প্রকাশিত: ১৯/১০/২০১৮ ৯:৩৯ পিএম

বিশেষ প্রতিবেদক::
কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের অভিযানে শুধুমাত্র বিগত ৮ মাসে প্রায় ৭৫ জন মাদক কারবারী গ্রেফতার হয়েছে, যেখানে ২০ জনের অধিক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর হন্য হয়ে খোঁজছিল। অবশেষে তারা টেকনাফ থানা পুলিশের হাতেই ধরাশায়ী হয়।
অভিযানে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায় মোস্টওয়ান্টেড আসামী, বিভিন্ন দপ্তরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আকতার কামাল, শামসুল আলম মার্কিন ও ইমরান হোসেন পুতিয়া।
গত ৮ মাসে উদ্ধার হয়েছে ২৭ লাখ ইয়াবা, যার অনুমান মূল্য ৮০ কোটি টাকা। উদ্ধার হয় গাঁজা, হেরোইন ও আমদানী নিষিদ্ধ মিয়ানমারের বিয়ার। এই সময়ে ২০ টির মতো বিভিন্ন রকম অস্ত্র উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। ৮ মাস আগের অর্জন আর পরের অর্জন মিলিয়ে দেখা গেছে অনেক পার্থক্য। অনুসন্ধানে টেকনাফ মডেল থানা সুত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
থানাসুত্রে পাওয়া কয়েকটি বিশেষ অভিযান:
১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে টেকনাফ পৌর এলাকার কায়ুকখালী খালে অভিযান চালিয়ে এফ.বি সাদিয়া নামক মাছধরার ট্রলার থেকে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার ইয়াবার উদ্ধার করে পুলিশ, যার মূল্য অনুমান ১৩ কোটি টাকা।
১৭ এপ্রিল সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণপাড়ায় একটি বসতবাড়ীতে অভিযান ১ লাখ ইয়াবাসহ আসামী সাদ্দাম নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত ইয়াবার অনুমান মূল্য ৩ কোটি টাকা।
১৯ এপ্রিল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ খোনকারপাড়া থেকে ৫ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। ইয়াবাগুলোর অনুমান মূল্য সাড়ে ১৬ কোটি টাকা।
১ মে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের রাজারছড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ সময় একটি ড্রাম ট্রাক আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবা ও ড্রাম ট্রাকের অনুমান মূল্য ১৪ কোটি টাকা।
৭ অক্টোবর টেকনাফ শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ নোয়াখালীপাড়া বিচ এলাকা থেকে ১৮ কোটি টাকা দামের ৬ লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
মূলতঃ ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়ার কর্মদক্ষতা, সাহসিকতা, সর্বোপরী থানায় কর্মরত সব কর্মকর্তার আন্তরিক সহযোগতায় এই সফলতা আসে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
রনজিত কুমার বড়ুয়া যেখানেই দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে সমন্বয় করে চলতেন। পরামর্শ নিতেন সবার। সর্বদা পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন। উপরিমহলে যেমন সুন্দর সম্পর্ক রেখে চলতেন, ঠিক নিম্নস্থরেও সমন্বয় করতেন।
এদিকে জেলা পুলিশের একটি সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়াকে ফেনিতে বদলী করা হয়েছে। দু’য়েকদিনের মধ্যেই তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারী তিনি টেকনাফ মডেল থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেছিলেন। এর আগে আরেকবার টেকনাফ থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেন। কর্মের ওপর তিনি ‘প্রতিশ্রুতিশীল’ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বিতীয়বার যোগদান করে মাদক বিরোধী অভিযানসহ বেশ প্রশংসনীয় কাজ করেন রনজিত কুমার বড়ুয়া। তিনি দীর্ঘদিনের অবহেলিত ও ঝরাজীর্ন থানা মসজিদের সংস্কার-উন্নয়নে হাত দেন। তার ভূমিকায় থানা কম্পাউন্ডের এই মসজিদটি অনেকটা দর্শনীয় মসজিদে পরিণত হয়েছে। রনজিত কুমার বড়ুয়াকে একজন ‘অসাম্প্রদায়িক পুলিশ অফিসার’ মনে করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে ১৯৯৩ সালে ক্যাডেট ‘সাব-ইন্সপেক্টর’ পদে যোদগান করেন রনজিত কুমার বড়ুয়া। পুলিশ প্রশাসনে ২৫ বছরের কর্মজীবনে টেকনাফ ছাড়াও কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, নোয়াখালীর কবিরহাট থানায় ওসি ছিলেন। জেলার বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁও পুলিশ তদন্তকেন্দ্র (তৎকালীন পুলিশ ফাঁড়ি) এর আইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে তিনি বৃহত্তর ঈদগাঁওর সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী রনজিত কুমার বড়ুয়া যেমন উদার, তেমনি অপরাধীদের আতঙ্কের নাম। কর্মকালে জেলা পর্যায়ে ৬ বার এবং বিভাগে ৩ বার ‘শ্রেষ্ঠ ওসি’ হিসেবে পুরস্কৃত হন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পূর্বতিমুর দায়িত্ব পালন করেন।
উল্লেখ্য, রনজিত কুমার বড়ুয়ার জন্মস্থান চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার শীলঘাটা গ্রামে।

পাঠকের মতামত

দৈনিক আজাদী’র কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ পেলেন আজিজ রাসেল

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী’র কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রতিশ্রুতিশীল সংবাদকর্মী এম.এ ...