প্রকাশিত: ২২/০৮/২০১৬ ১০:৫১ পিএম

13615053_649121148590735_8460311370252913911_n২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমি, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সেন্টমার্টিন সফরে এসেছিলাম। ৩ রাত ৪ দিন কাটিয়ে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য চোখে লাগিয়ে যখন ফিরছিলাম টেকনাফ কেয়ারিঘাটে আমাদের জাহাজ ভিড়ার কিছুটা আগে এর কোল ঘেঁষে পাহাড়ের বুক দিয়ে গাড়ি চলছে এই দৃশ্যটা চোখে গেঁথে গিয়েছিল। হয়ত খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। অনেকের চোখে এমন কোন ব্যাপার না। কিন্তু মানুষের মন খুব অদ্ভুত। কোন্ জিনিষ আপনার জীবনে কোন্ পরিবর্তন এনে দিবে আপনি হয়ত বুঝতেও পারবেন না। আমার অনেক স্বজন বলেছিল সেন্টমার্টিন ১ দিনের বেশি থাকার জায়গা না। কিন্তু আমরা সেন্টমার্টিন ৪ দিন থেকেছিলাম এবং আর কোনদিন আর হয়ত আসা হবে না এই চিন্তা করে চারদিক ভাল করে লক্ষ্য করছিলাম। ফিরে যথারীতি ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম শাখার চাকরি করতে লাগলাম। কিছুদিন পরে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একটা বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন, তারপর সাক্ষাৎকার দিলাম। ব্যাংকের উর্ধতন ব্যবস্থাপনা পরিষদ সাক্ষাৎকারে আমাকে প্রথমেই বললেন টেকনাফে একটা শাখা হবে আপনি ওখানে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যাবেন কিনা। সাথেসাথে আমার চোখে ভেসে উঠেছিল নাফ নদীর পাশ দিয়ে পাহাড়ের বুক দিয়ে চলা সেই গাড়িগুলোর দৃশ্য। আমার একিসাথে মনে হল সেই অপার সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান টেকনাফতো দেখা হলো না। কোন্ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ের আড়ালে? কেউ বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, আমি আরো অনেক কারনের পাশাপাশি সেই অপরূপ সৌন্দর্য আবিষ্কারের জন্য আর কোন চিন্তা না করেই রাজী হয়ে গেলাম। অনেকজনের সাক্ষাৎকার হয়েছিল, যার মধ্যথেকে আমাকে নির্বাচন করা হল। শুরু হল আমার টেকনাফ জীবন। যারা টেকনাফ আসেনি তারা অনেকে আমাকে প্রশ্ন করত টেকনাফে কি পাকা বাড়ি আছে? বিদ্যুৎ আছে? আসলে একটা জায়গায় না আসলে বুঝা যাবে না তার সম্পর্কে। তার উপর টেকনাফ সম্পর্কে ভাল কোন সংবাদ আমরা কোন প্রচার মাধ্যমে দেখিনি। শুধু ইয়াবা, মানবপাচার ইত্যাদিসহ আরো কত কি সংবাদ। আমার মনে প্রশ্ন জাগে- ভাল কোন সংবাদ কেন আসেনা টেকনাফ নিয়ে? টেকনাফের কি কোন ভাল কিছু নেই? কিন্তু কি বিপুল সম্ভাবনা আছে এই টেকনাফের তা কি টেকনাফের মানুষরা জানেন? যদি জানতেন সমাজে চলমান এই বিষফোঁড়াগুলো হতোনা। শুরু করেছিলাম টেকনাফের সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা নিয়ে কিন্তু লিখতে গিয়ে কি এসে যাচ্ছে? আসলেই বর্তমান টেকনাফ নিয়ে লিখতে গেলে এগুলোই চলে আসে প্রথমে। টেকনাফে আমার প্রায় দুই বছর হতে চলল। তাই আমারও কিছু দায়বদ্ধতা এসে যায়, কি করেছি আমি টেকনাফের জন্য। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি কিছু অবদান রাখতে চাই। কিন্তু আমার পক্ষে কিইবা করার আছে। আমি একজন বেসরকারি চাকরিজীবি মাত্র। কিন্তু কিছু লিখতে তো পারব এর সম্ভাবনা নিয়ে। এভাবে একে একে সবাই কিছু করলে টেকনাফ হয়তো এগিয়ে যাবে। চলুন দেখি কি কি সম্ভাবনা আছে টেকনাফের? পরিচিত মানুষরা বলে -কি আছে টেকনাফের? আমি বলব-কি নেই টেকনাফের? এদেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত পর্যটন শহর টেকনাফের আছে সমুদ্র, নদী,পাহাড়, বন, মেনগ্রোভ বন, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, প্রবাল দ্বীপ সবকিছুর সম্মিলন। কেউ কি বলতে পারবে টেকনাফের মত সব কয়টা প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশের আর কোথাও আছে নাকি? চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার আমার সুযোগ হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি – না, নেই কোথাও এমন প্রাকৃতিক সম্পদ, যা টেকনাফের আছে। কিছুদিন পূর্বে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ঘুরার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, টেকনাফের অনেক কিছু আছে যা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। প্রথমে যে দৃশ্যের কথা বলেছিলাম ‘জাহাজ ভিড়ার কিছুটা আগে এর কোল ঘেঁষে পাহাড়ের বুক দিয়ে গাড়ি চলছে এই দৃশ্যটা চোখে গেঁথে গিয়েছিল’ – ঠিক তার বিপরীত ভাবে দেখলে পাহাড়ের বুক থেকে টেকনাফে ঢুকতে কিংবা বের হতে নাফ নদীর দিকে একটু দৃষ্টি দিন। দেখতে পাবেন ‘জালিয়ার দ্বীপ’ৃৃ বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের মাঝখানে নাফ নদীর বুকে জেগে উঠা দ্বীপ। চারপাশ সবুজ বিস্তৃত, ডিম্বাকৃতির অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সুন্দর্যে ঘেরা একটি ছোট্ট ভুখন্ড এই ” জালিয়ার দ্বীপ” যা ইতিমধ্যে হতে যাচ্ছে একটি আন্তর্যাতিক মানের একটি টুরিষ্ট স্পট। আর নীল জলের শান্ত নাফ নদীতে পালতোলা নৌকা আর জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, অসাধারণ। বিশাল বড় বড় পাহাড়ের টেক, আর পাহাড়ের গা ঘেষা নাফ নদী, দুই এ মিলে টেকনাফ। আমি এখনো যখনি এই পথ অতিক্রম করি দুচোখ ভরে উপভোগ করি এই অপার সৌন্দর্য। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে সমুদ্র আছে। আমি দেখেছি কোথাও ১০০ মিটার, কোথাও আধ কিলোমিটার বা সামান্য কয়েক কিলোমিটার বেষ্টিত সমুদ্র সৈকত, যেখানে হাজার হাজার পর্যটক ভীড় করে আছে। ছিমছাম, অনেক অনেক সুন্দর। কিন্তু টেকনাফের সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার এর সাথে সংযুক্তিসহ কত কিলোমিটার জানা আছে? ১২৫ কিলোমিটার!! পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘ বালির সমুদ্র সৈকতের অংশ টেকনাফের সমুদ্র সৈকত। শুধু কি তাই, এই সৈকত ধরে এখানে মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত যার একদিকে সমুদ্র আর একদিকে পাহাড়, পাহাড়ের কোলে আবার ঝর্ণাধারা। কি অপুর্ব!! অন্যান্য বিচের সাথে টেকনাফের বিচের পার্থক্য আছে। এর সৌন্দর্য আলাদা, যা না দেখলে বুঝা যাবেনা। সাথে আছে নানাবর্ণের সারিসারি চাঁদ নৌকা। অপরূপ সৌন্দর্য যোগ করে এই নৌকাগুলো। সমুদ্রের বালিয়াড়ি দিয়ে মোটর বাইক বা জীপ নিয়ে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার চলে আসা যায়। এইরূপ অপার সৌন্দর্য উপভোগের সু্যােগ আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। এই দীর্ঘ সৈকতের এমন অনেক অসাধারণ জায়গা আছে যার শুধু একটা অংশ পেলে অনেক উন্নতদেশ সেরা পর্যটন স্পট বানিয়ে ফেলত। মেরিন ড্রাইভের একটা লিংক: যঃঃঢ়ং://ুড়ঁঃঁ.নব/পিঔফঢ়সশজফং০ বাংলাদেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে টেকনাফে যেখানে বন্য হাতি ঘুরে বেড়ায়। প্রায় ১২০০০ হেক্টরের এই জায়গা পশুপ্রেমিদের জন্য একটা আকর্ষনীয় স্থান হতে পারে। টেকনাফের সমুদ্র অসাধারণ হলেও সবুজ বনানিও কম নেই। এখানে আছে বিশাল আর লম্বা গাছের গর্জন বাগান। আছে কুদুম গুহা, ব্রিটিশ আমলের দূর্গ, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। আর টেকনাফের অন্তর্গত সেন্টমার্টিন দ্বীপের কথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। টেকনাফ সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিনের প্রবাল দ্বীপ চারদিকে পাথর আর নারিকেল গাছের সারি আর কেয়াবন দ্বীপটিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দান করেছে। স্বচ্ছ নীল জলরাশির তলদেশে প্রবাল বা জীবাশ্ম কোরাল দ্বীপটিকে করেছে আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। টেকনাফের সাবরাংয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬। বিপুল সম্ভাবনা আছে জেনেই সরকার এগিয়ে এসেছে এখানে কিছু করার জন্য। বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী আগ্রহ প্রকাশ করছে এতে বিনিয়োগ করতে। ১২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। দেশের এই সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত পর্যটন শহর টেকনাফের পর্যটন শিল্পকে বিশ্ব ব্যপী ব্যপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে “বিউটিফুল টেকনাফ” নামক ডকুমেন্টারি তৈরী করেন সিরাজগঞ্জ জেলার সন্তান মোঃ মুজিবুর রহমান রানা। ২১ মিনিটের ডকুমেন্টারিতে -সেন্টমার্টিনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তোলে ধরা হয়েছে। ডকুমেন্টারিটি দেখলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের বিনোদন স্পট, যাতায়ত, আবাসন ও কেনাকাটার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। একজন পর্যটকের জন্য গাইড বুক