প্রকাশিত: ২৯/০৭/২০১৮ ৯:৫৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:০১ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
ছুটি হয়ে যাওয়ায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী এমইএস বাসস্ট্যান্ডে মিরপুর ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়েছিল। দুপুর আনুমানিক সোয়া ১২টায় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস ওই ফ্লাইওভারের মুখেই দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু পেছন থেকে একই পরিবহনের দ্রুতগতি সম্পন্ন আরেকটি বাস ওভারটেক করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির সামনে টার্ন নিয়ে ঢুকতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নিমিষেই দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায় বাসটি। কেউ নিচে চাকার নিচে পিষ্ট হয় কেউ বা ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যায়।

২০ থেকে ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দেন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আরিফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সব যেন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছিল। কী থেকে কী হয়ে গেল। বাসে বসেই শিক্ষার্থীদের হাসাহাসি-খুনসুটি দেখছিলাম। কিন্তু পেছন থেকে আসা জাবালে নূরের আরেকটি বাসের রেষারেষিতেই নিমিষেই পড়ে যায় কান্নার রোল।

পেছন থেকে আসা বাসের যাত্রী রিপন জাগো নিউজকে বলেন, এমন ঘটনা আর কখনো দেখিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আজাহারি শুনতে হলো। কান্নার আওয়াজ আর জটলা দেখেই বাস থেকে নেমে পড়ি। কাছে যেতেই দেখি রক্তের গঙ্গা বইছে। দৌড়ে আসে অন্য ছাত্রছাত্রীরা। দৌড়ে আসে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে সেনা কর্মকর্তা ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।

তিনি বলেন, আমার দেখে মনে হলো, পেছনের বাসটি সামনের বাসটিকে আটকে দিতে চেয়েছিল। দ্রুতগতিতে টার্ন নিয়ে সামনে ঢুকতেই যাত্রীদের উপর উঠে পড়ে বাসটি।

ট্রাফিক পুলিশ ও ক্যান্টনম্যান্ট থানা পুলিশ জানিয়েছে, রেডিসন ব্লু হোটেলের সামনের বিমানবন্দর সড়কে ওই দুর্ঘটনায় ১৪ জন শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে। এদের মধ্যে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজীবকে গুরুতর অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সজীব জানান, নিহত দুজনসহ মোট পাঁচজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাকিদের সিএমএইচে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সেনাসদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখানে প্রায় দিনের মতো আজও ডিউটিতে ছিলাম। নিজের চোখে যেন কেয়ামত দেখছিলাম। কীভাবে একটি বাস আরেকটি বাসকে আটকাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের উপর উঠে গেল! বাসটির চালক ও হেলপার চাইলেই এই দুর্ঘটনা হতো না। কিন্তু তারা দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটালো।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত দিয়া খানম মিমের বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম। তাদের বাড়ি মহাখালী দক্ষিণপাড়ায়। অন্যদিকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিমের বাবার নাম মৃত নূর ইসলাম ও মা মহিমা বেগম। তাদের বাড়ি উত্তরা আশকোনা এলাকায়।

দুর্ঘটনার পর রাস্তা অবরোধ করে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা ও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাসে আগুনও ধরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিপুল সংখ্যক ট্রাফিক ও ক্রাইম ডিভিশনের পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থী নিহতের পর শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা হোটেল রেডিসন ব্লুর সামনে রাস্তা অবরোধ করে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাস দুটিসহ জাবালে নূরের পাঁচটি বাস ভাঙচুর করে। এ ছাড়া তানজিল, বিআরটিসি, ভূঁইয়া পরিবহন ও বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সর্বশেষ বিকেল সাড়ে ৩টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার দাস জাগো নিউজকে বলেন, সহপাঠী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ এবং ভাঙচুর করে। এ সময় মহাখালী থেকে উত্তরা রোড়ের দুই দিকে যানজট দেখা দেয়।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের পাশাপাশি উত্তরা ও গুলশান জোনের পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দুই শিক্ষার্থী নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। আরও দুই-তিনজন মারা গেছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপির বড় তহবিল গঠনে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বড় আকারের আন্তর্জাতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতি আহ্বান ...