প্রকাশিত: ১৯/০২/২০১৭ ৯:৪১ এএম

বিশেষ প্রতিবেদক:: কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজে মাথাপিছু ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়নি প্রশাসন। এ কারণে জাহাজ মালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এ ছাড়া পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) জাহাজগুলোতে বহন করা হয় অতিরিক্ত যাত্রী।

টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। প্রতিদিন সকালে টেকনাফের জেটিঘাট থেকে পর্যটক নিয়ে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সাতটি জাহাজ ও ৩০টির মতো কাঠের ট্রলার। বিকেলে পর্যটকদের নিয়ে নৌযানগুলো আবার টেকনাফে ফিরে আসে।

গত সোমবার সকালে টেকনাফের নাফ নদীর দমদমিয়া জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি জাহাজে ধারণক্ষমতার বেশি পর্যটক তোলা হয়েছে।
কেয়ারি সিন্দাবাদ জাহাজের ধারণক্ষমতা ৩৪২ জন। জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। জাহাজের কর্মীরা জানান, জাহাজটিতে পর্যটক তোলা হয়েছে ৫০০ জনের মতো।

ঢাকার রামপুরা থেকে আসা পর্যটক মনজুরুল হক বলেন, তিন বছর আগে তিনি ৩০০ টাকা ভাড়ায় এই জাহাজে করে সেন্ট মার্টিনে গিয়েছিলেন। এবার টিকিট কিনতে হয়েছে ৮০০ টাকায়। তারপরও বসার জন্য জাহাজে কোনো আসন পাননি তিনি।

কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনের ধারণক্ষমতা ৩৪২ জন। এই জাহাজে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।জাহাজ দুটির টেকনাফের ব্যবস্থাপক শাহ আলম বলেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় টিকিটের দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যটকের চাপের কারণে অতিরিক্ত যাত্রী জাহাজে উঠে যাচ্ছে।

ঘাট সূত্র জানায়, ৩৮৪ জন ধারণক্ষমতার এলসিটি কুতুবদিয়া ও এলসিটি কাজল জাহাজে সোমবার তোলা হয় ১ হাজার জনেরও বেশি যাত্রী। ভাড়া আদায় করা হয়েছে জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।

জাহাজ দুটির ব্যবস্থাপক মো. আজিজ ও মাহবুবুর রহমান বলেন, পর্যটন মৌসুমে চাপ বেড়ে গেলে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী জাহাজে উঠে যায়। তখন কাউকে নামানো যায় না।

২৫০ জন ধারণক্ষমতার বে-ক্রুজ জাহাজের ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। ১২০ জন ধারণক্ষমতার এমভি গ্রিনলাইন জাহাজের ভাড়া জনপ্রতি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

এমভি গ্রিনলাইন জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়নি। গ্রিনলাইন জাহাজের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমদ বলেন, তাঁরা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করেন না। দ্রুতগতির ও আরামদায়ক হওয়ায় তাঁদের জাহাজে ভাড়াও একটু বেশি।

তুলনামূলকভাবে ভাড়া কম এমভি বাঙালি নামের জাহাজের। ২ ফেব্রুয়ারি ৭৫৪ জন ধারণক্ষমতার এই জাহাজ চলাচল শুরু হয়।

নারায়ণঞ্জের ব্যবসায়ী আহসান হাবিব বলেন, অন্যান্য জাহাজে ভাড়া নিচ্ছে ৫৫০ টাকার বেশি। কিন্তু এমভি বাঙালির ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা।
এমভি বাঙালি জাহাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৩৪ কিলোমিটারের নৌপথে যাত্রীদের মাথাপিছু ভাড়া ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যেই রাখা যায়।

পর্যটকেরা বলেন, জাহাজভাড়া নির্ধারিত না হওয়ায় কতিপয় জাহাজমালিক পর্যটকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এ ছাড়া জাহাজগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলম বলেন, জাহাজ ও ট্রলারের মালিকপক্ষকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে বিরত থাকার পাশাপাশি জেটিঘাট এলাকায় ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিদের্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক জাহাজ এই নির্দেশনা মানছে না। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের দায়ে এলসিটি কাজল, এলসিটি কুতুবদিয়াসহ একাধিক জাহাজকে জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাড়া নির্ধারণের ব্যাপারে জাহাজ ও ট্রলারমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।

prothom-alo-cox-coxbangla

পাঠকের মতামত