হিসাবেও কাজ করবে এ ডকুমেন্টারি। অনেক ভাল ভাল কথা লিখলাম কিন্তু মুদ্রার অপিঠও আছে। আমি টেকনাফের ভাল চাই, এইজন্য আমার চোখে দ্রষ্টব্য কিছু বিষয় না লিখে পারছিনা। জনাব মোহাম্মাদ রানাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই একটা অসাধারণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। সিরাজগঞ্জ থেকে আগত একজন মানুষ টেকনাফকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ব্যক্তিগত ভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু টেকনাফবাসী আপনারা কোথায়? আপনাদের মধ্যে কি যোগ্য কেউ নেই এই কাজ করার? আপনাদের কি দায়িত্ব নেই টেকনাফকে বিশ্ববাসীর দরবারে ভাল সংবাদ দিয়ে তুলে ধরতে? দয়া করে আপনারা জেগে উঠুন। আপনাদের কাছে আমি এই লিখার মাধ্যমে কিছু খোলাখুলি আবেদন জানাবো। আপনাদের বুঝতে হবে আপনাদের সম্পদ কি? কিভাবে এই সম্পদ বাড়াতে হবে। আমি টেকনাফের অধিবাসী অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি এখানে প্রায় ঘরে অবৈধভাবে আয়ের প্রবনতা আছে। কিন্তু সাময়িক অবৈধভাবে উপার্জিত আয় সম্পদ না। এই আয় আপনাকে স্বস্তি দিবেনা, রাতে আরামে ঘুমাতে দিবেনা। এই আয়ে বানানো অট্টালিকায় আপনাদের অনেকে ঘুমাতে পারছেন না, থাকতে পারছেন না, কি কাজে আসছে? অনেকে এলাকা ছাড়া, এমনকি দেশ ছাড়া হয়ে আছেন। শান্তিতে আছেন? আপনাকে বুঝতে হবে কোথায় শান্তি। প্রিয় টেকনাফবাসি, আল্লাহপ্রদত্ত যে প্রাকৃতিক সম্পদ আপনাদের আছে তা ব্যবহার করুন। আপনারা অনেক অতিথি বৎসল। বাহির থেকে আগত একজন পর্যটক আপনাদের আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ দেখতে আসবেন। তারা আপনাদের অতিথি। তাদের একটু যতœ করুন। তারা অনেক খুশী হবে। আপনার সামান্য আন্তরিক আতিথেয়তা পেয়ে তার মাধ্যমে আরেকজন বেড়াতে আসবে। এইভাবে তাকেও আপনারা আন্তরিকভাবে সেবা দিন, আপনার ব্যবসা থাকলে কিছু বিক্রি করলে তাদের থেকে কিছু কম টাকা নিন। পর্যটন শহরের মানুষের এটাই করা উচিৎ। দেখবেন তারা আরো মানুষ নিয়ে আসবে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসবে, এমনকি পৃথিবীর বিভিন্নদিক থেকে মানুষ আসবে। আপনার ব্যবসা বাড়বে, কমবে না। বৈধ ভাবেই বাড়বে। দেখবেন আপনার মনে প্রশান্তি আসছে, আপনি নিজ বাসায় আরামে ঘুমাতে পারবেন। অথচ আপনি এখন কি করছেন? ভেবে দেখবেন। সবাই করছেন না, শতকরা হিসেবে ১৫-২০%, কিন্তু যারা করছেন না, আপনারা কি বাঁধা দিচ্ছেন? না দিলে তাহলে আপনিও কি দোষী নন? আপনাদেরই আত্মীয় পরিজন এখন মাদকাসক্ত না হয় অবৈধ কাজে যুক্ত। এর থেকে কোন না কোন ভাবে আপনিও ক্ষতিগ্রস্ত। দয়া করে চিন্তা করেন। এর থেকে মুক্তি আপনাকেই পেতে হবে। সমাজে আপনি অনেক ভাল, সবাই আপনাকে মানে। আপনার একটি সুন্দর উপদেশ, মিষ্টি কথা আরো একজনকে ভাল করে দিতে পারে। আপনি ভাল হলে আপনাকে দেখে পাশের লোক ভাল হবে। এভাবে চলুন সবাই আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করি আমরা কি টেকনাফে শান্তিতে বাস করতে চাই? তাহলে নিজের ভালর জন্য পাশের জনকে ভাল হতে বলি। সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। কোন নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, এই সেক্টরের একজন সাধারন কর্মি হিসেবে যা জানি তার আলোকে বলতে চাই বাংলাদেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী,আপনার সেবায় তারা নিয়োজিত। সকল প্রকার বৈধ লেনদেনে তারা আপনাকে সহযোগীতা করবে। আপনার ব্যবসার উন্নয়নে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে সদা প্রস্তুত সবাই। আর এইসকল আর্থিক অথবা অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রচুর স্থানীয় দক্ষ, কর্মঠ ও শিক্ষিত জনবল দরকার। সরকার বা অন্যান্য অনেক সংস্থা পর্যটন শহর হিসেবে টেকনাফের উন্নয়নের জন্য যে বিপুল কর্মযজ্ঞ করছে এবং সামনে আরো ব্যাপকভাবে করবে তার জন্যও অনেক লোকবল দরকার হবে। আপনারা আপনার ছেলেমেয়েদের ভাইবোনদের যোগ্যপ্রার্থি হিসেবে তৈরী করুন। শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগী হোন। প্রশাসনের ব্যাপারে কোন কিছু বলার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা আমার নেই। প্রশাসনে এখন যাঁরা আছেন সবাই অত্যন্ত যোগ্য ও টেকনাফের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা অবশ্যই জানেন একটা পর্যটন শহর করতে কি কি করতে