প্রকাশিত: ১১/০৫/২০১৯ ১০:০১ এএম

ওবাইদুল হক চৌধুরী, সৌদি আরব থেকে ফিরে::
প্রায় চার হাজার বছর আগে জমজমের পবিত্র কূপের প্রকাশ ঘটেছিল। যখন মহান আল্লাহর আদেশে সুদূর ফিলিস্তিন থেকে জনমানবহীন মরুময় মক্কায় নির্বাসিত হয়েছিলেন হাজেরা (আ.)। তিনি পিপাসায় কাতর শিশু ইসমাঈলের জন্য পানির খোঁজে অস্থির হয়ে সাফা ও মারওয়ায় ‘সায়ি’ (চক্কর) করেছিলেন। সপ্তম চক্করে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের ওপর থেকে একটি শব্দ শুনে তিনি নিচে নেমে আসেন। আর তখনই দেখতে পান, আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে এই অবারিত ঝরনাধারা থেকে রহমতের বারিধারা বর্ষিত হচ্ছে।

জাহেলি যুগে জুরহাম গোত্র খোজায়া গোত্র কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত ও বিতাড়িত হয়ে মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এই কুয়ায় তারা মাটি ভরাট করে দেয়। এর প্রায় সাড়ে চার শ বছর পর স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আবদুল মুত্তালিব স্বীয় পুত্র হারেসকে সঙ্গে নিয়ে তা আবার খনন করেন।

আবদুল মুত্তালিব স্বপ্নে দেখেন, তাঁকে জমজম কূপ খননের জন্য আদেশ দেওয়া হচ্ছে। স্বপ্নের মধ্যেই তাঁকে জায়গাও দেখিয়ে দেওয়া হয়। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তিনি জমজম কূপ খনন শুরু করলেন। এতে দুটি জিনিস আবিষ্কৃত হয়। এক. জুরহাম গোত্র মক্কা থেকে চলে যাওয়ার সময় জমজমের ভেতর তলোয়ার, অলংকার ও সোনার দুটি হরিণ ফেলে গিয়েছিল। আবদুল মুত্তালিব উদ্ধারকৃত তলোয়ার দিয়ে দরজা লাগালেন। সোনার দুটি হরিণও দরজায় ফিট করেন এবং হাজিদের জমজম কূপের পানি পান করানোর ব্যবস্থা করেন।

প্রাচীন আমলে জমজম কূপ এবং কূপ থেকে পানি উত্তোলন
জমজম কূপ আবিষ্কৃত হওয়ার পর কুরাইশরা আবদুল মুত্তালিবের সঙ্গে ঝগড়া করতে শুরু করে। তারা দাবি করে, আমাদেরও খননকাজের সঙ্গে যুক্ত করা হোক। আবদুল মুত্তালিব বলেন, ‘আমি সেটা করতে পারি না। আমাকেই এ কাজের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে।’ কিন্তু কুরাইশরা মানতে চাইল না। অবশেষে ফয়সালার জন্য সবাই বনু সাদ গোত্রের একজন জ্যোতিষী নারীর কাছে যায়। যাওয়ার পথে তারা কিছু বিস্ময়কর নিদর্শন দেখে। এতে তারা বুঝতে পারে যে কুদরতিভাবেই জমজম কূপ খননের দায়িত্ব আবদুল মুত্তালিবকে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিবাদকারী কুরাইশরা পথ থেকেই ফিরে আসে। (ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা. ১৪২-১৪৭)

পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ২০ মিটার বা ৬৬ ফুট, মতান্তরে ২১ মিটার পশ্চিমে মসজিদে হারামের ভেতরেই এ কূপের অবস্থান। প্রায় ১৮ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট চওড়া একটি আয়তক্ষেত্রের মতো কূপটি, যার গভীরতা ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট, মতান্তরে ১২০ বা ১৪০ ফুট। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, এই কূপের ছিল দুটি জলাধার। একটি হচ্ছে খাওয়ার জন্য, অন্যটি অজু করার জন্য। বর্তমানে বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে আট হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। তথ্য সুত্র:ইবনে হিশাম, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা. ১৪২-১৪৭/ উইকপিডিয়া

পাঠকের মতামত

কাবায় শায়েখ সুদাইসের অশ্রুসিক্ত মোনাজাত: ‘হে আল্লাহ ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের বিজয় দান করুন’

বিভিন্ন রঙ ও জাতি এবং বিচিত্র ভাষা, কোনোকিছুই তাদেরকে মগ্ন করতে পরেনি। ইসলামের সৌন্দর্য সমস্ত ...

আজ পবিত্র শবে কদর

পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর আজ শনিবার (০৬ মার্চ)। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের ...

মালদ্বীপে রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে তারাবি পড়াচ্ছেন বাংলাদেশি হাফেজ কামরুল

রমজানে মসজিদে মসজিদে পবিত্র কোরআন খতম মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য। এ জন্য বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি হাফেজদের রয়েছে ...