাফেল ইবনে হাবিব (রা.) ছিলেন প্রথম যুগের অগ্রগণ্য সাহাবিদের একজন। তিনি বদর যুদ্ধসহ সব যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি সে সময়ের বড় ফকিহ, মুহাদ্দিস ছিলেন। তাঁর সঙ্গে নবী (সা.)-এর সম্পর্ক ছিল খুবই দৃঢ়। অনেকে ভাবতেন তিনি নবী (সা.)-এর পরিবারের সদস্য। কারণ তিনি ও তাঁর মা প্রায়ই মহানবী (সা.)-এর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা মদিনায় এসে ইবনে মাসউদকে রাসুল (সা.)-এর পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। কেননা রাসুল (সা.)-এর কাছে তাঁর ও তাঁর মায়ের অধিক পরিমাণে যাওয়া-আসা ছিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৮০৬)

তা ছাড়া তিনি সর্বাবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ খাদেম ছিলেন। হাদিস ও তারিখের কিতাবে তাঁর উপাধি ‘সাহিবুল নালাইন ওয়াল বিসাদ ওয়াল মিতহারা’ অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পাদুকা, তাকিয়া ও অজুর পাত্র বহনকারী। (বুখারি, হাদিস ৩৯৬১)

নবীজির বিখ্যাত এই সেবক সাহাবি ৩২ হিজরিতে মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি (রা.) : সাহাবি রাবিআ ইবনে কাআব আল আসলামি (রা.) ছিলেন প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন। তিনি আহলে সুফফার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ সময় নবীজির খিদমতও আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি নবীজির অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আনা-নেওয়ার খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন। এক বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করছিলাম। আমি তাঁর অজুর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস এনে দিতাম। তিনি আমাকে বলেন, কিছু চাও। আমি বললাম, জান্নাতে আপনার সাহচর্য প্রার্থনা করছি। তিনি বলেন, এ ছাড়া আরো কিছু আছে কি? আমি বললাম, এটাই আমার আবেদন। তিনি বলেন, তাহলে তুমি বেশি পরিমাণে সিজদা করে তোমার নিজের স্বার্থেই আমাকে সাহায্য করো। (মুসলিম, হাদিস : ৯৮১)। ৬৩ হিজরিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।

উকবা বিন আমের আলজুহানি (রা.) : উকবা বিন আমের আলজুহানি (রা.)। তিনি মিসরের অধিবাসী, নবীজির বিশিষ্ট সাহাবি। তিনি কোরআন ও ফারায়েজ বিষয়ে বেশ দক্ষ ছিলেন। এমনকি তিনি ভালো লিখতে ও পড়তে জানতেন এবং সে সময়ের বিশিষ্ট কবিও ছিলেন। তা ছাড়া তিনি নবীজির সফরের যানবাহন চালানোর খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন। নবীজি যখনই কোনো সফরে বের হতেন তখন খচ্চর বা ঘোড়া চলানোর দায়িত্ব তিনি পালন করতেন। (জাদুল মাআদ : ১/১১৩)

আবুস সামহ (রা.) : কেউ কেউ বলেছেন তাঁর নাম ইয়াদ। তিনি নবীজির খাদেম ছিলেন। নবীজির গোসলের সময় তিনি পর্দার ব্যবস্থা করতেন। এক বর্ণনায় তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-এর খিদমত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলতেন, তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম। একবার হাসান অথবা হুসাইন (রা.)-কে আনা হলে তাঁদের একজন তাঁর বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করতে এলে তিনি বলেন, মেয়েশিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলেশিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৬)

বুকাইর বিন সুদাখ (রা.) : বুকাইর বিন সুদাখ (রা.)-কে বকর বিন সুদাখ আল লাইসিও বলা হয়। তিনি ছোট সময় থেকেই নবীজির ঘরে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি তখনো নাবালক ছিলেন (যার কারণে পর্দার কোনো সমস্যা হতো না)। যখন তিনি প্রাপ্তবয়স্কে উপনীত হন তখন নবীজিকে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল আমি তো এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেছি। তখন নবীজি তার জন্য প্রাণভরে দোয়া করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫/৩৫৫)

তা ছাড়া বিভিন্ন প্রয়োজনে নবীজির সেবায় সাহাবি জুমিখবার, হলাল বিন হামরা এবং আসলা বিন শরিক (রা.)-ও নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছিলেন।

পাঠকের মতামত

কাবায় শায়েখ সুদাইসের অশ্রুসিক্ত মোনাজাত: ‘হে আল্লাহ ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের বিজয় দান করুন’

বিভিন্ন রঙ ও জাতি এবং বিচিত্র ভাষা, কোনোকিছুই তাদেরকে মগ্ন করতে পরেনি। ইসলামের সৌন্দর্য সমস্ত ...

আজ পবিত্র শবে কদর

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ শনিবার (০৬ মার্চ)। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের ...

মালদ্বীপে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে তারাবি পড়াচ্ছেন বাংলাদেশি হাফেজ কামরুল

রমজানে মসজিদে মসজিদে পবিত্র কোরআন খতম মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য। এ জন্য বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি হাফেজদের রয়েছে ...