প্রকাশিত: ০৫/০৬/২০১৭ ৯:২৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:০১ পিএম

রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লার ইতিহাস, মুঘল ইতিহাসের সঙ্গে স্বতি বিজড়িত, শত শত বছর ধরে এটি তাদের বাসভবন ছিল। ১৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দে, মুঘল সম্রাট শাহজাহান মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত করেন। রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা নামে একটি নতুন রাজকীয় ভবনের স্থাপনা হয়। নদীতীরের দিকে ১৮ মিটার ও শহরের দিকে ৩৩ মিটার উচ্চতার সঙ্গে লাল কেল্লা দৈর্ঘ্যে ২.৪১ কিলোমিটার জুড়ে প্রসারিত রয়েছে।

লাল কেল্লার দুটি প্রধান প্রবেশপথ রয়েছে, দিল্লী গেট এবং লাহোরি গেট।লাহোরি গেটের সম্মুখে চাঁদনী চৌক, এই শহরের সবচেয়ে জনবহুল ও বৈচিত্র্যময় বিপণি বা বাজার।
লাল কেল্লা ভবনটি, লাল কেল্লা ও সেলিমগড় দূর্গের (১৫৪৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত) সমন্বয়ে গঠিত। কেল্লাটিতে দেওয়ান-ঈ-আম বা সর্বসাধারণের সভামন্ডলীর সভাগৃহ অবস্থিত, যেখানে রত্ন খচিত এক মার্বেল-সুশোভিত সিংহাসনে বসে সম্রাট সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতেন। দেওয়ান-ঈ-খাস বা ব্যাক্তিগত দরবারের সভাগৃহ হল এমন একটি স্থান যেখানে ব্যাক্তিগত সভাসদদের প্রবেশাধিকার ছিল। এই সভাগৃহটি মার্বেল দ্বারা নির্মিত এবং তার কেন্দ্রটি ময়ূর সিংহাসন দ্বারা প্রসাধিত ছিল, যেটি চুণী এবং মণি-জহরতের ন্যায় অপরিমেয় মূল্যের রত্ন দ্বারা খচিত ছিল। বর্তমানে, যদিও দেওয়ান-ঈ-খাস হল তার মূল মহিমার শুধুমাত্র একটি ম্লান প্রতিবিম্ব, তবে আমির খুসরুর শ্লোক “পৃথিবীতে যদি কোনও স্বর্গ থেকে থাকে, তবে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই,” – যা তার সাবেক মহিমাকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়। রং মহল বা “বর্ণময় রাজপ্রাসাদ”, মার্বেলের একটি একক খন্ডে তৈরি এক অত্যাশ্চর্য্য পদ্ম-আকৃতির ঝরনা ধারণ করে আছে। এখানে সম্রাটের পত্নী ও প্রণয়িনীরা থাকতেন। লাল কেল্লার মধ্যে নৌবত বা নক্কর-খানা (‘ড্রাম-হাউস) হল এমন একটি স্থান, যেখানে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশিত হত। এটি দেওয়ান-ঈ-আমে অনুপ্রবেশের জন্যও ব্যবহৃত হত। এটি এমন একটি স্থান যেখানে ভ্রমণার্থীরা তাদের হাতি থেকে অবতরণ করতেন। অতঃপর, এটি ‘হাতিপুল’- নামেও পরিচিত। সাম্প্রতিককালে, নক্কর-খানার উপরের তলাটিতে ইন্ডিয়ান ওয়্যার মেমোরিয়াল মিউজিয়াম (ভারতীয় যুদ্ধ-স্মারক যাদুঘর) অবস্থিত। এই স্বৃতিস্থম্বটি ঘিরে থাকা অন্যান্য আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে হাম্মাম বা রাজকীয় স্নানাগার, শাহী বুর্জ – যা শাহজাহানের ব্যক্তিগত কর্ম-অঞ্চল হিসাবে ব্যবহৃত হত এবং রয়েছে মোতি মসজিদ বা পার্ল মসজিদ। এমনকি আজকের দিনেও, রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা মুঘল সাম্রাজ্যের মহিমার এক আলংকারিক স্মৃতিচিহ্ন। লাল কেল্লার বিপরীতদিকে অবস্থিত, জামা মসজিদের নিকটে প্রচুর পার্কিং হিসাবে গাড়ী পার্কিং করা একটি বড় ঝামেলা। এই পার্কিং থেকে দূর্গটির প্রবেশদ্বারে পৌঁছাতে আপনাকে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে। তাছাড়াও, সংযু্ক্ত রাস্তায় ট্রাফিকের খেঁচানি পর্যটকদের রাস্তা পারপারকে কঠিন করে তুলেছে। তাই একটি ট্যাক্সি নিয়ে ভ্রমণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
ছোট্ট চৌকে অবস্থিত মীনা বাজারে অনেক দোকান রয়েছে যেখানে বিভিন্ন হস্তনির্মিত দ্রব্য বিক্রয় হয়; যেমন গহনা-অলংকার, অঙ্কন, কূর্তি ইত্যাদি।
রেড ফোর্টের কাছাকাছি বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থানগুলির মধ্যে রয়েছে গুরুদুয়ারা শীস গঞ্জ সাহিব, জামা মসজিদ, চাঁদনী চৌক মার্কেট, শ্রী দিগম্বর জৈন লাল মন্দির, ফতেহপুরী মসজিদ, বিজয় ঘাট ও শান্তি বন।
লাল কেল্লা সম্পর্কে তথ্যাবলী
সম্রাট শাহজাহান দিল্লীর সবচেয়ে মহত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণ করেছিলেন এবং এটিকে ‘রেড ফোর্ট’ বা ‘লাল কেল্লা’ নামকরণ করেছিলেন। লাল কেল্লায় ১৪-টি প্রবেশদ্বার রয়েছে।স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকার্য ১৬৩৮ সালে শুরু হয় এবং ১৬৪৮ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। রেড ফোর্ট বা লাল কেল্লা নামটি, তার সুবিশাল লাল বেলেপাথরের দেওয়াল থেকে আসে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

লেখক

ওবাইদুল হক চৌধুরী

সম্পাদক

www.UkhiyaNews.Com

 

পাঠকের মতামত

উখিয়াবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে চাই – জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বিবৃতি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রেক্ষাপটে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতি দিয়েছেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ...