প্রকাশিত: ০৩/০৮/২০১৬ ৭:৪৭ এএম

148802_1নয়াদিল্লি: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উত্তাপ কোনোভাবেই থামছে না। বিক্ষোভে অংশ নেয়া স্বাধীনতাকামীদের ওপর পেলেটগান বা ছররা বন্দুক দিয়ে গুলি করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ওই গুলিতে আহত হয়ে অনেকেই দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন। আর এ কারণেই বিদ্রোহ আরো কঠিন আকার ধারণ করেছে।

কারফিউ এবং পুলিশের ব্যাপক বাধার মাঝেও মঙ্গলবার টানা ২৪ দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরীরা।

বন্ধ রয়েছে সকল দোকানপাট-যানচলাচল। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে পাড়া মহল্লার সকল মুদি দোকানগুলোও। পাশাপাশি সকল গলিপথের দেয়াল এবং দোকানের বন্ধ সার্টারগুলোতে স্বাধীনতার দাবি সংবলিত বিভিন্ন স্লোগান লেখা দেখা যায়।

ইংরেজীতে লেখা এই দেয়ালিকা (‘We want Freedom’, ‘Freedom for all, ‘Freedom for Jammu Kashmir’, ‘Hum Kya Chata Hain Azadi’) চলমান আন্দোলনকে নিয়ে গেছে স্বাধীনতার দাবিতে করা একদফার আন্দোলনের পর্যায়ে। এমনকি অনেক স্থানে ইংরেজীতে ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’ লেখাও চোখে পড়ছে।

প্রতিটি মহল্লা এবং অলিগলিতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের সাথে কিছুক্ষণ পরপরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

পুলিশের সিনিয়র এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় তাদের এই কড়াকড়ি অবস্থান অব্যাহত থাকবে।

এরমাঝেই অবরোধ পালনকারীরা তাদের কর্মসূচি ৫ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত করার ঘোষণা দিয়েছে। তাছাড়া তাদের অবরোধ কর্মসূচি প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টার পরে কিছুটা শিথিল করা হবে জানিয়েছে তারা।

গত ৮ জুলাই হিজবুল মুজাহিদিনের কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে সোমবার পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ৬০ জন ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দ্য পাকিস্তান টুডে।

তবে সোমবার পর্যন্ত এ সংখ্যা ৫১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুস্থান টাইমস। চলমান এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এ পর্যন্ত ৫৬০০ জন আহত হয়েছে জানিয়েছে তারা।

ভারত শাসিত কাশ্মীরে পুলিশের গুলিতে হিজবুল মুজাহিদিনের এক কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর মূলত নতুন করে এই বিক্ষোভ শুরু হয়।

গত ৮ জুলাই কাশ্মীর সীমান্তে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের শীর্ষ নেতা বুরহান মুজাফফার নিহত হয়।

এ ঘটনায় কাশ্মীরের দক্ষিণে সাধারণ জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ জনতার সংঘর্ষ হয়। পরে শ্রীনগরের বেশ কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

২১ বছর বয়সী এই বুরহান ওয়ানি প্রথম হিজবুল কমান্ডার, যিনি কালশনিকভ হাতে নিয়ে ছবি তুলে সেটা সামাজিক সাইটে পোস্ট করেছিলেন। তরুণ প্রজন্মের একটা অংশের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তার প্রচুর ফলোয়ার ছিল ওইসব সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর ঘটনায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইটে বলেছেন, ‘বুরহান সামাজিক মাধ্যম দিয়ে যতজনকে না প্রভাবিত করতে পেরেছে, তার থেকে অনেক বেশি মানুষকে সে আকৃষ্ট করতে পারবে কবর থেকে।’

টানা অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে কাশ্মীর বিতর্কে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রবীণ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি লিখে তিনি কাশ্মীরে তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন–এবং বলেছেন কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতেই এটা দরকার।

হুরিয়তের এই নেতা একই ধরনের চিঠি লিখেছেন ই ইউ, সার্ক, আসিয়ানের মতো জোটকে–এবং বেজিং ও তেহরানকেও।

তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকরণের এই চেষ্টা এখন সফল হওয়া কঠিন–এবং কাশ্মীরে গণভোটের দাবিও ভারত কোনো মতেই মানবে না।

হুররিয়াত নেতা গিলানির ওই চিঠির পরই তাকে সহ তার দলের আরো জনকে গৃহবন্দী করে রেখেছে প্রশাসন।

কাশ্মীরের চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যেভাবে ভারতীয় বাহিনী অতিরিক্ত এবং অবৈধভাবে বলপ্রয়োগ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘কাশ্মীরের সাহসী মানুষ যখন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর, তখন এই দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে ভারত তাদের রুখতে পারবে না।’

কাশ্মীরের বিদ্রোহী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, ইয়াসিন মালিক প্রমুখকে গৃহবন্দী করে রাখায় ভারত সরকারের নিন্দা করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। ভারত জম্মু-কাশ্মীরে মানবিধাকার লঙ্ঘন করছে বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, বিতর্কিত পেলেটগান বা ছররা বন্দুকের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেলেব্রেটিদের ছবি ব্যবহার করে অনলাইনে চালানো একটি ক্যাম্পেন রীতিমত ভাইরাল হয়ে উঠেছে।

এই অভিনব ক্যাম্পেন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কাশ্মীরে সাম্প্রতিক অস্থিরতার সময় এই পেলেট গান বা ছররা বন্দুক ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে আর গোড়া থেকেই এই বন্দুক তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তবে ভারতীয় পার্লামেন্টে এই বন্দুককে প্রাণঘাতী অস্ত্র নয় বলে দাবি করা হলেও এই বন্দুকের কার্ট্রিজ থেকে চারিদিকে ছিটকে পড়া অসংখ্য ছররা বিক্ষোভকারীকে খুব ভালোভাবেই ঘায়েল করছে।

এই বন্দুক হাঁটুর নিচে লক্ষ্য করে চালানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী অবশ্য বলছে, পেলেট বন্দুক অনেক ভাল আর বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতেও এর জুড়ি নেই। তবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।

হিন্দুস্থান টাইমস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য ডন ও ডেইলি পাকিস্তান অবলম্বনে

পাঠকের মতামত