প্রকাশিত: ০৪/১১/২০১৬ ৬:৫৭ এএম

icon-bpl-md20161104012618স্পোর্টস ডেস্ক::

এবারের বিপিএলে প্লেয়ার ড্রাফটের আগেই ঠিক হয়ে যায় কোন আইকন কোন দলে খেলবেন। শুরুর দিকে চিন্তা ভাবনা করা হয় আইকন প্লেয়ার না রেখে তাদের এ প্লাস শ্রেণিতে রাখার। পরে এই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। আইকনদের প্লেয়ার ড্রাফটে তোলা হয়নি। বরং তাদের পছন্দ মত দল বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আইকন হলেও সব আইকনই সমান মূল্য পাচ্ছেন না।

সাকিব আল হাসান (ঢাকা ডায়নামাইটস)
বিপিএলে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। গতবার রংপুর রাইডার্সে খেলা সাকিবকে এবার দলে নিয়েছে  ঢাকা ডায়নামাইটস। অনুমিতভাবেই অন্য আইকনদের চেয়ে তাকে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। বিপিএলের চতুর্থ আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক ৫৫ লাখ টাকা পাচ্ছেন সাকিব।

ক্রিকেট বিশ্বের সব ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ফ্রাঞ্চাইজিরা তার দিকে নজর রাখেন। অবশ্য গত বছর বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খুব বেশি ভালো করতে পারেননি সাকিব। বল হাতে ১১ ম্যাচে ১৮ উইকেট পেলেও ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি। বিপিএলের প্রথম আসরে ঘরের দল খুলনা রয়েল বেঙ্গলের হয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন।

পরের বছর খুলন ছেড়ে নাম লেখান ঢাকায়। সেবারও দারুন পারফর্ম করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন। বিপিএলের চতুর্থ আসরে আবার পুরনো দল ঢাকার হয়ে তাকে মাঠে দেখা যাবে। সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ড সিরিজে বলে ব্যাটে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন সাকিব। ঢাকার হয়ে নিশ্চয় সেই ফর্মই টেনে আনার চেষ্টা করবেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজা (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
মাশরাফি বিন মুর্তজা নামটাই এখন অনুপ্রেরণার নাম। গত আসরের আগে সাকিব আল হাসানকে না পেয়ে হতাশা ঝরেছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামালের কন্ঠে। কিন্তু  কয়েকটি ম্যাচ যেতে না যেতেই নাফিসা বুঝে গেলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ অন্য ধাতুতে গড়া! সেমিফাইনাল নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি অলরাউন্ডারের অভাববোধ ভুলে যান।

মাশরাফিকে নিয়ে নাফিসা বলেন, ‘আমাদের জন্য ওপরে আল্লাহ, নিচে মাশরাফি। আমরা আজ যে জায়গায় এসেছি, সেটা সম্পূর্ণ উনার কৃতিত্ব। অন্য কাউকে অধিনায়ক করলে হয়ত এক শ ভাগ পেতাম। মাশরাফি আমাদের এক শ ভাগেরও বেশি দিচ্ছেন।’

শেষ পর্যন্ত মাশরাফি নিজেকে নিংড়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন কুমিল্লাকে। মাশরাফি আসলে মাশরাফিই। ভাঙা হাঁটু কিংবা চোট কোন অসুবিধা নেই! মাঠে শতভাগ উজার করে দেওয়া ব্যক্তিটির নাম সবসময়ই মাশরাফি। তাই এবারও কুমিল্লা তাকে ছাড়েনি। চতুর্থ আইপিএলও মাশরাফি খেলবেন এই দলের হয়ে। তার পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

মজার ব্যাপার, প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি। দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা। তার মানে এখন পর্যন্ত বিপিএলের তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক মাশরাফি। এবারও কি আরেকটি শিরোপা উঠতে যাচ্ছে নড়াইল এক্সপ্রেসের হাতে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে।

মুশফিকুর রহিম (বরিশাল বুলস)
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম গতবার খেলেছিলেন সিলেট সুপার স্টারসে। এবার তিনি খেলবেন বরিশাল বুলসে। সিলেটের হয়ে গত আসরটি খুব একটা ভালো কাটেনি মুশফিকুরের। টানা চার ম্যাচে হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল তার দল। ব্যাকফুটে চলে যাওয়া সিলেট মাঝপথে অধিনায়কত্বেও পরিবর্তন আনে।

মুশফিকুর সরিয়ে নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হয় শহীদ আফ্র্রিদির হাতে। কিন্তু পাকিস্তানী অলরাউন্ডারও সিলেটকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারেনি। দল পরিবর্তন হয়ে এবার বরিশালের হয়ে গেছেন মুশফিক। তার নেতৃত্বে সদ্য শেষ হওয়া ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। মাশরাফির মত মুশফিকও একই পারিশ্রমিক অর্থাৎ ৫০ লাখ টাকা পাচ্ছেন।

তবে চ্যালেঞ্জটা মাশরাফির চেয়ে মুশফিকের অনেক বেশি। গত আসরে সিলেটকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি। এবার নিশ্চয় মুশফিক চাইবেন, বরিশালের জন্য বড় কিছু করতে। সেটা হলে বরিশালেরও লাভ, মুশফিকেরও।

