প্রকাশিত: ১৬/১০/২০১৯ ৯:৪২ এএম

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষায় মানসম্পন্ন যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতায় যাতে যোগ্যতা নিয়ে ঠিকে থাকতে পারে, সেভাবে তাদের গড়ে তোলা হচ্ছে। কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার সন্তানসমতুল্য। আমার নিজের সন্তানের বেলায় যেভাবে যত্ন ও খোঁজ খবর নিয়ে থাকি, ঠিক সেভাবেই কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছি। বরং আমার কর্মস্থলের নৈকট্যের কারণে ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের সন্তানের চেয়ে আরো বেশী সময় ও নির্দেশনা দিয়ে কেয়ার নিতে পারছি। এছাড়া দাপ্তরিক শত ব্যস্ততার মাঝেও কক্সবাজার ডিসি কলেজে একবার ঘুরে আসার জন্য চেষ্টা করি। রাত্রে ঘুমানোর সময়ও ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, তাদের হৃদয়ে অনুভব করি।

নব প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান প্রথম বর্ষের ১ম সেমিস্টারের পরীক্ষার সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে কক্সবাজারের স্বনামধন্য জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন একথা বলেন। মঙ্গলবার ১৬ অক্টোবর ডিসি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে তিনি কলেজের আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও নবনির্মিত বিজ্ঞান ল্যাবও এসময় পরিদর্শন করেন। এসময় তাঁর সাথে ডিসি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন সহ কলেজের শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষা পাগল ডিসি মোঃ কামাল হোসেন বলেন-পরিবার পরিজনের জন্য একজন মানুষ হিসাবে মনটা যখন ব্যাকুল হয়ে উঠে, তখন আমি ছুটে গিয়ে ডিসি কলেজের কোমলমতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে প্রয়োজনীয় বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করে আমি সময় কাটাই। তখন আবেগী মনটা প্রফুল্লতায় ভরে উঠে। একথা বলার সময় মোঃ কামাল হোসেন নামক অসাধারণ মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষটির চোখে অশ্রু টল টল করছিলো। এক পর্যায়ে টিস্যু নিয়ে শরীরের ঘাম মুছার ভান করে নিজের চোখের কোনা গুলোতে জমে থাকা অশ্রু মুছছিলেন।
কক্সবাজার ডিসি কলেজ মূল ক্যাম্পাসে কখন স্থানান্তরিত হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে বলেন-মূল ক্যাম্পাস সংস্কার ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। সংস্কার ও প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ে ডিসি কলেজের মূল ক্যাম্পাস শহরের বইল্ল্যা পাড়ায় বায়তুশ রোডে স্থানান্তর করা হবে।
বোর্ড ও অধিদপ্তর থেকে এপিলিয়েশন অর্থাৎ অনুমোদনের বিষয়টি কোন পর্যায়ে রয়েছে, জানতে চাইলে কক্সবাজার ডিসি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে বলেন, অনুমোদনের বিষয় গুলো এখন চুড়ান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনুমোদন কর্তৃপক্ষ আমাদের বেশ সহায়তা করছে। তাই সহসায় এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি ইনশাল্লাহ।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট আছে। কিন্তু মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী, বাস্তব কর্মক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার এখন বড়ই অভাব। কক্সবাজার ডিসি কলেজ গতানুগতিক সেই পড়ালেখা কিংবা কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তাই সিলেবাস ভুক্ত পড়ালেখার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিগত শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ানো ও প্র্যাকটিক্যালি শিখানো হচ্ছে। এজন্য ডিসি কলেজের প্রতিপাদ্য দেওয়া হয়েছে “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশেষায়িত কলেজ”। তিনটি বিশেষ শব্দ “শিক্ষা প্রযুক্তি সমৃদ্ধি” এই শ্লোগানে পরিচালিত হচ্ছে, কক্সবাজার ডিসি কলেজ। শুধু তাই নয়, নৈতিকতা ও আদর্শগত শিক্ষাও শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে। যেটা বর্তমান পরিবেশে খুব বেশী প্রয়োজন।

