প্রকাশিত: ০৭/০৯/২০১৭ ৭:২০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৫৮ পিএম

পরীমনি। ছবি: আনন্দঅনেক ‘প্রথম’কে সঙ্গী করে জীবন কাটাতে হয়। নিতে হয় অভিজ্ঞতা। তারকাদের জীবনেও এমন প্রথম অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁদের এমন প্রথম পাঁচটি অভিজ্ঞতা নিয়েই প্রথম পাঁচ।

প্রথম ক্যামেরার সামনে

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে আমি নাটকে অভিনয় শুরু করি। যত দূর মনে পড়ে, ২০১৪ সালে ইদ্রিস হায়দারের পরিচালনায় সেকেন্ড ইনিংস ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। নাটকে আমার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন চম্পা। দৃশ্যটা এমন—মা তাঁর বখে যাওয়া সন্তানদের নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। ওই সময় আমি মাকে সান্ত্বনা দিয়ে কিছু কথা বলব। দৃশ্যটি বেশ বড়। পুরো সংলাপ আমার মুখস্থ ছিল সেদিন। ক্যামেরা চলছে। আমি সংলাপ বলে যাচ্ছি। পরিচালক কাটও বলছেন না। পুরো দৃশ্যই একবারে নেওয়া হয়ে গেল। পরিচালকের স্ত্রী ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখছিলেন। দৃশ্য নেওয়া শেষ হলে কাছে এসে ভাবি (পরিচালকের স্ত্রী) আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোকে দিয়েই হবে। একসময় তুই অনেক নাম করবি।’

প্রথম পারিশ্রমিক

শুরুতে পারিশ্রমিক নিয়ে আমার কোনো ভাবনা ছিল না। কাজ নিয়েই ছিল যাবতীয় চিন্তা। মজার ব্যাপার হলো, ইদ্রিস হায়দারের ওই ধারাবাহিকে অভিনয় করেই প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। টানা পাঁচ দিন শুটিং করেছিলাম। শেষ দিন ইউনিটের ম্যানেজার সবাইকে খামে করে টাকা দিচ্ছিলেন। আমাকেও দিলেন একটি। খাম খুলে দেখি ২১ হাজার টাকা। প্রথম পারিশ্রমিক পেয়ে আমার তো খুশি ধরে না! টাকাটা হাতে পেয়ে কী যে এক উত্তেজনা, বলে বোঝানো যাবে না। মনে হচ্ছিল এক কোটি টাকা পেয়েছি। রাতে তো ঘুমই হয়নি সেদিন। রাতে অনেকবার খাম খুলে টাকাগুলো গুনেছি আর ভেবেছি, এই টাকা দিয়ে কী কেনা যায়। পরদিন মার্কেটে গিয়ে নানির জন্য একটি শাল, দুটি শাড়ি আর নিজের জন্য বেশ কিছু জিনিস কিনেছিলাম। বাকি টাকায় মিষ্টি কিনে বন্ধুদের নিয়ে খেয়েছি।

প্রথম অটোগ্রাফ

ভালোবাসা সীমাহীন ছবির দ্বিতীয় ধাপের শুটিং চলছে। এরই মধ্যে আমি রানা প্লাজা ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হই। এ কারণে পত্রিকা, টেলিভিশনে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার বের হয়। এতে পরীমনি নামটি মানুষ জানতে শুরু করে। যা-ই হোক, লালবাগ কেল্লার পাশের একটি রাস্তায় ভালোবাসা সীমাহীন ছবির শুটিং হচ্ছিল। দুটি পিচ্চি দৌড়ে এসে বলে কি, ‘আপু আপু, আমাদের অটোগ্রাফ দাও।’ শুনে তো আমি থ। আমি বললাম, ‘তোমরা আমাকে চেনো?’ বলে, ‘হ্যাঁ, টেলিভিশনে দেখেছি।’ আমি তো অবাক। অটোগ্রাফ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি খুব লজ্জায় পড়েছিলাম। নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল এসে বললেন, ‘লজ্জা পাচ্ছিস? ব্যাপার না, দিয়ে দে অটোগ্রাফ।’ কিন্তু কী লিখব, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছিলাম। মাসুম ভাই বললেন, ‘লিখে দে—বেস্ট অব লাক।’ ওই দিনটির কথা মনে পড়লে একা একাই হেসে দিই।

প্রথম বিদেশ ভ্রমণ

তখনো আমার প্রথম ছবি মুক্তি পায়নি। প্রথম ছবির কাজ শেষ। মহুয়া সুন্দরী ছবির দ্বিতীয় ধাপের শুটিং চলছে। শুটিংয়ের এক ফাঁকে বিমানে করে প্রথম দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলাম। বিমানে উঠে একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল। চার ঘণ্টার ভ্রমণ। বিমানে ওঠার ১০ মিনিটের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভেঙে দেখি, আমি সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে। বিমানে চড়ে প্রথম দেশের বাইরে যাওয়ার রোমাঞ্চের কিছুই বুঝিনি। মজার অনুভূতিগুলো ঘুমই খেয়ে ফেলল, হা হা হা…।

প্রথম বই পড়া

ছোটবেলায় নানা, খালারা গল্প শুনিয়ে আমাকে ঘুম পাড়াতেন। কিন্তু একই গল্প প্রতিদিন শুনতে চাইতাম না। আমার নানি ছিলেন স্কুলশিক্ষক। একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি বই পেয়েছিলেন। সেই বইটি আমাকে দিয়েছিলেন। নাম এখন মনে নেই। ওই সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রেমে পড়ে গেছি। এরপর হুমায়ূন আহমেদের রুমালী আমার খুব প্রিয় বই। তা ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের হিমুর সব কটি বই পড়েছি। এখন শুটিংয়ের কারণে বই পড়ার খুব একটা সময় পাই না।

অনুলিখন: শফিক আল মামুন

পাঠকের মতামত