প্রকাশিত: ২২/০২/২০১৯ ৭:০৪ পিএম , আপডেট: ২২/০২/২০১৯ ৭:০৬ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকাহত গোটা দেশ। আগুনের লেলিহান শিখায় নিভে গেছে বহু প্রাণ। চকবাজার লাগোয়া বড়কাটারা মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি উমর ফারুকও আছেন নিহতদের তালিকায়। অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগেও তিনি ছাত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে খাবার খেয়েছেন। এরমাত্র কতক্ষণ পরেই তার মৃত্যু সংবাদে শোকে বিহ্বল মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সবাই।

দীর্ঘ দশ বছর ধরে তিনি চকবাজার বড় কাটারা মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। প্রিয় শিক্ষকের মুখটি শেষবারের মতো দেখতে ও তার লাশ গ্রহণ করতে বড় কাটারা মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ভিড় জমিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলের মর্গে। মাত্র তিন বছর আগে বিয়ে করেছেন মুফতি উমর ফারুক। দুই বছরের একমাত্র ছেলেটি এখন আর বাবা বলে ডাকবে না ।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফার্মেসীতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মাদরাসা শিক্ষকের।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দিনভর প্রিয় শিক্ষকের লাশ গ্রহণ করতে ঢামেকের সামনে অপেক্ষা করেছেন তার শত শত ছাত্র।

ছাত্রজীবন থেকেই মাওলানা উমর ফারুকের জীবন ছিল সংগ্রামী। মাদরাসার দুই বেলা খাবারই ছিল তার ভরসা। অধিকাংশ দিন সকালের নাস্তাও করতে পারতেন না। তাই কখনও মাদরাসা ছেড়ে যাননি,যাওয়ার চিন্তাও করেননি; বরং ছাত্র-শিক্ষক কাউকে তা বুঝতেও দিতেন না।

চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটরার শিক্ষক মাওলানা উমর ফারুক রহ. সম্পর্কে বলছিলেন তার সহপাঠী ও সহকর্মী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। তারা দুইজন একসঙ্গে জামিয়া কোরআনিয়া, লালবাগে লেখাপড়া করেন এবং শিক্ষা সমাপনের পর ২০০৮ সালে বড় কাটরা মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান।

মাওলানা সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, শিক্ষক হওয়ার পরও মুফতি উমর ফারুক অনেক কষ্ট করেছেন। মাদরাসায় পড়াতেন আর দুপুরে রাতে একটি ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকানে সময় দিতেন। কয়েক বছর আগে একটা সন্তানও হয়েছে তার। নিজের ভিটেমাটি বলতে কিছুই ছিল না। তিনি সন্তানদের জন্য এক টুকরো জমি কেনার স্বপ্ন দেখতেন এবং সেজন্য মুখ বুজে সব কষ্ট সহ্য করতেন।

মুফতি উমর ফারুকের সহপাঠী ও বন্ধু লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘উমর ফারুক ভাই এত সহজ সরল মানুষ ছিলেন, হাসিমুখ ছাড়া কখনো কথা বলতেন না। একসঙ্গে আমরা মিশকাত-দাওরা পড়েছি লালবাগ মাদরাসায়। নিতান্ত চুপচাপ ইলমি মানুষ। ক্লাসে একদম সামনে বসতেন। উস্তাদদের খেদমতে ছিলেন উজাড়প্রাণ। লালবাগের বাবা হুজুরের খুব স্নেহের পাত্র ছিলেন। হুজুরের সামনে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকতেন। খুব ইবাদতগুজার ছিলেন। অপ্রয়োজনে কোনো কথা ছিল না তাঁর মুখে।

চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিভে গেল এই সরলপ্রাণ মানুষটির প্রাণের আলো। আল্লাহ তাঁকে শহীদি মর্যাদায় ভূষিত করুন! আল্লাহর কাছে আকুতি করে এই মিনতি করি।’ সুত্র, যুগান্তর

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...