হবে। তারপরও ব্যক্তিগতভাবে কিছু সমস্যাদি চোখে পড়ে এবং যেগুলোর উন্নয়ন করলে একটা যথাযথ পর্যটন শহর হতে সাহায্য করবে তা উল্লেখ করছি- ১. আমি বিভিন্ন দেশের পর্যটন শহরে যা দেখেছি, সেখানে প্রধান চোখে পরার মতো ব্যাপার হল যোগাযোগ ব্যাবস্থা। একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা একটা সাধারন জায়গার চেহারা পরিবর্তন করে দিতে পারে। টেকনাফ শহরের আন্তঃযোগাযোগের রাস্তাঘাট খুবই অপ্রশস্ত। পাশাপাশি দুইটি বড় গাড়ি যাওয়ার উপায় নাই। এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ২. ট্রাফিক সিস্টেম বা কন্ট্রোল আছে কিনা, থাকলেও তা দৃষ্টিগোচর নয়। এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ৩. টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগা উচিত ১ ঘন্টা ৩০ মি। সেখানে এখন লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। ক্লোজডোর সার্ভিস বলতে যা বুঝায় তা একেবারে নেই বললেই চলে। ৪. টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যেতে চেক পোস্টগুলোতে মাঝে মাঝে নিরীহ যাত্রিদের সাথে যে আচরন করা হয় তা সম্মানহানি হবার ভয়ে হয়ত অনেকে মুখ ফুটে কিছু বলেনা। যারা প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে তার ৯৯ শতাংশ যাত্রী নিরাপরাধ বলেই আমরা মনে করি। বাকি ১ শতাংশের জন্য যে হয়রানি বা সময় নষ্ট হয়, এর বিকল্প কোন কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ৫. টেকনাফের বিদ্যুৎ সমস্যা সীমাহীন। এই সমস্যার সমাধান না করলে পর্যটন শহরের আশা দুরাশা হয়ে থাকবে। ৬. পর্যাপ্ত ভাল মানের থাকা ও খাওয়ার হোটেল নেই। টেকনাফের অনেক মানুষের অনেক টাকা আছে। এই ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আসতে পারেন। ৭. সমুদ্র সৈকতে অনেক সামুদ্রিক প্রানির মৃত দেহ পরে থাকে। এগুলো থেকে প্রকট দূর্গন্ধ বের হয়। মানুষ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়াতে আসে। তাই পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। টেকনাফে যারা বাহির থেকে এসে চাকরির কারনে বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাস করেন তারা যখন তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বাহিরে বলেন এখানে নতুন করে কেউ আসার বা থাকার কথা চিন্তা করতে পারেনা। চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন ব্যবস্থাপকরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেকনাফকে পানিশমেন্ট পোষ্টিং হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে হবে। যারা টেকনাফের বহিরাগত, মনে করতে হবে তারাই টেকনাফকে সারা দেশে এমনকি বিদেশে এর প্রচার করবে। তারা যেন ভালভাবে থাকতে পারে তার জন্য আন্তরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহপ্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যেটা তার সাথে টেকনাফের সবথেকে বড় হচ্ছে মানব সম্পদ। টেকনাফের মানুষ অনেক ধার্মিক আর আবেগপ্রবণ। প্রকৃত ধর্মজ্ঞান আর আবেগই প্রয়োজন একটা সুন্দর, মাদকমুক্ত, অন্যায়মুক্ত, আনন্দঘন জায়গা তৈরি করতে। চলুন সকলে মিলে এমন টেকনাফ গড়ে তুলুন যা হবে সকল অন্যায়মুক্ত, শিক্ষিত, আধুনিক পর্যটন শহর। টেকনাফ হবে পৃথিবীতে মানুষের অনুকরণীয় দ্রষ্টব্যস্থান যা দেখে মানুষ যেন বলতে পারে এই হল টেকনাফ এখানে আগে মাত্র কিছু সংখ্যক মানুষের দ্বারা অনেক অন্যায়কাজ হয়েছিল, এখন জনগন তাদের ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও আন্তরিকতা দিয়ে পৃথিবীর একটা সেরা দর্শনীয় ও আনন্দজনক স্থানে পরিনত করেছে। আমরা দেখতে চাই টেকনাফে চাকরিজীবি মানুষরা পানিশমেন্ট পোস্টিং না পেয়ে আধুনিক পর্যটন শহরে প্রাইজ পোষ্টিং পেয়ে ধন্য হবে। টেকনাফবাসি সবাইকে আমার আগাম শুভেচ্ছা কারন টেকনাফকে আপনারাই সেরার আসনে বসাবেন ইনশাল্লাহ। (বি:দ্রঃ- টেকনাফ নিউজ ডটকম ঞবশহধভহবংি ঈড়ীএর সম্পাদক ও প্রকাশক সাইফুল ইসলাম সাইফি ভাই এর অনুরোধ ও অনুপ্রেরণায় আমি টেকনাফের সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছি। আমি যতটুকু দেখেছি সর্বদা হাসিমুখের সাইফি ভাই হচ্ছে এমন একজন মানুষ যাকে টেকনাফবাসি আদর্শ হিসেবে নিতে পারেন। তাঁকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে আমার লিখার বিষয়বস্তুর সাথে তার কোন মতামত এখানে নেই।)

লেখক:মাসুম হোসেন চৌধুরী টেকনাফ

টেকনাফে এমন কিছু আছে- যা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই

মাসুম হোসেন চৌধুরী ♦

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আমি, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সেন্টমার্টিন সফরে এসেছিলাম। ৩ রাত ৪ দিন কাটিয়ে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য চোখে লাগিয়ে যখন ফিরছিলাম টেকনাফ কেয়ারিঘাটে আমাদের জাহাজ ভিড়ার কিছুটা আগে এর কোল ঘেঁষে পাহাড়ের বুক দিয়ে গাড়ি চলছে এই দৃশ্যটা চোখে গেঁথে গিয়েছিল। হয়ত খুব স্বাভাবিক দৃশ্য। অনেকের চোখে এমন কোন ব্যাপার না। কিন্তু মানুষের মন খুব অদ্ভুত। কোন্ জিনিষ আপনার জীবনে কোন্ পরিবর্তন এনে দিবে আপনি হয়ত বুঝতেও পারবেন না। আমার অনেক স্বজন বলেছিল সেন্টমার্টিন ১ দিনের বেশি থাকার জায়গা না। কিন্তু আমরা সেন্টমার্টিন ৪ দিন থেকেছিলাম এবং আর কোনদিন আর হয়ত আসা হবে না এই চিন্তা করে চারদিক ভাল করে লক্ষ্য করছিলাম। ফিরে যথারীতি ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম শাখার চাকরি করতে লাগলাম। কিছুদিন পরে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একটা বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন, তারপর সাক্ষাৎকার দিলাম। ব্যাংকের উর্ধতন ব্যবস্থাপনা পরিষদ সাক্ষাৎকারে আমাকে প্রথমেই বললেন টেকনাফে একটা শাখা হবে আপনি ওখানে শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যাবেন কিনা। সাথেসাথে আমার চোখে ভেসে উঠেছিল নাফ নদীর পাশ দিয়ে পাহাড়ের বুক দিয়ে চলা সেই গাড়িগুলোর দৃশ্য। আমার একিসাথে মনে হল সেই অপার সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান টেকনাফতো দেখা হলো না। কোন্ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ের আড়ালে? কেউ বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা, আমি আরো অনেক কারনের পাশাপাশি সেই অপরূপ সৌন্দর্য আবিষ্কারের জন্য আর কোন চিন্তা না করেই রাজী হয়ে গেলাম। অনেকজনের সাক্ষাৎকার হয়েছিল, যার মধ্যথেকে আমাকে নির্বাচন করা হল। শুরু হল আমার টেকনাফ জীবন। যারা টেকনাফ আসেনি তারা অনেকে আমাকে প্রশ্ন করত টেকনাফে কি পাকা বাড়ি আছে? বিদ্যুৎ আছে? আসলে একটা জায়গায় না আসলে বুঝা যাবে না তার সম্পর্কে। তার উপর টেকনাফ সম্পর্কে ভাল কোন সংবাদ আমরা কোন প্রচার মাধ্যমে দেখিনি। শুধু ইয়াবা, মানবপাচার ইত্যাদিসহ আরো কত কি সংবাদ। আমার মনে প্রশ্ন জাগে- ভাল কোন সংবাদ কেন আসেনা টেকনাফ নিয়ে? টেকনাফের কি কোন ভাল কিছু নেই? কিন্তু কি বিপুল সম্ভাবনা আছে এই টেকনাফের তা কি টেকনাফের মানুষরা জানেন? যদি জানতেন সমাজে চলমান এই বিষফোঁড়াগুলো হতোনা। শুরু করেছিলাম টেকনাফের সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গা নিয়ে কিন্তু লিখতে গিয়ে কি এসে যাচ্ছে? আসলেই বর্তমান টেকনাফ নিয়ে লিখতে গেলে এগুলোই চলে আসে প্রথমে। টেকনাফে আমার প্রায় দুই বছর হতে চলল। তাই আমারও কিছু দায়বদ্ধতা এসে যায়, কি করেছি আমি টেকনাফের জন্য। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি কিছু অবদান রাখতে চাই। কিন্তু আমার পক্ষে কিইবা করার আছে। আমি একজন বেসরকারি চাকরিজীবি মাত্র। কিন্তু কিছু লিখতে তো পারব এর সম্ভাবনা নিয়ে। এভাবে একে একে সবাই কিছু করলে টেকনাফ হয়তো এগিয়ে যাবে। চলুন দেখি কি কি সম্ভাবনা আছে টেকনাফের? পরিচিত মানুষরা বলে -কি আছে টেকনাফের? আমি বলব-কি নেই টেকনাফের? এদেশের সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত পর্যটন শহর টেকনাফের আছে সমুদ্র, নদী,পাহাড়, বন, মেনগ্রোভ বন, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, প্রবাল দ্বীপ সবকিছুর সম্মিলন। কেউ কি বলতে পারবে টেকনাফের মত সব কয়টা প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশের আর কোথাও আছে নাকি? চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করার আমার সুযোগ হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি – না, নেই কোথাও এমন প্রাকৃতিক সম্পদ, যা টেকনাফের আছে। কিছুদিন পূর্বে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ঘুরার সৌভাগ্য হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে বলতে পারি, টেকনাফের অনেক কিছু আছে যা পৃথিবীর অনেক দেশেই নেই। প্রথমে যে দৃশ্যের কথা বলেছিলাম ‘জাহাজ ভিড়ার কিছুটা আগে এর কোল ঘেঁষে পাহাড়ের বুক দিয়ে গাড়ি চলছে এই দৃশ্যটা চোখে গেঁথে গিয়েছিল’ – ঠিক তার বিপরীত ভাবে দেখলে পাহাড়ের বুক থেকে টেকনাফে ঢুকতে কিংবা বের হতে নাফ নদীর দিকে একটু দৃষ্টি দিন। দেখতে পাবেন ‘জালিয়ার দ্বীপ’ৃৃ বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তের মাঝখানে নাফ নদীর বুকে জেগে উঠা দ্বীপ। চারপাশ সবুজ বিস্তৃত, ডিম্বাকৃতির অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সুন্দর্যে ঘেরা একটি ছোট্ট ভুখন্ড এই ” জালিয়ার দ্বীপ” যা ইতিমধ্যে হতে যাচ্ছে একটি আন্তর্যাতিক মানের একটি টুরিষ্ট স্পট। আর নীল জলের শান্ত নাফ নদীতে পালতোলা নৌকা আর জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, অসাধারণ। বিশাল বড় বড় পাহাড়ের টেক, আর পাহাড়ের গা ঘেষা নাফ নদী, দুই এ মিলে টেকনাফ। আমি এখনো যখনি এই পথ অতিক্রম করি দুচোখ ভরে উপভোগ করি এই অপার সৌন্দর্য। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে সমুদ্র আছে। আমি দেখেছি কোথাও ১০০ মিটার, কোথাও আধ কিলোমিটার বা সামান্য কয়েক কিলোমিটার বেষ্টিত সমুদ্র সৈকত, যেখানে হাজার হাজার পর্যটক ভীড় করে আছে। ছিমছাম, অনেক অনেক সুন্দর। কিন্তু টেকনাফের সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার এর সাথে সংযুক্তিসহ কত কিলোমিটার জানা আছে? ১২৫ কিলোমিটার!! পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘ বালির সমুদ্র সৈকতের অংশ টেকনাফের সমুদ্র সৈকত। শুধু কি তাই, এই সৈকত ধরে এখানে মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে কক্সবাজার পর্যন্ত যার একদিকে সমুদ্র আর একদিকে পাহাড়, পাহাড়ের কোলে আবার ঝর্ণাধারা। কি অপুর্ব!! অন্যান্য বিচের সাথে টেকনাফের বিচের পার্থক্য আছে। এর সৌন্দর্য আলাদা, যা না দেখলে বুঝা যাবেনা। সাথে আছে নানাবর্ণের সারিসারি চাঁদ নৌকা। অপরূপ সৌন্দর্য যোগ করে এই নৌকাগুলো। সমুদ্রের বালিয়াড়ি দিয়ে মোটর বাইক বা জীপ নিয়ে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার চলে আসা যায়। এইরূপ অপার সৌন্দর্য উপভোগের সু্যােগ আর কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই। এই দীর্ঘ সৈকতের এমন অনেক অসাধারণ জায়গা আছে যার শুধু একটা অংশ পেলে অনেক উন্নতদেশ সেরা পর্যটন স্পট বানিয়ে ফেলত। মেরিন ড্রাইভের একটা লিংক: যঃঃঢ়ং://ুড়ঁঃঁ.নব/পিঔফঢ়সশজফং০ বাংলাদেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে টেকনাফে যেখানে বন্য হাতি ঘুরে বেড়ায়। প্রায় ১২০০০ হেক্টরের এই জায়গা পশুপ্রেমিদের জন্য একটা আকর্ষনীয় স্থান হতে পারে। টেকনাফের সমুদ্র অসাধারণ হলেও সবুজ বনানিও কম নেই। এখানে আছে বিশাল আর লম্বা গাছের গর্জন বাগান। আছে কুদুম গুহা, ব্রিটিশ আমলের দূর্গ, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। আর টেকনাফের অন্তর্গত সেন্টমার্টিন দ্বীপের কথা নতুন করে বলার কিছুই নেই। টেকনাফ সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিনের প্রবাল দ্বীপ চারদিকে পাথর আর নারিকেল গাছের সারি আর কেয়াবন দ্বীপটিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দান করেছে। স্বচ্ছ নীল জলরাশির তলদেশে প্রবাল বা জীবাশ্ম কোরাল দ্বীপটিকে করেছে আলাদা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। টেকনাফের সাবরাংয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬। বিপুল সম্ভাবনা আছে জেনেই সরকার এগিয়ে এসেছে এখানে কিছু করার জন্য। বিদেশী অনেক বিনিয়োগকারী আগ্রহ প্রকাশ করছে এতে বিনিয়োগ করতে। ১২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে এর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। দেশের এই সর্ব দক্ষিণ সীমান্ত পর্যটন শহর টেকনাফের পর্যটন শিল্পকে বিশ্ব ব্যপী ব্যপক প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে “বিউটিফুল টেকনাফ” নামক ডকুমেন্টারি তৈরী করেন সিরাজগঞ্জ জেলার সন্তান মোঃ মুজিবুর রহমান রানা। ২১ মিনিটের ডকুমেন্টারিতে -সেন্টমার্টিনের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তোলে ধরা হয়েছে। ডকুমেন্টারিটি দেখলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনের বিনোদন স্পট, যাতায়ত, আবাসন ও কেনাকাটার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। একজন পর্যটকের জন্য গাইড বুক হিসাবেও কাজ করবে এ ডকুমেন্টারি। অনেক ভাল ভাল কথা লিখলাম কিন্তু মুদ্রার অপিঠও আছে। আমি টেকনাফের ভাল চাই, এইজন্য আমার চোখে দ্রষ্টব্য কিছু বিষয় না লিখে পারছিনা। জনাব মোহাম্মাদ রানাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই একটা অসাধারণ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। সিরাজগঞ্জ থেকে আগত একজন মানুষ টেকনাফকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ব্যক্তিগত ভাবে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু টেকনাফবাসী আপনারা কোথায়? আপনাদের মধ্যে কি যোগ্য কেউ নেই এই কাজ করার? আপনাদের কি দায়িত্ব নেই টেকনাফকে বিশ্ববাসীর দরবারে ভাল সংবাদ দিয়ে তুলে ধরতে? দয়া করে আপনারা জেগে উঠুন। আপনাদের কাছে আমি এই লিখার মাধ্যমে কিছু খোলাখুলি আবেদন জানাবো। আপনাদের বুঝতে হবে আপনাদের সম্পদ কি? কিভাবে এই সম্পদ বাড়াতে হবে। আমি টেকনাফের অধিবাসী অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি এখানে প্রায় ঘরে অবৈধভাবে আয়ের প্রবনতা আছে। কিন্তু সাময়িক অবৈধভাবে উপার্জিত আয় সম্পদ না। এই আয় আপনাকে স্বস্তি দিবেনা, রাতে আরামে ঘুমাতে দিবেনা। এই আয়ে বানানো অট্টালিকায় আপনাদের অনেকে ঘুমাতে পারছেন না, থাকতে পারছেন না, কি কাজে আসছে? অনেকে এলাকা ছাড়া, এমনকি দেশ ছাড়া হয়ে আছেন। শান্তিতে আছেন? আপনাকে বুঝতে হবে কোথায় শান্তি। প্রিয় টেকনাফবাসি, আল্লাহপ্রদত্ত যে প্রাকৃতিক সম্পদ আপনাদের আছে তা ব্যবহার করুন। আপনারা অনেক অতিথি বৎসল। বাহির থেকে আগত একজন পর্যটক আপনাদের আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ দেখতে আসবেন। তারা আপনাদের অতিথি। তাদের একটু যতœ করুন। তারা অনেক খুশী হবে। আপনার সামান্য আন্তরিক আতিথেয়তা পেয়ে তার মাধ্যমে আরেকজন বেড়াতে আসবে। এইভাবে তাকেও আপনারা আন্তরিকভাবে সেবা দিন, আপনার ব্যবসা থাকলে কিছু বিক্রি করলে তাদের থেকে কিছু কম টাকা নিন। পর্যটন শহরের মানুষের এটাই করা উচিৎ। দেখবেন তারা আরো মানুষ নিয়ে আসবে। সারা দেশ থেকে মানুষ আসবে, এমনকি পৃথিবীর বিভিন্নদিক থেকে মানুষ আসবে। আপনার ব্যবসা বাড়বে, কমবে না। বৈধ ভাবেই বাড়বে। দেখবেন আপনার মনে প্রশান্তি আসছে, আপনি নিজ বাসায় আরামে ঘুমাতে পারবেন। অথচ আপনি এখন কি করছেন? ভেবে দেখবেন। সবাই করছেন না, শতকরা হিসেবে ১৫-২০%, কিন্তু যারা করছেন না, আপনারা কি বাঁধা দিচ্ছেন? না দিলে তাহলে আপনিও কি দোষী নন? আপনাদেরই আত্মীয় পরিজন এখন মাদকাসক্ত না হয় অবৈধ কাজে যুক্ত। এর থেকে কোন না কোন ভাবে আপনিও ক্ষতিগ্রস্ত। দয়া করে চিন্তা করেন। এর থেকে মুক্তি আপনাকেই পেতে হবে। সমাজে আপনি অনেক ভাল, সবাই আপনাকে মানে। আপনার একটি সুন্দর উপদেশ, মিষ্টি কথা আরো একজনকে ভাল করে দিতে পারে। আপনি ভাল হলে আপনাকে দেখে পাশের লোক ভাল হবে। এভাবে চলুন সবাই আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করি আমরা কি টেকনাফে শান্তিতে বাস করতে চাই? তাহলে নিজের ভালর জন্য পাশের জনকে ভাল হতে বলি। সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। কোন নির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নয়, এই সেক্টরের একজন সাধারন কর্মি হিসেবে যা জানি তার আলোকে বলতে চাই বাংলাদেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সহযোগী,আপনার সেবায় তারা নিয়োজিত। সকল প্রকার বৈধ লেনদেনে তারা আপনাকে সহযোগীতা করবে। আপনার ব্যবসার উন্নয়নে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে সদা প্রস্তুত সবাই। আর এইসকল আর্থিক অথবা অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রচুর স্থানীয় দক্ষ, কর্মঠ ও শিক্ষিত জনবল দরকার। সরকার বা অন্যান্য অনেক সংস্থা পর্যটন শহর হিসেবে টেকনাফের উন্নয়নের জন্য যে বিপুল কর্মযজ্ঞ করছে এবং সামনে আরো ব্যাপকভাবে করবে তার জন্যও অনেক লোকবল দরকার হবে। আপনারা আপনার ছেলেমেয়েদের ভাইবোনদের যোগ্যপ্রার্থি হিসেবে তৈরী করুন। শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগী হোন। প্রশাসনের ব্যাপারে কোন কিছু বলার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা আমার নেই। প্রশাসনে এখন যাঁরা আছেন সবাই অত্যন্ত যোগ্য ও টেকনাফের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা অবশ্যই জানেন একটা পর্যটন শহর করতে কি কি করতে হবে। তারপরও ব্যক্তিগতভাবে