প্রকাশিত: ০৫/০৬/২০১৮ ১০:৪৯ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৮ এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক::
চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে অধরাই রয়ে গেলো টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ি নুরুল হক ভুট্টো। অভিযোগ রয়েছে, এই ভুট্টো বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান আরেক ইয়াবা গডফাদার জাফর আহমদের বাড়িতেই আত্মগোপন করে আছে। কক্সবাজারে কর্মরত ছয়জন টিভি সাংবাদিকের উপর হামলার মামলা, ইয়াবা, মানব পাচারসহ একাধিক মামলা থাকলেও এখনও তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। অজ্ঞাত কারণে বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে নাজির পাড়ার এজাহার মিয়ার ছেলে নুরুল হক ভুট্টোসহ অন্যান্য অপরাধীরা।
অবশ্য গত বছরের ২৯ আগষ্ট বহুল আলোচিত টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং মানবপাচারকারী নুরুল হক ওরফে ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা এবং একাধিক বিভিন্ন কোম্পানির সিম পাওয়ায়। ভুট্টোর দেয়া তথ্য মতে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তার সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ আরো ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
তবে, গত ২৮ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পায় এই ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হক ভুট্টো। টেকনাফ সীমান্তে ভুট্টোর হামলায় ২০১৬ সালের ১৩ মে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন রুবেল, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু, একাত্তর টেলিভিশনের কামরুল ইসলাম মিন্টু ও তাদের তিন ক্যামেরাপারসনসহ ছয় সাংবাদিক। সেই ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনে নেমেছিলেন সংবাদকর্মীরা। এঘটনায় ১৯ ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়। (যার মামলা নং-২৮/১৬)। হামলার শিকার ইন্ডিপেডেন্ট টিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপু বাদি হয়ে হামলার মূলহোতা নূরুল হক ভুট্টোকে প্রধান আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। সেই মামলাগুলোও বিচারাধীন রয়েছে।
নুরুল হক ভুট্টোর বিরুদ্ধে টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ। ভুট্টোর বিরুদ্ধে ইয়াবা, মানব পাচারসহ অসংখ্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়। আবার রীতিমত সে এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। এক সময়কার দিনমজুর ভুট্টো রাতারাতি হয়ে যায় কোটিপতি। ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে ভুট্টো টাকার পাহাড় গড়তে থাকেন। এলাকায় গড়ে তুলেন তার নিজস্ব বাহিনী। অন্যের জমি দখল, নিরহ মানুষদের হয়রানিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন ভুট্টো। ভূট্টোর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ : গেল ৫ জুলাই ভুট্টো বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কিরিছ ও লাঠিসোটা নিয়ে টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে ১৫/২০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ, লোকজনকে মারধর ও কার ভাংচুর করে। এসময় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, দা, কিরিছ ব্যবহারের টেকনাফের কয়েকজন সংবাদকর্মী ছবি তুলতে গেলে তাদেরকে ধাওয়া করেছিল। এছাড়া ভুট্টো বাহিনীর নেতৃত্বে শিলবনিয়াপাড়ার বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত, কালুর বসত বাড়ি, মোটর সাইকেল ভাংচুর ও হাতের আঙুল কেটে নিয়েছিল। একই এলাকার একজনের মাথা ও আরেকজনের কান ও সাবরাং’র এর এক ব্যক্তির হাতের কব্জি কেটে নেয় এবং ২৪ সেপ্টেম্বর অপহরণের শিকার ২ পর্যটক ঢাকা শাহবাগ আশুলিয়া থানার নুরুল হক ভূট্টো বাহিনীর বন্দিদশা থেকে টেকনাফ থানার পুলিশ উদ্ধার করে। তাছাড়া দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার পুতুইন্যার পুত্র মোঃ ইসমাইলকে মাথায় ছুরিকাঘাত’সহ একের পর এক নানান অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংঘঠিত করে আসছিল। এ বাহিনীর আয়ত্তে রয়েছে ইয়াবার বিরাট সিন্ডিকেট। একদিকে ইয়াবার অবৈধ টাকা, অন্যদিকে অস্ত্রধারী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এ যাবত ভূট্টো বাহিনীর প্রধান নুরুল হক ভূট্টোর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ মার্চ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে টেকনাফ থানায় ১০৪৪ নং জিডি, ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী হামলায় ঘটনায় টেকনাফ থানায় ১০৯০ নং জিডি দায়ের করা হয়। ঈদের নামাজ শেষে ভূট্টো বাহিনী প্রকাশ্যে গুলিতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকার প্রবাসী দুদু মিয়ার কন্যা নিহা মনি (৪) নামে এক শিশু কন্যার চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ১৯/৪২৫ নং মামলা, টেকনাফ থানায় ২০১৩৯পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় বিজিবির ১৩১/৪২ মামলা, নাজিরপাড়ার সর্দার মৃত শেখ আহমদ সিকদারের ছেলে নজির আহমদ সন্ত্রাসী কায়দায় ভাড়াটে সন্ত্রাসী ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ মে ৫৩/৩৬০ নং মামলা, ২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ১৩ নং মামলাসহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ভুট্টোর অপকর্ম এখানেই শেষ নয়, ভুট্টোর সঙ্গে তার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আপন ভাই নুর মোহাম্মদ মংগ্রী। তাদের সহযোগী হয়ে নিরীহ মানুষের উপর হামলা ও জমি দখলের সহযোগিতা করেন, ভূট্র্াের ভাগিনা বেলাল প্রকাশ ইয়াবা বেলাল, আবছার প্রকাশ কুপা আবছার, কামাল প্রকাশ বুলেট কামাল। বেলালের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ র‍্যাবের হাতে ১০ হাজার ইয়াবার মামলা টেকনাফ থানায় মানি লন্ডারিং মামলাসহ ৫টি মামলা রয়েছে। কামালের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হামলাসহ ৪টি, আবছারের বিরুদ্ধে ৮টি, নুরুল আবছার খোকনের বিরুদ্ধে ৫টি ভূট্টোর আরেক ভাই নুর মোহাম্মদ মংগ্রীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিসহ ৬টি মামলা রয়েছে। এতো মামলা থাকার পরেও তারা সবাই প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরাঘুরি করছে।
তাদের বিরুদ্ধেও টেকনাফ থানায় ইয়াবা ব্যবসা এবং মানবপাচারের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে বহাল তবিয়তে থাকায় জনমনে নানান প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে। এই শীর্ষ ইয়াবা গডফাদারকে দ্রুত ক্রসফায়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বাথরুমে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতকের ঠাঁই হল নার্স মিনারার কোলে

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া ২ দিনের ফুটফুটে নবজাতককে দত্তক নিলেন ...

ঈদগাঁওতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইউপি নির্বাচনে কারসাজি ও দুর্বৃত্তায়ন সহ্য করা হবেনা

আতিকুর রহমান মানিক, কক্সবাজার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেছেন, দীর্ঘ আট বছর পর ...