প্রকাশিত: ২২/০৭/২০১৯ ৮:১৫ এএম

এম. বেদারুল আলম :

‘স্যার আমি ৭ দিন হয়রানি হওয়ার পর ১৮ হাজার টাকা ঘুস দিয়ে ৬ টন ধান দিতে পেরেছি। আমি প্রতিবাদ করতে চাইলে আমাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে কামরুল। আমি ও আমার চাচা রমজান আলীর ৬ টন ধান দিতে গিয়ে ৭ দিনের হয়রানি ও দায়িত্বরতদের দূর্ব্যাবহার কোনদিন ও ভুলবনা। টন প্রতি ৩ হাজার টাকা দেওয়ার পর ২ বস্তা ধান ও বেশি নিয়েছে তারা। কথাগুলো জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে বলছিলেন সদর খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার সদরের পিএমখালীর মাছুয়াখালীর কৃষক ছালামত উল্লাহ। তার চাচা একই এলাকার রমজান ও সাথে হয়রানি ও ঘুস দিয়ে কোনমতে সদর খাদ্য অফিসে ধান দিতে পেরেছে।’
একই এলাকার মোঃ আলীর পুত্র কৃষক নুরুল আমিন। ধানের সেম্পল এনে সদর খাদ্য অফিসে দেখানোর পর তারা ক্রয় করার সিদ্ধান্ত দিলে ১ মে.টন ধান নিয়ে আসে পরেরদিন । কিন্তু ধানে চিড়া. মানহীন অযুহাতে ধান ক্রয়ে গড়িমসি শুরু করে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন। পরে ১ টনে ৩ হাজার টাকা ঘুস দেওয়ার পর মানহীন ধান ধান ক্রয় করে সালাউদ্দিন।
সদরের কাঠালিয়ামুরা এলাকার মোঃ ইসমাইল ধান নিয়ে পড়েন বিপাকে। জীপে করে গুদামে ধান এনে মানহীন অযুহাত দেখিয়ে ক্রয় করতে গড়িমসি শুরু করে কর্মকর্তারা। পরে ৬ টন ধান টন প্রতি ৩ হাজার টাকা করে ১৮ হাজার টাকা ঘুস দিয়ে ধান বিক্রয় করে এ কৃষক।
এ ধরনের অসংখ্য ঘুস গ্রহনের অভিযোগের অডিও সাক্ষাৎকার দৈনিক কক্সবাজারের সংরক্ষিত রয়েছে সদরের খাদ্য গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সরকার কেজি ২৬ টাকা ধরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের যে মহতি উদ্যোগ গ্রহন করে তার সুফল পায়নি কক্সবাজারের কৃষকরা। খাদ্য অফিসের লাগামহীন দূনীর্তির খবর মন্ত্রনালয় পর্যন্ত পৌছেছে। দূনীর্তির বিষয়টি কৃষি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক পর্যন্ত পৌছার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মন্ত্রী কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আকম শাহারিয়ারকে ফোন দিয়ে সঠিক চিত্র জানতে চান। মন্ত্রী অনেকটা ফোনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনিয়মের খবর পেয়ে।
গতকাল শনিবার আকম শাহারিয়ার দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, মন্ত্রী মহোদয় আমাকে সদর খাদ্য অফিসের ধানক্রয়ের দূনীর্তির বিষয়টি জানতে চান । আমি ফোন পেয়ে আমার ঢাকা যাওয়ার সফর বাতিল করি। মাঠ পর্যায়ে বেশ কয়েকজন কৃষকের কাছে ধান বিক্রয় বিষয়ে জানতে চাইলে তারা যে বর্ণনা দেন তা খুবই ভয়াবহ। এ ব্যাপারে আমি ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা দেবদাস সাহেবকে মোবাইলে কিছুটা জানিয়েছি এবং বিষয়টি জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত ) আশরাফুল আফসারকে জানালে তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষাকে নির্দেশ দেন।
ধানক্রয়ে নানা অনিয়ম এবং তদন্তের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসার জানান, খাদ্য অফিসের নানা অনিয়মের খবর আমরা পেয়েছি । তা সরাসরি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা আমিন আল পারভেজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
