কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে চলতি সপ্তাহে শুরু হওয়া তিন সপ্তাহব্যাপী টিকাদান কর্মসূচির আওতায় ৬ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কলেরার টিকা দেওয়া হবে। পানিবাহী ডায়রিয়ায় (এডব্লিউডি) আক্রান্তের ঘটনা বাড়তে থাকায় ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে প্রাণঘাতী এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে কর্মসূচিটি শুরু করা হয়েছে।
৮-১৪ ডিসেম্বর শরণার্থী শিবিরগুলোতে এক বছর থেকে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১,৩৯,৮৮৮ জন শিশুকে কলেরার টিকা খাওয়ানো হবে। এছাড়া ৮-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে এক বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেককে (৪,৯৫,১৯৭ জন) টিকা খাওয়ানো হবে। সবমিলিয়ে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৮৫ জনকে টিকা খাওয়ানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), ইউনিসেফ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে চলমান এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে এমন লোকদের কলেরার টিকা খাওয়ানো যারা অতীতে সব কলেরা টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে। পরিচালন ব্যয়সহ এই কর্মসূচির অর্থ যোগান দিয়েছে ভ্যাক্সিন অ্যালায়েন্স জিএভিআই।
বাংলাদেশে ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধি ড. বর্ধন জং রানা বলেন, “আমরা এই জনগোষ্ঠীকে ডায়রিয়াজনতি রোগের বিরুদ্ধে আরও সুরক্ষিত করতে চাই। মানসম্পন্ন পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট অগ্রগতি সত্ত্বেও এই জাতীয় রোগগুলো উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে: শরণার্থী শিবিরের কাছাকাছি বসবাসরত স্বাগতিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮০ শতাংশকেই পূর্ববর্তী টিকাদান কর্মসূচিগুলোতে কলেরার টিকা খাওয়ানো হয়নি।”
পূর্ববতী কলেরার টিকা কর্মসূচিগুলো রোগের বিস্তার ঠেকাতে সহায়তা করেছে। ২০১৭ সাল থেকে জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়। এ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে কলেরার টিকা দেওয়া হয়েছে।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেন, “যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তীব্র পানিবাহিত ডায়রিয়া প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা প্রদানে ডায়রিয়া ট্রিটমেন্ট সেন্টারগুলোর একটি নেটওয়ার্ককে সহায়তা দিয়ে আসছে ইউনিসেফ। এছাড়া পারিবারিক পর্যায়ে ইতিবাচক স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো ছড়িয়ে দিতে এবং ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পৃক্ত করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।”
ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স জিএভিআই’র উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অনুরাধা গুপ্তা বলেন, “জীবন রক্ষাকারী টিকাগুলোসহ কাউকেই, বিশেষ করে শিশুদের সুস্বাস্থ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। এ কারণেই আমরা ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজারে টিকাদান কার্যক্রমগুলোতে সহায়তা দিয়ে আসছি এবং কলেরা থেকে সুরক্ষিত রাখতে, রোগের বিস্তার ঠেকাতে এবং কেউ যাতে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমরা সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।”
কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী (সিএইচডব্লিউ) ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ৪,৩০০ স্বেচ্ছাসেবীর সমন্বয়ে গঠিত ১,৪৫০ টিরও বেশি দল ঘরে গিয়ে টিকা দেবে। এ ছাড়াও ২৪০ জন তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) এবং ৬৮ জন টিকা খাওয়ানোর ক্যাম্প সমন্বয়কারী শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এবং ১৫ জন তত্ত্বাবধায়ক ও ৩০টি সমন্বয়কারী দল রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করবে।
শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে যথাযথ মান নিশ্চিত করতে সকল সহযোগী এই কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করবে। সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়, ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিসিডিআর,বি) এবং অন্য সহযোগীরা।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “প্রাণঘাতী এই রোগ দূরে রাখতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা এবং হাইজিন নিশ্চিত করার মাধ্যমে কলেরা ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা প্রাপ্তির ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং হাইজিনের বিষয়গুলো তুলে ধরতে ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিভিন্ন অংশিদাররা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের সক্ষমতা বাড়াতে ইউনিসেফ ও এর সহযোগীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।”
আর্লি ওয়ার্নিং এবং ইমার্জেন্সি সার্ভিলেন্স সিস্টেমের (ইডব্লিউএআরএস) মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তীব্র পানিবাহিত ডায়রিয়ার ঘটনাগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কী পরিমাণ রোগে আক্রান্তের তথ্য আসছে সেটাও দেখা করা হচ্ছে। এছাড়াও, পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণে ডব্লিউএইচও সহায়তা দিচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলছে।
ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফ উভয়েই কলেরার প্রকোপের যে কোনো ঘটনায় দ্রুত সাড়া দেওয়া নিশ্চিত করতে জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল সামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে।
মুখে খাওয়ানোর কলেরা টিকাসমূহ নেওয়া হয়েছে বৈশ্বিকভাবে মজুদ করা কলেরার টিকা থেকে, যার অর্থায়ন করেছে জিএভিআই। প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার জন্য এই মজুদের ব্যবহার তত্ত্বাবধান করে আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী গ্রুপ (আইসিজি), যেখানে ডব্লিউএইচও, ইউনিসেফ, আইএফআরসি ও এমএসএফের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। ২০১৩ সালে এই মজুদ ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর লাখ ডোজ কলেরার টিকা কক্সবাজারসহ বিশ্বজুড়ে প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সহায়তা করেছে।
শখের বাইক কেড়ে নিলো চট্টগ্রামের পটিয়ার তানভির জামান (২৩) নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর প্রাণ। বৃহস্পতিবার ...
পাঠকের মতামত