প্রকাশিত: ২৩/০৪/২০১৭ ৭:০১ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক:;;
ঢোলের বাদ্য। বলীদের একনজর দেখতে দর্শকের ঠাসাঠাসি। হর্ষধ্বনি, উল্লাস। একের পর এক লড়াই। কিশোর থেকে বৃদ্ধ—ময়দানি লড়াইয়ে শামিল সব বয়সী। এমন আয়োজন তো শুধু চট্টগ্রামেই। সেই ব্রিটিশ আমলে শুরু। শতবর্ষের ঐতিহ্য ধরে চলছে এখনো। বছর ঘুরে এল চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা, যেটি পরিচিত জব্বারের বলী খেলা নামে। আগামীকাল সোমবার থেকে নগরের লালদীঘি ঘিরে শুরু হবে তিন দিনের মেলা, চলবে বুধবার পর্যন্ত। বলী খেলা শুরু হবে মঙ্গলবার (১২ বৈশাখ)। এবার ১০৮তম আসর। ১৯০৯ সালে (১৩০৬ বঙ্গাব্দ) নগরের বকশির হাট এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে যুবকদের সংগঠিত করতে কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেই থেকে প্রতিবছর ১২ বৈশাখ এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এদিকে গতকাল শনিবার থেকেই বসতে শুরু করেছে মেলার দোকানপাট। তবে বৃষ্টির কারণে প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দোকানিরা পড়েছেন বিপাকে। লালদীঘির মাঠে বানানো রিংয়ে খেলবেন বলীরা। গত বছর ৮০ থেকে ৯০ জন বলী অংশ নিলেও দ্বৈরথ ঠেকে কক্সবাজারের রামুর দিদারুল আলম (দিদার বলী) ও উখিয়ার মোহাম্মদ শামসুল আলমের (শামসু বলী) মধ্যে। খেলার মূল আকর্ষণও ছিল এই দুই বলীর লড়াই। দুজনই পেশায় ব্যবসায়ী। বলী খেলেন শখের বসে। গতবার খেলায় শেষ হাসি ছিল শামসু বলীর। ১৫ বারের শিরোপা (দশবার একক ও পাঁচবার যুগ্ম) জয়ী দিদার বলীকে পরাস্ত করেন তিনি। এবার কার ভাগ্যে শিরোপা, শামসু নাকি দিদার? গত বছর নগরের সিআরবিতে পয়লা বৈশাখে সাহাবউদ্দীনের বলী খেলায় জিতে শামসুর বছর শুরু হয়েছিল। এরপর জব্বারের বলী খেলায় বাজিমাত করেন। কিন্তু এবার তো দিদার বলী স্বরূপে ফেরার আভাস দিয়েছেন। বছর শুরু করেছেন সিআরবির বলী খেলায় জয় দিয়ে। দিদারের ভাষায়, দুইবারের হারের জ্বালা মিটিয়েছেন। জানালেন, তাঁর চোখ এখন জব্বারের বলী খেলায়। অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করেছেন। আর অভিজ্ঞতা তো আছেই। অন্যদিকে শামসুও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বলী খেলা শক্তির পাশাপাশি কৌশলেরও। এসব কৌশল আমার ভালোই রপ্ত করা আছে। এত সহজ হবে না আমাকে হারানো। আমি শিরোপা ধরে রাখার চেষ্টা করব।’ খেলায় প্রথম দিকে চলে নতুন আসা ও বয়স্কদের খেলা। ফেবারিটরা খেলেন সেমিফাইনাল থেকে। গতবার প্রথম সেমিফাইনালে শামসু বলী হারান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অলি বলীকে এবং দিদার বলী হারান নারায়ণগঞ্জের হাবিব বলীকে। এরপর দিদার ও শামসুর খেলা চলে পাক্কা ৩১ মিনিট। কিন্তু কেউ কারও পিঠ মাটিতে লাগাতে পারেননি। শেষে বিচারকেরা কৌশল আর খেলোয়াড়ি সুলভ আচরণের কারণে শামসু বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। বৃষ্টিতে মেলার প্রস্তুতিতে বাগড়া শনিবার সকাল ১০টা। আগের দিনের বৃষ্টির রেশ তখনো রয়ে গেছে। আকাশে ঘন মেঘ। এর মধ্যেও লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে মেলার দোকান সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন নানা এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। কেসি দে সড়কের পাশে পুরাতন গির্জা মার্কেটের সামনে বসে ফুলের টবে রং লাগাচ্ছিলেন মনোরঞ্জন পাল। পেছনে বড় পলিথিনের ঢেকে দেওয়া মৃৎশিল্পের নানা সামগ্রী। তিনি এসেছেন ঢাকার সাভারের নবীনগর থেকে। বললেন, আগের দিন রাতে (শুক্রবার) এক ট্রাক মালামাল নিয়ে এসেছেন। সবই নানা ধরনের টব। মনোরঞ্জন মেলায় আসছেন ১২ বছর ধরে। বৃষ্টিতে সমস্যা হবে না? মুচকি হেসে মনোরঞ্জন বলেন, ‘চলে তো এসেছি। আশা রাখছি কাল (রোববার) আকাশ ফরসা হয়ে যাবে।’ তাঁর পাশে নবীনগর থেকে এসেছেন মৃৎশিল্পী সহদেব পাল। তিনি মেলায় আসছেন ৩০ বছর ধরে। বললেন, ‘প্রতিবছর এক–আধটু বৃষ্টি হয়। এতে মেলায় তেমন ব্যাঘাত হয় না। এখনো তো সময় আছে।’ লালদীঘির দক্ষিণ পাড়ে এসে গেছে সিলেটের বেতের সামগ্রী। এ ছাড়া জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে পেট্রলপাম্প ঘিরেও বসে গেছেন মৃৎশিল্পের সামগ্রীর ব্যবসায়ীরা। মাঠে চলছে মঞ্চ বানানোর কাজ। মাঠের এক কোনায় বসে বগুড়া দুপচাঁচিয়া থেকে আসা কারিগরেরা তৈরি করছেন খেলনা। এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটকের সড়কেও বাঁশখালী থেকে ফুলঝাড়ু নিয়ে চলে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, বৃষ্টিতে সামান্য সমস্যা হলেও কাজ থেমে নেই। সবকিছুই নির্ধারিত তারিখে ঠিকমতো হবে। তিন দিনের (২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল) মেলা বসছে আন্দরকিল্লা-লালদীঘির প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে। এই মেলায় পাওয়া যায় ঘরের নিত্য ব্যবহার্য জিনিস থেকে শুরু করে খেলনা, খাবারদাবার এবং নানা প্রয়োজনের সব পণ্য। গৃহিণীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলার। এতে চট্টগ্রামের আনাচকানাচে তো বটেই, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, সিলেট, সাভার, নরসিংদীসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কারিগরেরা তাঁদের জিনিস নিয়ে আসেন। দোকানিদের ভাষ্য, মেলায় আসাটা অনেকটা মায়ার টানে। লাভ-ক্ষতি বড় কথা নয়, চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে বছরে একবার দেখা তো হয়।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...