প্রকাশিত: ১৭/০৩/২০১৮ ৬:১১ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:২০ এএম

নিউজ ডেস্ক::
জার্মানিতে ইসলামি সংস্কৃতির কোনো জায়গা নেই৷’ নতুন সরকার গঠন হতে না হতেই এ কথা জানালেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার৷ একটি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জার্মানির সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে খ্রিস্টান সংস্কার৷ সে কারণেই রোববার এখানে দোকানপাট বন্ধ থাকে৷ প্রতিটি খ্রিস্টান পরবের দিন এখানে ছুটি ঘোষণা হয়৷ বস্তুত, জার্মানি খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি অনুসরণ করেই এতদিন ধরে চলছে৷ সেখানে ইসলামের কোনো জায়গা নেই৷

তবে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, ইসলাম সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলিম নাগরিকদের গুলিয়ে ফেললে চলবে না৷ জার্মানিতে বহু মুসলিম বসবাস করেন৷ তাঁরা জার্মান৷ তাঁরা দেশে স্বাগত৷ কিন্তু তাঁদের ধর্মীয় সংস্কৃতি জার্মান সংস্কৃতি নয়৷

হঠাৎ কেন এ কথা বলতে গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? প্রশ্নটি উঠেছে বহু মহলেই৷ বস্তুত, জোট নিয়ে যখন জলঘোলা হচ্ছিল, তখনই বহু বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, নতুন সরকার তৈরি হলেও তারা অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে৷

গত কয়েকবছরে সরকারের অভিবাসন সংক্রান্ত ভাবনা এবং শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির ফলে দেশে প্রচুর শরণার্থীর প্রবেশ ঘটেছে৷ সেই সূত্রেই জার্মান জনমনে শরণার্থীদের নিয়ে একপ্রকার দূরত্ব তৈরি হয়েছে৷ ইসলামোফোবিয়াও (ইসলামভীতি বা ইসলামবিদ্বেষ বা মুসলিম-বিরোধী মনোভাব) বেড়েছে কয়েকগুণ৷ যার পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডি-র মতো উগ্র দক্ষিণপন্থী দল৷ কয়েকবছর আগেও যাদের কার্যত কোনো অস্তিত্ব ছিল না। গত নির্বাচনে তারা বিপুল পরিমাণ ভোট পেয়েছে এবং সংসদে বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করেছে৷

এমতাবস্থায় জোট সরকারকে প্রতিটি পদক্ষেপই সাবধানে ফেলতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে জনমত যাতে তাদের দিক থেকে একেবারে সরে না যায়৷ দক্ষিণপন্থী মনোভাব তাদের দেখাতেই হবে৷

ঠিক সেই ঘটনাই ঘটছে বাস্তবে৷ বস্তুত, সেহোফার বরাবরই কট্টোর দক্ষিণপন্থী বলে পরিচিত৷ এর আগে ম্যার্কেলের শরণার্থী সংক্রান্ত নীতির বিরোধিতাও করেছেন তিনি৷

ম্যার্কেল বরাবরই বলে এসেছেন, জার্মানিতে সমস্ত ধর্মের মানুষের ঐতিহ্যই রক্ষিত হয়৷ কার্যত তার উলটো সুরই শোনা গেল এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠে৷

সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর বক্তব্যের কোনো সমালোচনা করে কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি৷ মনে করা হচ্ছে, কার্যক্ষেত্রেও সাবধানী পদক্ষেপ করবে নতুন সরকার৷ শরণার্থী প্রসঙ্গে এবং আশ্রয়প্রার্থীদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে যথেষ্টই কঠিন পদক্ষেপ করা হবে৷

এরমধ্যেই একটি নতুন সমীক্ষা প্রকাশ করেছে ব্রস্ট ফাউন্ডেশন৷ তাদের রিপোর্টেও স্পষ্ট, জার্মানিতে গত দু’বছরে ইসলামোফোবিয়া চোখে পড়ার মতো বেড়েছে৷ উদাহরণ দিতে গিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ তুর্কি এসে বসবাস করতে শুরু করেন৷ মূলত কারখানায় কাজের জন্যই তাঁরা আসতে শুরু করেছিলেন৷ এছাড়াও আশপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি থেকেও বহু মানুষ সে সময় জার্মানিতে এসেছেন৷ কখনোই তাদের নিয়ে জার্মান নাগরিকের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি৷

শুক্রবার জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউ’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিন্তু গত দু’বছরে বিশ্বাসহিনতা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে৷ অধিকাংশ জার্মান ইদানীং বলতে শুরু করেছেন মুসলিমদের সঙ্গে একত্রে থাকা সম্ভব নয়৷ যদিও উলটো মতও আছে৷ কিন্তু সে সংখ্যাটা ক্রমশ কমছে৷ পাশাপাশি এএফডি-র মতো দলগুলির সমর্থক বাড়ছে৷ সব মিলিয়ে খুব সুখকর পরিস্থিতিতে নেই জার্মানি মুসলিমরা৷ দেশের শান্তি শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও এএফডি-র মতো দলগুলির উত্থানকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত