প্রকাশিত: ১২/১০/২০১৮ ৯:৪৭ এএম

উখিয়া নিউহ ডেস্ক::
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং থেকে বালুখালীর দিকে যেতে মূল সড়কের কয়েকটি স্থানে রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। এসব কাজে জড়িত প্রায় সবাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাজারে বিভিন্ন দোকানপাটে দেখা মেলে রোহিঙ্গাদের। কোথাও কোথাও রোহিঙ্গা বাজার নামেও চালু হয়েছে। রাস্তা মেরামতে জড়িত নূর আলম নামে এক বয়স্ক রোহিঙ্গা জানান, ‘বালুখালীর ক্যাম্পে স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজন নিয়ে তার পরিবার। ত্রাণের টাকায় তার সব চলে না। তা ছাড়া সারাদিন বসে থাকতেও ভালো লাগে না। তাই কাজে নেমে পড়েছি। তবে বাংলাদেশিদের চেয়ে আমরা সস্তা মূল্যে কাজ করি।’ বালুখালীতে মহাসড়কের পাশেই দেখা গেল এক বাংলাদেশির বাড়িতে ঘরের মিস্ত্রির করছেন আবদুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। জিজ্ঞাসা করা হলে আবদুল্লাহ জানান, মিয়ানমারেও তিনি মিস্ত্রির কাজ করতেন। এখানেও বিভিন্নজনের বাড়িতে কম পারিশ্রমিকে কাজ করেও তার ভালোই আয় রোজগার হচ্ছে। পাঁচ সদস্যের পরিবারেরও এখন আর কোনো সমস্যা নেই।’ শুধু নূর আলম আর আবদুল্লাহই নন, কুতুপালং, বালুখালীসহ উখিয়া, টেকনাফে থাকা রোহিঙ্গা বৃদ্ধ, যুবক ও কিশোরদের একটি বড় অংশই এখন কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ছে। কুতুপালং ও বালুখালীর নির্দিষ্ট গণ্ডি পেরিয়েও অনেকেই কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সস্তা শ্রম দিচ্ছেন। তুলনামূলকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এখন কিছুটা শিথিল। এই সুযোগে রোহিঙ্গারা বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। এমনকি কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন স্থানেও চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুতুপালং থেকে বালুখালীতে বেশ কয়েক স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। সেখানে শত শত রোহিঙ্গা কাজ করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও নতুন নতুন বাড়িঘর নির্মাণের কাজ চলছে। বিভিন্ন সাহাস্য সংস্থা কম মূল্যে রোহিঙ্গাদের দিয়েই এসব বাড়িঘর নির্মাণ কাজ করছেন। এ ছাড়াও উখিয়া টেকনাফে বসবাসরত বাংলাদেশিদের গৃহস্থালি ও কৃষিকাজেও দেখা যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের। এতে ওইসব এলাকার দরিদ্র শ্রমজীবী বাংলাদেশিরাও ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশি বেকার জনগোষ্ঠীও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে আসছেন কাজের সন্ধানে। তবে বালুখালীতে বাংলাদেশি সেলিম মেম্বার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘টেকনাফ উখিয়ায় এখন বাংলাদেশিরাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অনেকেই সস্তা শ্রমে রোহিঙ্গাদের কাজ দিচ্ছেন। তারা পুরো কক্সবাজারে চষে বেড়াচ্ছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন বাংলাদেশি গরিব শ্রমিকরা। তারা কাজ পাচ্ছেন না। তাছাড়া রোহিঙ্গারা এখানে বেশ ঐক্যবদ্ধও। কোনো অনিয়ম করলে কিছু বলাও যায় না। বলতে পারেন, কুতুপালং ও বালুখালী এলাকায় বাংলাদেশিরা একটু ভয়েই থাকে।’

জানা যায়, কুতুপালং থেকে বালুখালী হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাজার রয়েছে। এসব স্থানেও এখন রোহিঙ্গাদের আধিপত্য। তারা মাছ, তরকারি, শাক-সবজি বিক্রি করছেন। এমনকি বিভিন্ন গালামালের দোকানও রয়েছে রোহিঙ্গাদের। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা রোহিঙ্গাদের খাবারসহ যে বিভিন্ন সামগ্রী সহায়তা দিচ্ছে তা নিয়েও বাজারে হাজির হতে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের। সস্তা মূলে তা বাংলাদেশিদের কাছে বিক্রি করে টাকা সঞ্চয় করছেন রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের ১০০ থেকে শুরু করে ২০০, ৩০০ ও সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায় দৈনিক মজুরি দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। কম মজুরিতে রোহিঙ্গাদেরই পছন্দ রাস্তা মেরামতের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারদের। এ ছাড়া কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি নির্মাণেও কম মূল্যে বাংলাদেশিরা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। তারা আশ্রয় নিচ্ছেন কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে। ক্যাম্পে থাকা-খাওয়ার অভাবসহ নানা কারণে রাতের অন্ধকারে তারা পালিয়ে যাচ্ছেন। কাজের সন্ধানে তারা কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ছেন। এতে কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রপাড়ে এখন চুরি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। এতে দিন দিন পর্যটকের সংখ্যাও কমে যেতে পারে।

কুতুপালং ক্যাম্পে থাকা আয়েশা খাতুন নামে এক রোহিঙ্গা নারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুদিন আগেও আমাদের পরিচিত তিনটি পরিবার চট্টগ্রাম শহরের দিকে চলে গেছে। তবে তারা কোথায় গেছে জানি না। যদি সম্ভব হয় আমার স্বামীকে একটা কাজের সুযোগ দেন। তিনিও কাজের সুযোগ খুঁজছেন।’ রহিমা খাতুন নামে আরেক নারী জানান, ‘দুই ভাই কক্সবাজার শহরে চলে গেছেন। সেখানে কাজ করে রাতে ক্যাম্পে ফিরে আসেন। ভালোই আয় হচ্ছে। মিয়ানমারে এত টাকা পেত না ভাইয়েরা।’ বালুখালী মহাসড়কে দেখা হয় আবুল হোসেন নামে আরেক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি জানান, ক্যাম্পে ছোট দুটি কক্ষে তিনি স্ত্রী-ছেলে, ভাই-বোনসহ সর্বমোট ১১ জন বসবাস করেন। ভোর হলে তিনি ও তার ভাইয়েরা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। ধরা পড়ার ভয়ে দিনের আলোয় ঘর থেকে বেশি বের হয় না মেয়েরা। কারও কারও বাসাবাড়িতেও রোহিঙ্গা মেয়েরা কাজ করছেন। আবুল হোসেন জানান, তার ভাই হামিদ হোসেন ও ইমাম হোসেন বর্তমানে দিনমজুর হিসেবে খেটে মোটামুটি ভালোই চলছে তাদের সংসার। স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা নারীরাও নানা প্রলোভনে পড়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। কারও কারও বাড়িতে রাতভর অসামাজিক কর্মকাণ্ডও হয়। রোহিঙ্গা নারীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ এসব কাজে জড়িত। আবার অনেক পুরুষ রোহিঙ্গাও মাদক ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েছেন। মিয়ানমারের বিভিন্ন জোন থেকে মাদক এসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারিতে রেখেছেন। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

পাঠকের মতামত

সোনার দামে আবারও রেকর্ড, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা

আবারও সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। প্রতি ভরিতে ...