প্রকাশিত: ০৯/০২/২০১৯ ৬:০১ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব থামার সম্ভাবনা যেন ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। আবারও চটে গিয়ে অভিযোগের তীর ছুড়লেন তিনি।

‘চোরের মায়ের বড় গলা’- তার বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদির তোলা ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ এ ভাবেই নস্যাৎ করে কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীকে ‘দুর্নীতির ঠাকুরদা’ বলে অভিহিত করা মুখ্যমন্ত্রী এবার বলেছেন, মোদি নিজেই দুর্নীতির গুরুঠাকুর।

শুক্রবার উত্তরবঙ্গের সভায় মোদির বক্তব্য শোনার পরে তিনি বললেন, ‘যিনি ও সব বলছেন, তিনি নিজেই তো দুর্নীতির গুরুঠাকুর। কত বড় রাফাল-দুর্নীতি! সব বেরোচ্ছে। এত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত ভারতে জন্মায়নি! এই ব্যক্তি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভাবতে লজ্জা হয়! ওর মুখে জ্ঞানের বাণী শুনব না। ওর সেই অধিকার নেই।’

এ দিন সকালে রাফাল সংক্রান্ত নথি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তৎপর ছিলেন মমতা। এসএমএস চালাচালি হয় রাহুল গান্ধীর সঙ্গে। তাকে জানান, এ নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে একসঙ্গে লড়াই করবেন। বিকেলে মোদির বক্তৃতার বিশদ খবর জেনে মমতার ক্ষোভ আরও বাড়ে। গত দু’দিন ধরে ব্যস্ত ছিলেন বিশ্ববঙ্গ বণিজ্য সম্মেলন নিয়ে। দুপুরে তা শেষ হয়। এবং বিকেলে মোদির বক্তব্যের জবাব দিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।

মোদীকে ‘মাডি’ (কর্দমাক্ত) বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘মাডি-সরকার ভীত, সন্ত্রস্ত। যারা ভয় পায়, তারাই তো ভয় দেখায়! বিরোধীরা একজোট হয়েছে বলে ওরা আরও ভয় পাচ্ছে। ভয় পেয়ে ভূরি ভূরি মিথ্যা বলছেন উনি। আর আমি মুখ খুলি বলে আমার বিরুদ্ধে বেশি আক্রমণ হচ্ছে। কী বলতে চায় ওরা? বিজেপি-তে গেলে সৎ আর বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই দুর্নীতিগ্রস্ত!’

তার হুঁশিয়ারি, ‘মাডি আমাকে চেনেন না। আমি আপাদমস্তক মার খেয়ে, রাস্তায় লড়াই করতে করতে রাজনীতি করেছি। উনি এলেন কবে! ক’দিন রাজনীতি করছেন? ভয় দেখিয়ে আমার মাথা নোয়ানো যাবে না। সব বিরোধী দল এখন একজোট। লক্ষ্য একটাই, মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও।’

সারদার মতো ভুয়া অর্থ লগ্নি সংস্থায় গরিবদের রাখা টাকা মমতা-সরকার ফেরত দেয়নি বলে মোদির অভিযোগের জবাবে মমতা বলেন, ‘একেবারে মিথ্যা কথা। আমরাই বিচারবিভাগীয় কমিশন করে টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছিলাম। প্রতারিতদের ৩০০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। কিন্তু এখন তো বিষয়টি সিবিআইয়ের হাতে। আদালতে বিচারাধীন। কী করে টাকা দেব?’

দিন কয়েক আগে এই সারদা-কাণ্ডেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে আচমকা গিয়েছিল সিবিআই। তার প্রতিবাদেই ধর্মতলায় ধরনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত পাঁচ আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়েছে বলে খবর। এমনকি,তাঁদের পদকও কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে কেন্দ্র ইঙ্গিত দিয়েছে।

এই নির্দেশকে সরাসরি ‘ভুয়া প্রচার’ বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন মমতা। তার জবাব, ‘একেবারে মিথ্যা প্রচার এ সব। এমন কোনও চিঠি পাইনি। তা ছাড়া, ওই অফিসাররা রাজ্য সরকারের অধীনে রয়েছেন। ওদের বেতন আমরা দিই। কিছু করতে পারবে না কেন্দ্র। খেলা এত সোজা নয়!’

এ দিন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি ভাষণেও রাজ্যের অফিসারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কথায়, ‘আমি আমার অফিসারদের জন্য গর্বিত। কারণ, তারা খুব পরিশ্রমী। আমরা কাজ করি। কথা কম, কাজ বেশি।’

এই সূত্রেই কারও নাম না-করে মমতার হুঁশিয়ারি, ‘আগে কাজ করুন, তার পর কথা বলুন যদি কাজ না করেন, কথা বলবেন না।’

কথায় কথায় চা-বিক্রির অতীত টেনে মোদির মানুষের সহানুভূতি টানার চেষ্টাও ব্যর্থ হবে বলে দাবি করেছেন মমতা। মোদীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘চা উনি কোনও দিনই বেচেননি, চা-ও বানাননি। উনি তো ভোটের আগে চা-ওয়ালা, ভোটের পরে রাফালওয়ালা!’

পাঠকের মতামত