তামিম ইকবাল (চিটাগাং ভাইকিংস)
তামিম ইকবালের কাছে বিপিএল এক বিষাদের নাম! বিপিএলের প্রথম আসরে মালিকপক্ষের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপড়েন চরমে পৌঁছেছিল। পরের বিপিএলে অসুস্থতার জন্য সবগুলো ম্যাচ খেলতে পারেননি। তৃতীয় আসরে অনেক আশা নিয়ে  দলের নাম পরিবর্তন করে নতুন পরিচয়ে আসে চিটাগাং ভাইকিংস। নাম পরিবর্তন হলেও ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি ভাইকিংসের। ফাঞ্চাইজি মালিক চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি।

তারপরও তামিম চিটাগাংকে বড় কিছু উপহার দিতে পারেননি। তবে ব্যাট হাতে ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন। নয় ম্যাচে তিন ফিফটিতে টুর্নামেন্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৯৮ রান করেন তামিম। সেই তামিমকে এবারও আইকন হিসেবে বেছে নিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। এবার বিপিএল শুরুর আগে দারুন ফর্মে আছেন চট্টগ্রামের এই ওপেনার। সেই পারফরম্যান্স এখন চিটাগাং ভাইকিংসে সংক্রমিত করলেই হয়। মাশরাফি-মুশফিকদের মত তারও পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

মাহমুদুল্লাহ (খুলনা টাইটানস)
বিপিএল দিয়ে গত আসরে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। অসাধারণ নেতৃত্বগুণে তিনি সাদামাটা দল বরিশাল বুলসকে তুলেছিলেন ফাইনালে। মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্ব সবার নজর কেড়েছিল। যদিও মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে তার দলকে হারতে হয়েছিল।

দলগুলো এবার আইকন বাছাই করার আগে সাকিব  আল হাসান-মাশরাফি বিন মুর্তজার পর সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত তাকে পেয়ে যায় খুলনা টাইটানস। কাগজে কলমে মাহমুদুল্লাহর পারিশ্রমিক দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। আদতে তাকে আরো বেশি দেওয়া হবে! যেমনটি ঢাকা দেবে সাকিব আল হাসানকে!

গত তিন আসরে সেভাবে আলো ছড়াতে পারেনি খুলনা। এবার দলটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। কোচিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ স্টুয়ার্ট ল। উপদেষ্টা করা হয়েছে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল  বাশারকে। অধিনায়কের দায়িত্ব নিশ্চয় পালন করবেন মাহমুদুল্লাহ! নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ময়মনসিংহের এই অলরাউন্ডার খুলনাকে কতটা কতটা কি দিতে পারেন এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।

সৌম্য সরকার (রংপুর রাইডার্স)
তৃতীয় বিপিএল শুরুর আগে সৌম্য সরকারকে ভাবা হচ্ছিল বড় বাজির ঘোড়া। তাই লটারিতে প্রথম ডাকেই রংপুরের ফ্রাঞ্চাইজি সৌম্য ডাকতে ভোলেননি। কিন্তু বিপিএল যত গড়াচ্ছিল সৌম্য আর হতাশা যেন সম্পূরক হয়ে যাচ্ছিল। যাকে ভাবা হচ্ছিল ম্যাচের ভাগ্য গড়ার নিয়ামক, সেই তিনি একের পর এক ম্যাচে হতাশ করে গেছেন রংপুরকে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত আসরে মোট ১২টি ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য। এক ফিফটিতে রান করেছেন ১৭৭। গড় ১৬.০৯। সৌম্য হতাশ করেছে আফগানিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজেও। প্রত্যাশা মাফিক খেলতে পারেননি। টেস্ট সিরিজের দলে থাকলেও খেলা হয়নি। একেবারে অফ ফর্ম বলতে যা বোঝায়, সৌম্য এই মুহুর্তে আছেন সেই অবস্থায়। তবে রংপুরের ফ্রাঞ্চাইজির তার প্রতি আস্থা রয়েছে।

সৌম্যর সামনে সুযোগ থাকছে গত আসরের ব্যর্থতা ভুলিয়ে এবার রংপুরের জন্য কিছু করার। এটা সৌম্যর জন্যও দরকার। এটা হলে লাভবান হবে রংপুরও। তবে মাশরাফি-তামিমদের মত আইকন হিসেবে সৌম্য ৫০ লাখ টাকা পাচ্ছেন না। তার মূল্য ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

সাব্বির রহমান (রাজশাহী কিংস)
ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের আগে সাব্বির রহমানের পরিচয় ছিল ওয়ানডে ও টি২০ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। অবশেষে চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেকে সেই বিশেষজ্ঞ তকমা ঘুচিয়েছেন। তারপরও টি২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপণ সাব্বিরই। গত বিপিএলের সেমিফাইনালে রংপুরের স্বপ্নকে গুঁড়িয়ে তিনিই বরিশাল বুলসকে ফাইনালে তুলেছিলেন।

তার ৪৯ বলে ৭৯ রানের ইনিংস সবার মনে থাকার কথা। এবার আর বরিশাল নয়, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে। ঘরের দল রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলবেন সাব্বির। চট্টগ্রাম টেস্টে তাকে সমর্থন দিতে পারলে হয়ত বাংলাদেশকে হারতে হতো না। টি২০ তে বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানও সাব্বির। সৌম্যর মত তারও পারিশ্রমিক ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। সাব্বির কি পারবেন পদ্মাপাড়ের দলটিকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরতে?

পাঠকের মতামত