প্রকাশিত: ০৫/০৭/২০১৮ ৭:২৩ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:০৭ এএম

ডেস্ক নিউজঃ  বাংলাদেশের সরকার ভেবেছিল কোটা-বিরোধী আন্দোলন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হবে। এরপর তিন মাস চলে গেলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই, এখন দ্বিতীয় রাউন্ডের আন্দোলন চলছে।

কোটা-বিরোধী আন্দোলনকারীরা চলতি সপ্তাহে আবার মাঠে নেমেছিল কিন্তু তাদের উপর চড়াও হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। পুলিশ তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য কিছুই করেনি উল্টা বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে। পরবর্তী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করা হলে সেখানেও একই ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনের প্রায় সব নেতাই এখন পুলিশি কাস্টডিতে। আন্দোলন আবার শুরু হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শীর্ষ আন্দোলনকারীদের সবাইকে গ্রেফতারের মাধ্যমে সরকার আন্দোলন পুরোপুরি বন্ধের চেষ্টা করছে এবং এ ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে, সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা ব্যবস্থার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য নতুন একটি আনুষ্ঠানিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, সিনিয়র আমলারা স্বীকার করেছেন যে এই কমিটির তেমন কোন কাজ হয়নি। এর অর্থ হলো বিষয়টাতে ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়নি। কমিটি গঠনের মাধ্যমে কোন আশাবাদ সৃষ্টি হয়নি।

নির্বাচনের বছরে আন্দোলন

বাংলাদেশের চাকুরি পরিস্থিতি নিয়ে আন্দোলন ও অবস্থান ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি চলে আসছে বহু দিন ধরে। স্কুল ও কলেজ শিক্ষকরা একটা বড় গোষ্ঠি এবং তারা এ আন্দোলন করে আসছে বহু দিন ধরে। যদিও এতে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের পদ্ধতি নিয়েও বহু বছর ধরে বিতর্ক রয়েছে। দেশে এটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন চাকরি। এই সেক্টরে চাকরির নিরাপত্তা, দায়মুক্তি এবং অতিরিক্ত আয়ের সুবিধা ও বিশেষ অধিকার এখানে এতটাই বেশি যে, এর কাছাকাছিও অন্য কোন চাকরি নেই। সবাই এ জিনিসগুলো চায় আর তাই পুরো মধ্যবিত্ত শ্রেণী এখানে চাকরির জন্য দ্বারস্থ হয়।

তিন মাস আগে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আন্দোলন শুরু হয়, সেটা শুরু হয়েছিল এক অবরোধ কর্মসূচির উপর পুলিশের হামলার কারণে। তবে ওই আন্দোলন ব্যাপক মাত্রা পেয়েছিল এবং চাকরির বাজার নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রচুর মানুষের সমর্থন পেয়েছিল। আন্দোলনের প্রতি জনসমর্থন বাড়তে থাকায় সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছিল কারণ তারা এ ধরনের আন্দোলনের মুখোমুখি আগে হয়নি।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এবং তার মিত্র দল জামায়াতে ইসলামির গতানুগতিক রাজনৈতিক আন্দোলন দমনে সরকার খুবই সফল। তাদেরকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তাদের নেতা খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন এবং তার জামিন পাওয়ার সম্ভাবনাও খুবই সামান্য। বিএনপি-জামায়াত বলেছে, নীতি হিসেবে তারা আন্দোলন থেকে দূরে আছেন কিন্তু বাস্তবতা হলো ক্ষমতাসীন দলের তুলনায় তারা অনেক পিছিয়ে আছেন এবং চাইলেও তারা এখন কোন আন্দোলন দাঁড় করাতে পারবেন না।

কিন্তু কোটা-বিরোধী আন্দোলনে কোন রাজনৈতিক রং নেই, যে কারণে তাদের মোকাবেলা করা সরকারের জন্য সহজ নয়। তারা এমনকি বিএনপি-পন্থীও নয়। কিছু সরকারি মিডিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের সেভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

তাই দ্বিতীয় দফা আন্দোলন যখন শুরু হয়েছে, সরকার তখন কোন সুযোগ নিতে চায়নি এবং তাৎক্ষণিকভাবে নিজের দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। সব ধরনের সমাবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর যখন অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং বাম আন্দোলনকারীরা সমাবেশ করেছে, সেখানে একজন বাম নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। সরকার কঠোর অবস্থান নেয়ার পরও সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাথে রূঢ় আচরণ করাটা অস্বাভাবিক।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়েছে এবং যদিও ছাত্র আন্দোলন থেমে আছে, কিন্তু যেভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে, তা নিয়ে মানুষ খুশি নয় যদিও রাজনৈতিক বিবেচনায় সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেহেতু বিষয়টা চাকরি নিয়ে এবং যদিও সামাজিক ক্ষোভ অনেক বেশি, কিন্তু সেটা বাহ্যিক চাপ হিসেবে ততটা প্রকাশিত হয়নি।

মধ্যবিত্ত বনাম উচ্চবিত্ত শ্রেণী

এই আন্দোলন এমন একটা সমস্যা যেটা নিয়ে কি করতে হবে সরকার সেটা জানে না। এর সমর্থকরা সাধারণ মানুষ যাদের সাথে কোন রাজনৈতিক দলের কোন লেনদেন নেই। তারা নিরাপদ মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে প্রবেশ করতে চায় এবং সরকারের অনুগত চাকুরে হতে চায় মূলত। কিন্তু গেট অতটা খুলে দেয়ার মতো উদার নয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতি।

মধ্যবিত্ত-শ্রেণীর স্বার্থবিরোধী নীতি বহুদিন ধরে কার্যকর রয়েছে এবং এটা অত সহজে দূর করা যাবে না। তাছাড়া, কোটা আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তারা, জনদাবির কাছে নতি স্বীকারের কোন ইচ্ছাই নেই যাদের। অনেকে মনে করেন কোটা সিস্টেমের দাবি মেনে নেয়ার অর্থ হলো দুর্বলতা দেখানো, যেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই, এটা রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক নেটওয়ার্কের সিদ্ধান্তের বিষয়।

বর্তমান আন্দোলন শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে কারণ আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করার মতো অবস্থায় নেই। আর কোন রাজনৈতিক শক্তিও নেই যারা এর দায়দায়িত্ব নেবে। তবে, সরকার সম্ভবত কোন সুযোগ নিতে চায় না।

তবে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রুপ- শহর-ভিত্তিক, শিক্ষিত, অরাজনৈতিক মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এ রাজনীতির ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে যেটা চাকরির বাজারে তাদের প্রবেশকে সীমিত করে দিয়েছে। যত রাজনৈতিক খেলাই খেলা হোক না কেন, এই ইস্যুটি রাজনৈতিক রূপ না পেলেও সামাজিক পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে। আর সে কারণেই এটা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথার কারণ হয়ে থাকবে।

সমস্যা হলো বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক নীতির শ্রেণী প্রকৃতি, যেটা মারাত্মকভাবে উচ্চবিত্তের দিকে ঝুঁকে আছে এবং মধ্যবিত্তকে যেখানে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। এই বঞ্চিত গ্রুপের মধ্যেই এই আন্দোলনের অনুভূতি লুকিয়ে রয়েছে যারা রাষ্ট্রের ব্যবস্থা থেকে সুবিধা পেতে চায়। তাদেরকে এই সুবিধার আরও বড় অংশ না দেয়া পর্যন্ত এই সমস্যা থেকেই যাবে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...