প্রকাশিত: ২৯/০৫/২০১৭ ২:২৯ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:২৫ পিএম

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার ::
সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। এই ঘূর্ণিঝড়টি দৃশ্যমান হওয়ার পর পরই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ‘মোরা’ ধেয়ে আসায় বর্তমানে কক্সবাজারে ৭নং বিপদ সংকেট চলছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ২৯ মে সকাল ১১টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

★সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ, প্রস্তুত ৫৩৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৮৮ টি মেডিকেল টিম★

সভায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রস্তুতি সভায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, আইন শৃংখলা বাহিনী প্রধান, এনজিও কর্মকর্তা, আবহাওয়া কর্মকর্তা, বেতার, রাজনৈতিক তেৃবৃন্দ, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, ঘূর্নিঝড় মোকাবেলায় ২৯ মে সন্ধ্যার আগেই জেলার উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। এই সময় বা রাতেই সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। সাগরে মাছধরা অবস্থায় সমস্ত ট্রলার বা ফিশিংবোটকে কূলে ফিরে আসতে জরুরী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রমজান মাসে রোজাদারদের কথা চিন্তে করে পর্যাপ্ত ইফতার ও সেহরী ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অপরদিকে সমস্ত ইউনিয়ন, উপজেলা ও উপকূলবর্তি এলাকায় মেডিকেল বোর্ড, সিপিবি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, এনজিও সংস্থার সমস্ত সদস্যকে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকা, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ঘলঘাটা, কুতুবজোম, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়ার সমস্ত ইউনিয়ন, টেকনাফের বাহারছড়া, সাবরাং ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়াসহ আরো কয়েকটি উপকূলীয় এলাকা, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদরের পোকখালী, খুরুশকুল এবং সমিতিপাড়ার সমস্ত মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মাইকিংসহ বর্তমানে সচেতনামূলক মিটিং করা হয়েছে। তার মধ্যে জেলার কয়েকটি উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
সভায় কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও উত্তর দিকে সরে বাংলাদেশ উপকূলের ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের নাজমুল হক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মানে হল, সাগরে মাঝারী শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে, যেখানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা ৭ নম্বরের সমান, তবে দিক ভিন্ন। অর্থাৎ, সরাসরি পায়রা ও মোংলার দিকে না এসে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে এই দুই বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি উপকূলীয় এলাকার সমস্ত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হয়েছে। এই ঘুর্নিঝড় সন্ধ্যানাগাদ বা রাতেই আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক তদারকি করবে। কোন অভিযোগ বা জরুরী সমাস্যা থাকলে এই নাম্বারে ০১৭১৭-০৯৪২১৩ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সভায় কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, অতিতে এরকম ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় মানুষের জানমাল নিয়ে অনেক টানাটানি হয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন, র‌্যাব, নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিয়মিত টহল ও তদারকি করার পরামর্শ দেন।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় সচেতনতায় মসজিদে ইমামদের নামাজে বলে দেয়ার আহবান জানান। এবং উপকূলবাসীকে পর্যাপ্ত বাঁচাতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় “মোরা” মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করছে। খাদ্য তথা শুকনো খাবার, ইফতার ও সেহেরীর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কক্সবাজারের সবাইকে সতর্ক ও মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...