প্রকাশিত: ২০/০৭/২০১৮ ৯:০৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৩০ এএম

মোঃ ফারুক ও ইমরান হোসাইন, পেকুয়া:
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের আন্নর আলী মাতবর পাড়ার মিজান উদ্দিন ও সাবিনা আফরোজ দম্পতির মেয়ে তনিমা আফরোজ। আর দশটি শিশুর মত রংচটা ছিলনা তার শৈশব-কৈশোর। বাবা মিজান উদ্দিনের শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাদের পরিবারে দেখা দেয় আর্থিক দৈন্যদশা। স্বামীর অসহায়ত্ব গোছাতে মা সাবিনা আফরোজ কাজ নেন চট্টগ্রামের একটি পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে। তাই কোলের সন্তান তনিমার ঠাই হয় নানারবাড়ীতে। তিনমাস বয়স থেকে আজ অবধি নানারবাড়ীতেই রয়েছে তনিমার।

বাবা মায়ের আদর ভালবাসা বঞ্চিত হলেও তনিমাকে অর্থের অভাব বুঝতে দেয়নি নানা আলহাজ্ব শামসুল আলম চৌধুরী। কিন্তু কঠিন এই পৃথিবীকে বুঝতে শেখতে শুরু করার সাথে বুঝতে শুরু করেন দারিদ্র্যতার কষাঘাত কি জিনিস। যে জিনিসটা বাবা মাকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে তার কাছ থেকে।

এরপরেও নানা সীমাবদ্ধতা রুখতে পারেনি তার এগিয়ে চলা। তার মেধা। পেকুয়া প্রিক্যাডেট স্কুল থেকে পিএসসি ও পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় রেখেছেন মেধার সাক্ষর। উভয় পরীক্ষায় পেয়েছেন এ+। একই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে এ গ্রেড। পরে উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজে। বর্তমানে এই কলেজের ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত সে।

বর্তমানে তার নানা আলহাজ্ব শামসুল আলম চৌধুরীর একান্ত সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা জয় করে পড়াশোনায় মেধার সাক্ষর রেখে যাচ্ছে তনিমা আফরোজ। সম্প্রতি কোডেক নামের একটি এনজিও সংস্থার তরুণ আলো প্রকল্প আয়োজিত উগ্র ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় দেশ সেরা হয় সে। এ এনজিও সংস্থা তার এ রচনা পৌঁছে দেন জাতিসংঘের সদর দপ্তরে। সেখানে বিচার বিশ্লেষণ শেষে তার ডাক পড়েছে জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে।

বৃহস্পতিবার (১৯জুলাই) দুপুরে তার সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। এসময় সে বলেন, আমার ক্ষুদ্র জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। জীবন আমার কাছ থেকে অনেককিছু কেড়ে নিয়েছে। দিয়েছে এই অসামান্য সম্মান। তাই আমি মহান সৃষ্টিকর্তা, আমার প্রাণপ্রিয় নানা ও শিক্ষক সহ তরুণ আলোর কাছে কৃতজ্ঞ। সকলের ভালবাসায় আমি মানবজাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই। সেইসাথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সারাজীবন মা বাবার পাশে থেকে তাদের সেবা করে যেতে চাই।

এব্যাপারে কোডেক তরুণ আলো প্রকল্পের পেকুয়া শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় চলতি মাসের ৮তারিখ একযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও কক্সবাজার জেলার ১০টি কলেজের বাছাইকৃত ৫০-৬০জন ছাত্রছাত্রী জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।

কোডেক তরুণ আলোর কক্সবাজার জেলা শাখার ম্যানেজার কামরুল ইসলাম বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি এনজিও সংস্থা জিচারফ রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজনের উদ্যোগ নেন। তারা ১হাজার শব্দের রচনা ও এর সারাংশের এক মিনিটের ভিডিও চিত্র নির্মাণ করে তাদের কাছে প্রেরণের জন্য মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালনাধীন ইলমা, কোস্ট ট্রাস্ট, ইফসা, রূপান্তর ও কোডেক এনজিওকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এতে প্রতিযোগীদের রচনা ও ভিডিও চিত্র পর্যালোচনা করে তনিমাকে দেশ সেরা ঘোষণা করা হয়।

তিনি আরো বলেন, এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হওয়ায় তনিমা আফরোজকে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস এব্যাপারে তনিমা আফরোজকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...