প্রকাশিত: ২১/০১/২০১৯ ১২:৩৯ পিএম

কমলা লেবু শীতকালীন ফল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফলটি খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও খুবই উপকারি। তবে এর সঠিক ব্যবহার না করলে ত্বকের পক্ষে সেটা ক্ষতিকারকও হতে পারে। কমলা লেবু খাওয়ার পর সাধারণত আমরা খোসা ফেলে দেই। কিন্তু অনেকেই জানি না যে, কমলার খোসায় রয়েছে অসাধারন পুষ্টিগুণ। চলুন জেনে আসি কমলার খোসার কিছু ব্যবহার ও উপকারিতা-

দাঁত ও মুখের ক্ষেত্রে: মুখের দূর্গন্ধ নিয়ে অনেকেই নানা রকম সমস্যায় ভুগেন। কিন্তু এ দূর্গন্ধ দূর করতে অনায়েসেই ব্যবহার করতে পারেন কমলা লেবুর খোসা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা দিনের যেকোনো সময়ে কমলার খোসা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার মাড়িও ভালো থাকবে আর মুখের দূর্গন্ধও অনেকটা দূর হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে কমলার খোসা চিবিয়ে খেলে দাঁত অনেক সাদা ও ঝকঝকে হয়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো ও প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁতের কালো ও হলদে ভাব দূর করতে পারে কমলার খোসা। শুধু কমলার খোসার ভেতরের দিকে একটু পানি ছিটিয়ে দিয়ে দাঁত ঘষে নিতে হবে। আপনি চাইলে কমলার কাঁচা খোসা বেটে পেস্টের মতোও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ত্বকের ক্ষেত্রে কমলা লেবুর রস খুবই উপকারি।

ত্বকের ক্ষেত্রে: কমলার খোসা ত্বকের নমনীয়তা রক্ষায় অনেক আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা ত্বকের তেলের ভারসম্য ঠিক রাখে, ত্বককে মসৃণ ও নরম করে তোলে। তবে কমলার খোসা সরাসরি ত্বকে কখনো প্রয়োগ করা উচিত নয়। ত্বকের জন্য তাজা কমলার খোসার সঙ্গে ডাল বাটা যোগ করতে হবে। মুসুরের ডাল বেটে নিয়ে এর সঙ্গে কমলার খোসা বাটা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এটা নিয়মিত ত্বকে লাগাতে পারলে ত্বক অনেক মসৃণ ও নরম হবে। এতে মুখের দাগও অনায়েসেই দূর হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ব্রণের সমস্যা দূর করতে পারে কমলার খোসা। কমলার খোসাতে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রো ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনিফ্লামেটরি ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান, যা ব্রণের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এগুলো মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে থাকে। একটা গোটা কমলার খোসা এক কাপ পানিতে সেদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর এ পানি ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তারপর ফ্রিজ থেকে বের করে পানি মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।

রান্নার ক্ষেত্রে: কমলার খোসা রান্নায় ব্যবহার করলে রান্নার স্বাদ ও গন্ধ অনেকটাই বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি কমলা লেবুর খোসায় ভিটামিন সি রয়েছে, তা শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিন সি-এর অভাব পূরণ করে থাকে। বাড়তি কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার না করে কেক বিস্কুট ইত্যাদি তৈরির সময় কমলা লেবুর খোসা ব্যবহার করতেই পারেন। এছাড়াও কমলার খোসা সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করলে একটা অসাধারণ ভিন্ন স্বাদ যোগ হবে। জ্যাম, জেলী তৈরির ক্ষেত্রেও এসব খোসা ব্যবহার করতেই পারেন।

স্ক্রাবার হিসেবে কমলার খোসা: শুকনো কমলার খোসা প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে খুবই উপকারি। কমলার খোসা ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে চেহারায় উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্লাক হেডস ও হোয়াইড হেডস অপসারণের কাজেও কমলার খোসা খুবই উপকারি। কমলার খোসা গুঁড়ো করে নিয়ে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। রাসায়নিক স্ক্রাবারের থেকে অনেক বেশি উপকারি এ কমলার স্ক্রাবার।

পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে: ক্ষুধা মন্দা হলে বা পেট খারাপ হলেও কমলার খোসা খুবই উপকারি। একটা কৌটার মধ্যে চিনি নিয়ে এরমধ্যে কমলার খোসা রেখে দিতে হবে। এতে চিনির মধ্যে কমলার গন্ধ আসবে ও স্বাদও অনেকে বেড়ে যাবে। এ চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার ক্ষুধার উদ্রেক করে, ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে ও পেট খারাপের মতো সমস্যাও কমিয়ে দেয়।

অন্যান্য ক্ষেত্রে: কোনো কারণে চিনি ভিজে গেলে তাতে কিছু শুকনো কমলা লেবুর খোসা রেখে দিতে পারেন। শুকনো কমলার খোসায় রয়েছে আদ্রতা শোষণ করার ক্ষমতা। এটা সহজেই চিনির আদ্রতা শোষণ করে চিনিকে করে তুলবে ঝরঝরে। বর্ষাকালে চিনিতে ভেজা ভেজা ভাব হলে এটা করে দেখতে পারেন। ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব ও গন্ধ দূর করার কাজেও ব্যবহার করতে পারেন কমলার খোসা।

পাঠকের মতামত