প্রকাশিত: ১৮/০১/২০১৮ ৮:৩১ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৭:৫৬ এএম

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

‘বছর খানেক আগে বাসায় ইলেট্রিকের কাজ করতে আসে সুদর্শন যুবক মঈন উদ্দিন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ে উঠে দু’জনের।’ ফটিকছড়িতে মঈন হত্যাকাণ্ডে আটক হামিদা আক্তার রনি (১৯) পুলিশের কাছে এভাবেই বলছিলেন নিজেদের কথা। হত্যার বিষয়ে রনি পুলিশকে বলেন, ‘মুঠোফোনে ও সাক্ষাতে তাদের একাধিকবার দেখা হতো, কথা হতো। মঈন বারবার পুরনো প্রেমিকার মতো আচরণ করতে চাইতো। গায়ে হাত দিতে চাইতো। এরই মধ্যে আমি গোপন সূত্রে জানতে পারি, সে অন্যত্র গোপনে বিয়ে করেছে এবং আরো একটি মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে। তাই তার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখলেও সম্পর্ক কমাতে থাকি। এ নিয়ে সে আমাকে বারবার বিরক্ত করতো। গত ৯ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে সে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে আমাদের ঘরে আসে। ঘরে কেউ নেই দেখে সে আমার সাথে অন্তরঙ্গ হতে চায়। এক সময় জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। তখন এই রুম–ওই রুম ঘুরতে ঘুরতে সবজি কাটার ছুরি নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে দিই। এতে ঘটনাস্থলেই মঈন মারা যান। এভাবেই হামিদা পুলিশের কাছে মঈনের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফটিকছড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিজন কুমার বড়ুয়া। তিনি জানান, ঘটনার দিন দু’জনের মধ্যে ৭ বার মোবাইলে কথোপকথন হয়। রনি ফটিকছড়ি পৌরসভার দক্ষিণ রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের মো. ইউনুছের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডের ৮ দিন পর গতকাল বুধবার সকালে ফটিকছড়ি থানার পুলিশ মুঠোফোন ট্র্যাকিং করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। রাঙামাটিয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় হামিদা আকতার রনিকে (১৯)। পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চুরিটিও উদ্ধার করেছে। নিহত মঈন উদ্দিনের মুঠোফোনের কললিস্ট পর্যালোচনা করে প্রযুক্তির সহায়তায় হামিদা আকতার রনিকে মঈন উদ্দিনের ‘খুনি’ হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে রনি।

রনি পুলিশকে জানান, মঈনকে রনি পছন্দ না করলেও মঈন প্রায়ই সময় মোবাইলে রনিকে বিরক্ত করত। স্থানীয় এক যুবকের মাধ্যমে রনির গতিবিধির খোঁজ খবর নিত। হামিদা আকতার রনি ফটিকছড়ি কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। রনি নিজে দু’টি মোবাইল সিম ব্যবহার করতেন। তন্মধ্যে একটি সিম স্থানীয় এক যুবকের নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এদিকে নিহত মঈনের দু’টি সিমই রনি হত্যাকাণ্ডের পর নষ্ট করে ফেলেছে। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা আসলে তাদের হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে বুঝিয়ে লাশটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দিয়েছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকের হোসেন মাহমুদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু–উদঘাটন করতে পুলিশকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। কারণ নিহত মঈনের আচরণে এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন তার কোন শত্রু থাকতে পারে বলে মোটেই সন্দেহ করেনি। আবার হত্যাকাণ্ডের পর মুঠোফোনের সিমগুলো নষ্ট ছিল। তাই ওই এলাকার টাওয়ারের সব কললিস্ট পর্যালোচনা করে রনির মুঠোফোন নাম্বারটি চিহ্নিত করে এই রহস্য উদঘাটন করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১০ জানুয়ারি সকালে ফটিকছড়ি পৌরসভার দক্ষিণ রাঙামাটিয়ায় একটি পুকুর থেকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মঈনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের বোনের জামাই সাইফুল বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পাঠকের মতামত