কিছু সমস্যাদি চোখে পড়ে এবং যেগুলোর উন্নয়ন করলে একটা যথাযথ পর্যটন শহর হতে সাহায্য করবে তা উল্লেখ করছি- ১. আমি বিভিন্ন দেশের পর্যটন শহরে যা দেখেছি, সেখানে প্রধান চোখে পরার মতো ব্যাপার হল যোগাযোগ ব্যাবস্থা। একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা একটা সাধারন জায়গার চেহারা পরিবর্তন করে দিতে পারে। টেকনাফ শহরের আন্তঃযোগাযোগের রাস্তাঘাট খুবই অপ্রশস্ত। পাশাপাশি দুইটি বড় গাড়ি যাওয়ার উপায় নাই। এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ২. ট্রাফিক সিস্টেম বা কন্ট্রোল আছে কিনা, থাকলেও তা দৃষ্টিগোচর নয়। এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ৩. টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগা উচিত ১ ঘন্টা ৩০ মি। সেখানে এখন লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। ক্লোজডোর সার্ভিস বলতে যা বুঝায় তা একেবারে নেই বললেই চলে। ৪. টেকনাফ থেকে কক্সবাজার যেতে চেক পোস্টগুলোতে মাঝে মাঝে নিরীহ যাত্রিদের সাথে যে আচরন করা হয় তা সম্মানহানি হবার ভয়ে হয়ত অনেকে মুখ ফুটে কিছু বলেনা। যারা প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে তার ৯৯ শতাংশ যাত্রী নিরাপরাধ বলেই আমরা মনে করি। বাকি ১ শতাংশের জন্য যে হয়রানি বা সময় নষ্ট হয়, এর বিকল্প কোন কিছু করা যায় কিনা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। ৫. টেকনাফের বিদ্যুৎ সমস্যা সীমাহীন। এই সমস্যার সমাধান না করলে পর্যটন শহরের আশা দুরাশা হয়ে থাকবে। ৬. পর্যাপ্ত ভাল মানের থাকা ও খাওয়ার হোটেল নেই। টেকনাফের অনেক মানুষের অনেক টাকা আছে। এই ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আসতে পারেন। ৭. সমুদ্র সৈকতে অনেক সামুদ্রিক প্রানির মৃত দেহ পরে থাকে। এগুলো থেকে প্রকট দূর্গন্ধ বের হয়। মানুষ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেড়াতে আসে। তাই পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। টেকনাফে যারা বাহির থেকে এসে চাকরির কারনে বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাস করেন তারা যখন তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বাহিরে বলেন এখানে নতুন করে কেউ আসার বা থাকার কথা চিন্তা করতে পারেনা। চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন ব্যবস্থাপকরাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেকনাফকে পানিশমেন্ট পোষ্টিং হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে হবে। যারা টেকনাফের বহিরাগত, মনে করতে হবে তারাই টেকনাফকে সারা দেশে এমনকি বিদেশে এর প্রচার করবে। তারা যেন ভালভাবে থাকতে পারে তার জন্য আন্তরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহপ্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যেটা তার সাথে টেকনাফের সবথেকে বড় হচ্ছে মানব সম্পদ। টেকনাফের মানুষ অনেক ধার্মিক আর আবেগপ্রবণ। প্রকৃত ধর্মজ্ঞান আর আবেগই প্রয়োজন একটা সুন্দর, মাদকমুক্ত, অন্যায়মুক্ত, আনন্দঘন জায়গা তৈরি করতে। চলুন সকলে মিলে এমন টেকনাফ গড়ে তুলুন যা হবে সকল অন্যায়মুক্ত, শিক্ষিত, আধুনিক পর্যটন শহর। টেকনাফ হবে পৃথিবীতে মানুষের অনুকরণীয় দ্রষ্টব্যস্থান যা দেখে মানুষ যেন বলতে পারে এই হল টেকনাফ এখানে আগে মাত্র কিছু সংখ্যক মানুষের দ্বারা অনেক অন্যায়কাজ হয়েছিল, এখন জনগন তাদের ঐকান্তিক ইচ্ছায় ও আন্তরিকতা দিয়ে পৃথিবীর একটা সেরা দর্শনীয় ও আনন্দজনক স্থানে পরিনত করেছে। আমরা দেখতে চাই টেকনাফে চাকরিজীবি মানুষরা পানিশমেন্ট পোস্টিং না পেয়ে আধুনিক পর্যটন শহরে প্রাইজ পোষ্টিং পেয়ে ধন্য হবে। টেকনাফবাসি সবাইকে আমার আগাম শুভেচ্ছা কারন টেকনাফকে আপনারাই সেরার আসনে বসাবেন ইনশাল্লাহ। (বি:দ্রঃ- টেকনাফ নিউজ ডটকম ঞবশহধভহবংি ঈড়ীএর সম্পাদক ও প্রকাশক সাইফুল ইসলাম সাইফি ভাই এর অনুরোধ ও অনুপ্রেরণায় আমি টেকনাফের সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছি। আমি যতটুকু দেখেছি সর্বদা হাসিমুখের সাইফি ভাই হচ্ছে এমন একজন মানুষ যাকে টেকনাফবাসি আদর্শ হিসেবে নিতে পারেন। তাঁকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তবে আমার লিখার বিষয়বস্তুর সাথে তার কোন মতামত এখানে নেই।)

লেখক:মাসুম হোসেন চৌধুরী টেকনাফ

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...