সদর খাদ্য গুদামে নানা অনিয়ম ধানক্রয়ে দুর্নীতি বিষয়ে জেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা দেবদাস চাকমা বলেন- মানহীন ধান ক্রয় না করার কারনে কৃষকরা অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। তবে দূর্নীতি করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে টন প্রতি উৎকোচ গ্রহন করার ডকুমেন্ট আছে বলার পর তিনি আগামি সোমবার পুনরায় তদন্ত করবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, খাদ্য অফিসের দুণীর্তির তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে তিনি ও মাঠে তদন্ত করছেন বলে জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার সরাসরি কৃষকদের ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করণে বোরো ধানক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। গত জুন থেকে শুরু হয়ে আগামি আগষ্ট পর্যন্ত জেলায় ৩৮৫৫ মেট্রিকটন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৭ উপজেলায় লক্ষমাত্রার বিপরীতে ১৮৮৫ টন ক্রয় করে খাদ্য অফিস। টেকনাফ ছাড়া বাকি ৭ উপজেলার কৃষকদের ধান কেজি ২৬ টাকা দরে ক্রয়ের নির্দেশ দেয় সরকার। বন্যা ও দূর্যোগের কারনে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় ধান ক্রয় বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় খাদ্য অফিসে কৃষকরা সুষ্ঠু ও সরকারের নির্দেশমতে ধান বিক্রয় করতে পারলেও সদর খাদ্য গুদামে শুরু থেকেই চলে নানা অনিয়ম দুর্ণীতি এবং কৃষকদের জিম্মী করে টাকা আদায়ের ঘটনা। কৃষকরা নানা হয়রানির শিকারের মূলে যাদের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তারা এ গুদামের ৭/১০ বছরের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারি। এরমধ্যে অন্যতম অভিযোগ সদর গুদাম কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত সালা উদ্দিন , উপ খাদ্য পরির্দশক ২০০৯ সাল থেকে কর্মরত কামরুল ইসলাম, ২০০৭ সাল থেকে কর্মরত খাদ্য পরির্দশক রাজিয়া বেগমের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মকর্তা থাকার কারনে তাদের শেঁকড় এত গভিরে যে গত বছর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক তদন্তে এসে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমান পেয়েও ব্যবস্থা নেননি।
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি মাঠ পর্যায়ে তদন্তে গেলে বিশেষ করে সদরের পিএমখালী, ঝিলংজা, খুরুস্কুল, ঈদগাও, ইসলামাবাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষকদের কাছ থেকে কিভাবে টাকা আদায় করা হয়েছে ,অতিরিক্ত কি পরিমান ধান নিয়ে কৃষকদের ঠকিয়েছে আরো স্পষ্ট হবে।
উল্লেখ্য সরকার চকরিয়ায় ১৪৮২ টনের বিপরীতে ধান ক্রয় হয়েছে ৭২৯.৬০ মে.টন, পেকুয়ায় ৫৬২ টনের বিপরীতে ১৫৩.৮৮ টন, রামুতে ১৮২ টনের বিপরীতে ১৬৭.৪২ টন, সদরে ৫৪১ টনের বিপরীতে ৪৯৪.১২ টন, উখিয়ায় ৪৮২ টনের বিপরীতে ২৪৬ টন, মহেশখালীতে ৫৩২ টনের বিপরীতে ৪৪.৬০ টন, কুতুবদিয়ায় ৭৪ টনের বিপরীতে ২২.৬৬১ টন ক্রয় করেছে বলে ১৮ জুলাই এর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।পুরো জেলায় এখনো ৪৮ শতাংশ ধান ক্রয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সদরের ৯১ শতাংশ ধান ক্রয়ে কৃষকদের কাছে লাখ লাখ টাকা অনিয়ম করে আদায়কারি উক্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...