প্রকাশিত: ২৭/১০/২০১৮ ৭:৩৬ এএম

আবাসিক ভবনে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে কয়েক বছর ধরে। গত চার বছরে দেশে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার বেড়েছে পাঁচগুণ। চাহিদা বাড়ায় বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। ফলে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে মজুদ করে এই ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার বেচাকেনা বেড়েছে। বেশিরভাগ দোকানি বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই এ ব্যবসা করছে। এলপি সিলিন্ডার এখন পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানির অনেকেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনারও অনুমোদন নেই। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতিকারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘনবসতিপূর্ণ বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরণের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। ফলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।

বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত চার বছরে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি পাঁচগুণ বেড়েছে। গত অর্থবছরে দেশে আমদানি করা ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৮টি এবং দেশে তৈরি ১১ লাখ চার হাজার ৩৪৫টি এলপিজি সিলিন্ডার বাজারাজাত করা হয়েছে। ৫০ লাখের বেশি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বেচাকেনা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫২ লাখ ৮৯ হাজার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২১ লাখ ৮৫ হাজার এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ লাখ সিলিন্ডার। বর্তমানে লাখ লাখ সিলিন্ডার বিক্রি হলেও সারাদেশে এলপিজি সিলিন্ডার মজুদের জন্য সব মিলিয়ে মাত্র ৬ হাজার লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আবার লাইসেন্স নবায়ন করেনি। বেশিরভাগই লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করছে। আবার ৪০টি মজুদের লাইসেন্স নিলেও শত শত মজুদ রেখে বিক্রি করছে।

সম্প্রতি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) টাঙ্গাইল জেলায় অভিযান চালায়। সংস্থাটির অভিযানে ৯৫ শতাংশ দোকানে বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে সংস্থাটি। অবৈধভাবে এলপিজি গ্যাস বিক্রি রোধে এখন দেশব্যাপী অভিযান চালাবে ডিএনসিআরপি।

ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর সমকালকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৫২ ধারা অনুযায়ী, সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে পরিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে যত্রতত্র বিক্রি করছে। এ কারণে শিগগিরই সারাদেশে অবৈধভাবে এই জ্বালানি বিক্রি বন্ধে অভিযান চালানো হবে। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাজার তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএনসিআরপির টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখার আলম রিজভী সমকালকে বলেন, এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ ও বিক্রি করতে বিস্ম্ফোরক লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। ছোট লাইসেন্সধারী কোনো দোকানি ৪০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করতে পারে না। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলা সদরসহ উপজেলাগুলোতে অভিযানে দেখা গেছে, ৯৫ শতাংশ দোকানে লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। পুরো জেলায় দুটি প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স পাওয়া গেছে। কিন্তু তারা আইন ভঙ্গ করে ২০০ থেকে ২৫০ সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করছে বলে দেখা যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এ পণ্য সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। তিনি বলেন, বড় কোম্পানিগুলো লাইসেন্স নিয়েই এলপিজি সিলিন্ডার বাজারে ছাড়ছে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে ডিলারদের লাইসেন্স আছে কি-না বিষয়টি দেখছে না কোম্পানিগুলো।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাড়া-মহল্লা, অলিগলির ছোট ছোট দোকান, খুচরা বাজারের দোকান, আবাসিক এলাকার দোকানগুলোতে যত্রতত্র ফেলে রেখে বিক্রি করছে এলপিজি সিলিন্ডার। এসব দোকানদার বেশিরভাগই বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নেননি। তা ছাড়া তদারকির অভাবে ঝুঁকি জেনেও দোকানিরা সনদ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রেললাইনের পাশে ভাসমান দোকানি মোশাররফ হোসেন। তিনি রাস্তার কিছু অংশ নিয়ে দোকান বসিয়ে বিক্রি করছেন চা-পান। এই দোকানে আগুনের চুলার পাশে এবং রাস্তায় রোদের মধ্যে ফেলে তিনি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। চায়ের দোকানে কীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এই সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন যে, বৈধভাবেই এ ব্যবসা করছেন তিনি। সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির জন্য বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না এবং ডিলারও তাকে অবহিত করেননি। মোশারেফ হোসেনের মতো অনেক খুচরা এলপি গ্যাস বিক্রেতা আইন না জেনেই ব্যবসাটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এ জ্বালানির যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই এসব দোকানে। আবার বিস্টেম্ফারক পরিদপ্তরের সনদ নেওয়ার তোয়াক্কা করছেন না তারা। বেশিরভাগ দোকানি ব্যবসা পরিচালনার সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স নিলেও ১০টির বেশি সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রির ক্ষেত্রে বিস্ম্ফোরক সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব দোকানে ২০টি থেকে শতাধিক সিলিন্ডার মজুদ রেখে বিক্রি করলেও সনদ নেই। এক দোকানে নানা ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাসবোঝাই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও চা ও পানের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, সিমেন্ট, মনোহরি ও মুদি সামগ্রী বিক্রির দোকানেও এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।

