প্রকাশিত: ১২/০৭/২০১৮ ৭:১৬ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১২:৫০ এএম

ডেস্ক নিউজ- বিশ্ব এখন বিশ্বকাপ জ্বরে প্রবলভাবে আক্রান্ত। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়; বরং একটু বেশিই আক্রান্ত মনে হয়। ভিনদেশি পতাকা আর জার্সি বিক্রির ধুম পুরো দেশে। প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে, গাছের ডালে, খেত-খাামারে, পুকুরে,খালে-বিলে সর্বত্রই শুধু ভিনদেশী পতাকা আর পতাকা। কে কার চেয়ে বড় পতাকা বানাতে পারে- এ নিয়েও চলছে প্রতিযোগিতা। চায়ের টেবিল, পড়ার টেবিল, খাওয়ার টেবিল, চাকরির টেবিল, পারিবারিক অনুষ্ঠান, বন্ধুদের আড্ডা সর্বত্রই বিশ্বকাপ ঝড়। তর্ক-বিতর্ক। যানবাহন, হাট-বাজার, মাঠ-ঘাট, শহর-গ্রাম সর্বত্রই কেবল বিশ্বকাপ পাগলামি আর আবেগ।

এই উন্মাদনা, পাগলামি, আর আবেগের আগে আমাদের ভাবা উচিত ছিল- আমি একজন মুসলিম। তাই আমার ইসলাম এ ব্যাপারে কি বলে? আমি একজন মুমিন। তাই এই উন্মাদনা আর আবেগের ব্যাপারে আমার ঈমান কি বলে?

ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। তাই মানুষের ফিতরাত তথা স্বভাবজাত চাহিদাকে ইসলাম স্বীকার করেছে অকপটে। মুল্যায়ন করেছে যথাযথভাবে। তবে সেই স্বভাবজাত চাহিদার পাগলা ঘোড়াকে লাগামহীন ছেড়ে দেয়নি; বরং এর লাগাম টেনে ধরে দিয়েছে সীমারেখা। নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তার চৌহদ্দি। তবে মানবের স্বভাবজাত চাহিদাগুলোর অন্যতম হলো খেলাধুলা। এই খেলাধুলাকে ইসলাম নিষেধ করে না। বরং ক্ষেত্র বিশেষ উৎসাহ দিয়েছে সমধিক। সাহাবি হযরত সালমা ইবনে আকওয়া রা. বলেন, একজন আনসারী সাহাবি দৌড়ে খুবই পারদর্শী ছিলেন। দৌড় প্রতিযোগিতায় কেউ তাকে হারাতে পারতো না। একদা তিনি ঘোষণা করলেন, আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে কেউ প্রস্থুত আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এ ব্যাপারে অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দিলেন। এ প্রতিযোগিতায় আমি জয়ী হলাম। (সহীহ মুসলিম সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)

অন্য বর্ণনায় আছ, আবু জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে রোকানা তার পিতা প্রখ্যাত কুস্তিগীর রোকানা থেকে বর্ণনা করেন, একদা রোকানা মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কুস্তি খেলায় অবতীর্ণ হলে তিনি রোকানাকে পরাভূত করেন। (আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৭৮; মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)

এক বর্ণনায় এসেছে, একদা কিছু হাবশি যুবক মদিনা মুনাওয়ারায় সামরিক কলাকৌশল অনুশীলনকল্পে বর্শা ইত্যাদি দিয়ে খেলা করতে ছিলেন। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আম্মাজান আয়শা রা.কে নিজের পিছনে দাঁড় করিয়ে তাদের এ খেলা উপভোগ করাচ্ছিলেন আর তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে বলতেছিলেন, তোমরা খেলাধুলা আব্যাহত রাখ। (বায়হাকী; কানজুল উম্মাল সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি এটা পছন্দ করি না যে, তোমাদের ধর্মে শুষ্কতা ও কঠোরতা পরিলক্ষিত হোক। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)
এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মাঝে মধ্যে (বিনোদন, খেলাধুল কিংবা অন্য কোন বৈধ উপায়ে) হৃদয়কে বিশ্রাম ও আরাম দিবে। (আবু দাউদ সূত্রে মাআরিফুল কুরআন: ৭/৮)
সাহাবি হযরত ইবনে আব্বাসের বাচনিক মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিনের শ্রেষ্ট ও কল্যাণকর খেলা সাতার কাঁটা আর নারীর শ্রেষ্ট ও উপকারি খেলা সুতা কাঁটা। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৭)

বর্ণিত হাদীসগুলোর আলোকে এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলা শুধু জায়িযই নয়; ক্ষেত্র বিশেষ তা প্রশংসিত ও পছন্দনীয় বটে। তবে এর সীমা রেখা ও চৌহদ্দি অতিক্রম করা যাবে না এবং এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। কারণ, প্রত্যেক বিষয়েরই একটি সীমারেখা আছে। যা লংঘিত হলে সাধারণ মুবাহ ও বৈধ কাজ তো অনেক পরের কথা; নেক আমল ও মুস্তাহাব কাজও জায়িজ থাকে না; বরং তা হয়ে যায় আপত্তি ও প্রতিবাদের উপযুক্ত। হাল যামানায় এই খেলাধুলার অবস্থা এই যে, এখন তা আর শুধু খেলাধুলা নয়; বরং তা জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি জীবনের অনেক প্রয়োজন ও বাস্তব সমস্যার চেয়েও তা বহুগুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেন গোটা জাতির এটিই এখন একমাত্র কাজ! ফলে গোটা জাতি ও দেশ খেলাধুলার উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে পড়েছে। অথচ এই সর্বগ্রাসী মত্ততা ও উন্মাদনা যে ব্যক্তিগত, জাতীয় ও পরকালীন জীবনের জন্য কি পরিমাণ ক্ষতিকর তা কেউ তলিয়ে দেখে না।

যখন বিশেষ কোনো খেলা বিশেষত ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ^কাপের আয়োজন হয়, তখন গোটা দেশ ও জাতি এর উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে আল্লাহ-রাসূল, নামায-রোযা, ইবাদত-বন্দেগি ও পরকালকে বেমালুম ভুলে যায়। হয়ে উঠে আল্লাহ ও পরকাল বিমুখ। অথচ খেলাধুলায় এভাবে মত্ত হওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ব্যাপারে রয়েছে বিশেষ সতর্কবাণী ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘এক শ্রেণীর মানুষ এমন রয়েছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে ‘লাহওয়াল হাদীস’ তথা অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে করে ঠাট্টা বিদ্রুপ। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সূরা লুকমান: ৬)

অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাফসীরবিদগণ এর তাফসীর করতে গিয়ে বলেছেন- গানবাজনা, বাদ্যযন্ত্র, অনর্থক গল্প, উপন্যাস ও কিস্যা-কাহিনীসহ যে সকল বিষয় মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে দেয়, সে সবই ‘লাহওয়াল হাদীস’ এর অন্তর্ভুক্ত। (মাআরিফুল কুরআন: ৭/৪)

তা ছাড়া, সময় মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সময়ের গুরুত্ব কারো অজানা নয়। কারো দি¦মতও নেই এ ব্যাপারে। কেবল মাত্র ইসলামই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্ম, মতবাদই সময়ের গুরুত্ব দিয়েছে যারপরনাই এবং উপদেশ দিয়েছে সময়কে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর। যে মুর্হুতটি চলে গেল তা আর ফিরে আসবে না। এ কথাও সবাই বুঝে যে, সময়ের অপচয় মানে জীবনেরই অপচয়।

পাঠকের মতামত