কক্সবাজার ডিসি কলেজের শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন, বাস্তবধর্মী জ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, মানবিক গুনাবলী ও যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা হবে ইনশাল্লাহ। সেজন্য, মেধাবী, প্রশিক্ষিত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন করে একটি গ্রুপ করে একজন শিক্ষককে প্রতিটি গ্রুপের তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষক গ্রুপের প্রতিটি ছাত্রদের বিভিন্ন বিষয়াদি সামগ্রিকভাবে দেখভাল করছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি গ্রুপে তিন মাস অন্তর অন্তর পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম ৩ জনকে উৎসাহিত করতে কলেজ থেকে স্কলারশিপ দেয়া হচ্ছে। কক্সবাজার ডিসি কলেজের মূল ক্যাম্পাসকে আরো অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে নিমার্ণ করা হচ্ছে। সর্বোপরি কক্সবাজার ডিসি কলেজকে দেশের একটি মডেল ও অনুসরনীয় কলেজ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও শিক্ষাক্ষেত্রে আলোকিত বিশিষ্টজনদের নিয়মিত পরামর্শ নেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার ডিসি কলেজ কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য একটা বিশাল স্থায়ী সম্পদে পরিণত হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন-এটি কক্সবাজারের পরিচিতিকে আরো ব্যাপক করবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় কক্সবাজারকে আরো সমৃদ্ধ করবে। আলোকিত মানুষ তৈরীর একটি কারখানা হবে।
কলেজটির নামকরণ কেন কক্সবাজার ডিসি কলেজ করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন সিবিএন-কে বলেন-সরকারি চাকুরীর সহজাত নিয়ম হচ্ছে, নিয়োগ, বদলি, পদন্নোতি, অবসর ইত্যাদি। আমিও সেই নিয়মের বাইরে নই। একসময় আমিও সে নিয়মের বাধ্য বাধকতার শেকলে বন্দী হয়ে কক্সবাজার ছেড়ে চলে যাবো। পেশাগত প্রয়োজনে আমি অন্যত্র চলে যাওয়ার পর যাঁরা কক্সবাজারে সম্মানিত জেলা প্রশাসক হয়ে কক্সবাজার আসবেন তাঁরাও যাতে কলেজটির প্রতি সর্বোচ্চ সুদৃষ্টি রাখেন, এজন্য কক্সবাজার ডিসি কলেজ নামকরণ করা হয়েছে। কলেজের নামের সাথে ‘ডিসি’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। যাতে আগামীর জেলা প্রশাসকগণ এ ধরনের নামের কারণে উৎসাহ বোধ করেন। এছাড়া কলেজটির বিষয়ে কক্সবাজার জেলাবাসী যাতে সবসময়ই উৎসাহ ও আগ্রহ দেখান, সেজন্য শুধু ডিসি কলেজ নামকরণ নাকরে “কক্সবাজার ডিসি কলেজ” নামকরণ করা হয়েছে। ডিসি মোঃ কামাল হোসেন আরো বলেন, কক্সবাজারের মাহনুভব বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সহ সকলের দৃঢ় ও আত্মপ্রত্যয়ী উদ্যোগের কারণে দ্রুততম ও প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে কক্সবাজার ডিসি কলেজের মূল কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করা সম্ভব হয়েছে। একজন মানুষ তার নিজের ঔরসজাত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা যেভাবে চিন্তা করেন, ডিসি কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার চেয়েও অনেক বেশী আন্তরিকতা দিয়ে সবার নিরন্তর সহযোগিতাতায় আমি কাজ করে যাচ্ছি বলে উল্লেখ করেন ডিসি মোঃ কামাল হোসেন।

ডিসি কলেজ প্রতিষ্ঠায় কক্সবাজারবাসীর গর্বের ধন, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রধান অভিবাবক, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গর্বিত সদস্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সহ আরো যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন-সকলের হৃদ্যতায় চলতি বছরের গত ১ জুলাই থেকে একাদশ বিজ্ঞান শ্রণিতে ভর্তি হওয়া ডিসি কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাস কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হয়েছে। বর্ণাঢ্য ও নান্দনিক আয়োজনে নবীন বরন করা হয়েছে। এজন্য ডিসি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে অভিবাবকদের উদ্দ্যেশে বলেন-আপনাদের সন্তানদের লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব আমাদের, আর সন্তানেরা নিয়মিত কলেজে আসছে কিনা, নাকি কলেজে আসার অজুহাতে অন্য কোথাও আড্ডা করছে, নিয়মিত পড়া আদায় করছে কিনা, ফেসবুক-ইন্টারনেটে মগ্ন হয়ে গেছে কিনা, বাসায় নিয়মিত পড়াশোনা করছে কিনা, নাকি গ্যাং কালচারে জড়িত হয়ে গেছে-এসব বিষয় সহ বাইরের যেকোন নেতিবাচক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখার দায়িত্ব আপনাদের। অভিভাবকদের কলেজে নিয়মিত স্বশরীরে এসে সন্তানদের ফলাফল জানার জন্য তিনি অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন-কক্সবাজার ডিসি কলেজ পরিপূর্ণ, নৈতিকতা সমৃদ্ধ মানুষ তৈরীর একটি কারখানা হিসাবে কাজ করবে ইনশাল্লাহ। যেটি হবে আলোকিত মানুষ গড়ার একটি প্রজ্জ্বলিত মশাল। সেজন্য, ডিসি কলেজে সিলেবাসভুক্ত নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি ডিবেট ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, সাইন্স ক্লাব, আইসিটি ক্লাব, উন্নত বিজ্ঞান ল্যাব, উন্নত লাইব্রেরী, প্রার্থনা কক্ষ সহ আরো অনেক প্রয়োজনীয় সুবিধাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন ক্লাসে সপ্তাহের প্রতি শনিবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ক্লাস পরীক্ষা (সিটি) নেয়া হয়। যাচাই করা হয়, শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক অগ্রগতি কেমন। শিক্ষার্থীদের কলেজ কর্তৃপক্ষ এডমিশন ফি, বই, ড্রেস সহ প্রায় সব শিক্ষা উপকরণ ফ্রি দিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে পরিবহন সুবিধাও দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীরও সেভাবে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হয়ে ভাল ফলাফল করে কক্সবাজার ডিসি কলেজকে দেশের শ্রেষ্ঠ কলেজে পরিণত করার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি আহবান জানান। কক্সবাজার ডিসি কলেজ এ অঞ্চলে সংস্কৃতি,সভ্যতা ও শিষ্টাচার সমৃদ্ধ পরিশুদ্ধ উন্নত সমাজ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে ডিসি কলেজের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় সকলের আরো সহযোগিতা কামনা করেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে বলেন, তোমরা শুধু দু’টি বছর শিক্ষায় গভীর মনোনিবেশ করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করো, এসময়ে অন্য কোথাও সময় দেওয়ায় চেষ্টা মোটেই করবেনা। তখন দেখবে, পরবর্তী সময়ে তোমাদের পছন্দমতো মানসম্পন্ন উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয় ভিত্তিক পড়াশোনার জন্য ভর্তি হতে আর কোন বেগ পেতে হচ্ছেনা। শিক্ষার জ্যোতি ছড়িয়ে আলোকিত মানুষ গড়তে মরিয়া হয়ে উঠা, শিক্ষা পাগল মোঃ কামাল হোসেন ডিসি কলেজের অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার জন্য এসময় বার বার তাঁদের প্রতি অনুরোধ জানান।

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...