দেশে সাধারণত উৎপাদনকারীর কারখানা থেকে ডিলাররা সিলিন্ডার ক্রয় করে। এরপর ডিলাররা খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরাসরি ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার পৌঁছায়। এক্ষেত্রে উৎপাদনকারীরা ডিলারদের কাছে সিলিন্ডার সরবরাহের ক্ষেত্রে বিস্টেম্ফারক পরিদপ্তরের সনদের বিষয়টি যাচাই করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। যদিও বিস্টেম্ফারক আইন ১৮৮৪-এর অধীনে গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা-২০০৪-এর ৬৯ ধারা অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া অনধিক ১০টি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদ করা যাবে। তবে বিধির ৭০ ধারা অনুযায়ী, এসব সিলিন্ডার মজুদ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে। এলপিজি স্থাপনা প্রাঙ্গণে ধূমপান, দিয়াশলাই বা আগুন লাগতে পারে এমন কোনো বস্তু বা সরঞ্জাম রাখা যাবে না। মজুদ করা স্থানের কাছে আলো বা তাপের উৎস থাকা চলবে না। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে চায়ের দোকানে চুলার পাশে মজুদ রেখে কিংবা সিগারেটের দোকানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার।

বিস্টেম্ফারক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্টেম্ফারক পরিদর্শক মো. সামসুল আলম সমকালকে বলেন, খুচরা দোকানে ১০টি সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে। আর এর বেশি বিক্রি করতে হলে প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বিস্টেম্ফারক পরিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। সনদ ছাড়া ব্যবসা সম্পূর্ণ বেআইনি। বর্তমানে এলপিজি গ্যাস বিক্রির ক্ষেত্রে সারাদেশে ছয় হাজার সনদ আছে। তিনি বলেন, সনদ না নিয়ে বিক্রি করলে বিষয়টি আইন অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন দেখার কথা। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ কর্মকর্তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তরের জনবল কম থাকায় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তবে ডিএনসিআরপি অভিযান পরিচালনা করলে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে বিস্ম্ফোরক পরিদপ্তর। সামসুল আলম বলেন, পণ্য বিক্রি বাড়াতে কোম্পানিগুলোর অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। যদিও তাদের লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলপিজির মতো দাহ্য পদার্থ মজুদের জন্য বিশেষ গুদামঘর থাকতে হবে। তা না হলে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পরিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরে বিস্ম্ফোরক পদার্থে যেসব দুর্ঘটনার তদন্ত হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে দুর্ঘটনা। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বদুরপাড়ায় বিভিন্ন কোম্পানির ৩৩ থেকে ৩৫ কেজির বড় এলপি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার থেকে ১২ কেজির সিলিন্ডারে এলপি গ্যাস রিফিল করার সময়ে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হয়ে ভবনের পেছনে কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাস ভরার কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের একজন সিগারেট জ্বালানোর উদ্দেশ্যে দিয়াশলাইর কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিবিস্ম্ফোরণের সৃষ্টি হয়। এতে ভবনের সম্পূর্ণ অংশ বিধ্বস্ত হয় এবং চারজন কর্মচারী গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন। আরেক তদন্তে, গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চৌমুহনী বাজারে একইভাবে বড় সিলিন্ডার থেকে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল বা ভর্তি করার সময় রুমের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কক্ষে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় আগুনে ভবনের তিনটি রুম বিধ্বস্ত হয় এবং কর্মচারী গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় জামালপুর প্রত্যন্ত অঞ্চলে এফএস কসমেটিকস কোম্পানির কারখানায় শর্টসার্কিটের কারণে আগুন ধরে এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরণ হয়। এতে এক নারী শ্রমিক ঘটনাস্থলে মারা যান। আরও ১০ শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হন। এ ছাড়া গত জুনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একটি বাজারে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্টেম্ফারণে ৬টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। গত সেপ্টেম্বরের রাজধানীর কাফরুলে মনা মিয়ার চায়ের দোকানে ধূমপান শেষে সিগারেটের অংশ ছুড়ে ফেলায় আগুনের ফুলকি গ্যাস সিলিন্ডারে পড়ে বিস্টেম্ফারণ হয়। এতে চারজন দগ্ধ হয়। গত ৪ অক্টোবর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরণে শিশু শিক্ষার্থীসহ ছয়জন আহত হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমুরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ম্ফোরণে শিশুসহ একই পরিবারের তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। এভাবে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এর পরেও টনক নড়ছে না সংশ্নিষ্টদের। তা ছাড়া এলপিজি সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা ও সিলিন্ডার পরীক্ষার দায়িত্ব কোম্পানিগুলো। কিন্তু এগুলো নিয়মিত পরীক্ষা না করায় ত্রুটি থেকে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা শিবিরে ইফতার যে রকম

আব্দুল কুদ্দুস,প্রথমআলো রোববার বিকেল চারটা। কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক থেকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ঢোকার রাস্তায় দেখা ...

লাইসেন্সের কোন কাজ নেই, টাকা দিলে লাইসেন্স লাগে না!- উখিয়ার ব্যবসায়ী সাদ্দাম

বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই কথিত লেভেল লাগিয়ে অবৈধভাবে ব্যাটারির পানি বিক্রি করেন উখিয়ার সাদ্দাম মটরসের স্বত্তাধিকারী ...