প্রকাশিত: ০৭/০৪/২০২১ ২:০৩ পিএম

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার::
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হলেও লবণের দাম ঠেকেছে তলানিতে। মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম এতই কমেছে যে ২০ মণ লবণের বিনিময়ে কোনো রকমে এক বস্তা চাল পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতি কক্সবাজারের লবণ উৎপাদন এলাকায়। লবণের দাম এ বছর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।

অন্যদিকে দাম বেড়েছে চালসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামের চালের কেজিও ৫০ টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির এক বস্তা চালের দাম দুই হাজার ৫০০ টাকা। মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদনকারীরা ২০ মণ লবণ বিক্রি করে পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এক বস্তা চালের বিনিময় হচ্ছে ২০ মণ উৎপাদিত লবণ। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে প্রতি কানি (৪০ শতক) জমিতে এক মৌসুমে লবণ উৎপাদন হয় ৩০০ মণ।

চাষিরা (উৎপাদনকারী) প্রতি কানি জমিতে লাগিয়ত খরচ করেন ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক মণে লাগিয়ত খরচ পড়ে ৮০ টাকা। এক মণ লবণের পলিথিন বাবদ খরচ হয় ২০ টাকা। পানি সেচের মেশিন খরচ বাবদ খরচ পড়ে প্রতি মণে ১০ টাকা। লবণ মাঠ থেকে বিক্রির জন্য বাজার পর্যন্ত বহন খরচ পড়ে মণপ্রতি ৪০ টাকা। মণপ্রতি মজুরি পড়ে ৮০ টাকা। সব মিলিয়ে এক মণ লবণ উৎপাদন খরচ হয় ২৩০ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ মাত্র ১৫০ টাকা। সে হিসাবে ২০ মণ লবণের দাম পড়ে দুই হাজার ৫০০ টাকা। যা এক বস্তা চালের দামের সমান। এই দৈন্যদশায় এখন লবণ চাষিরা মাঠ থেকে উঠে যাচ্ছেন। লবণ উৎপাদনের প্রতি চাষিদের অনীহা এসে গেছে। এ নিয়ে তাঁরা সংসার খরচ পোষাতে পারছেন না।

এর কারণ হিসেবে টেকনাফ সীমান্তের সাবরাং এলাকার বিশিষ্ট লবণ উৎপাদনকারী এবং টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, “আমি এই বছর ৫০ কানি জমিতে লবণ উৎপাদন করছি, কিন্তু লাভের কোনো মুখ দেখছি না। নিজের জমি হওয়ায় আমার কোনো মাঠের লাগিয়ত খরচও যাচ্ছে না। এর পরও লবণ চাষে সফলতা খুঁজে পাচ্ছি না। এ ছাড়া এক-তৃতীয়াংশ জমি চাষবিহীন পড়ে আছে। এমন পরিস্থিতি কক্সবাজারের পুরো লবণ উৎপাদন এলাকায়।”

তিনি জানান, গত কয়েক বছরে দেশে লবণ আমদানি বন্ধ থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের নাম দিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম সালফেটের নাম দিয়ে সাধারণ ব্যবহার্য লবণ আমদানি করছে। এ কারণে দেশের মধ্যে বিদেশি লবণের সয়লাব হয়ে গেছে। ফলে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন কেন্দ্র কক্সবাজার জেলায় লবণের মাঠগুলোতে উৎপাদন হচ্ছে না। লবণ উৎপাদন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।

তিনি আরো বলেন, “বিদেশে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং সোডিয়াম সালফেট লিকুইড হিসেবে রয়েছে। বিভিন্ন রঙের সোডিয়াম ক্লোরাইড ও সোডিয়াম সালফেটও রয়েছে। সেগুলো আমদানি না করে আমাদের দেশের লবণ বাদ দিয়ে বিদেশি লবণ আমদানি করে।”

এ ব্যাপারে বিসিকের লবণ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা রেদুয়ান রশীদ বলেন, “লবণ উৎপাদনের মৌসুম হলো মধ্য নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত। গত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত জেলায় উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৯৯ মেট্রিক টন অপরিশোধিত লবণ। অথচ চলতি বছর লবণের চাহিদা এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ লাখ ১৭ মেট্রিক টন। ফলে চাহিদার চেয়ে মৌসুমের এ সময় পর্যন্ত লবণ কম উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৯৭৬ হাজার ১১৮ টন। এ বছর লবণ উৎপাদনযোগ্য জমির পরিমাণ ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর।”

তিনি আরো বলেন, “এরই মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়েছে। কক্সবাজারেও কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানছে। ফলে উপকূলীয় লবণ মাঠের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লবণ উৎপাদনের সময় বাকি আছে আর মাত্র এক মাস ১০ দিনের মতো। এই অল্প সময়ের মধ্যে চাষিরা লবণ চাষ করতে পারবেন কি না, সেটা বড় ভাবনার বিষয়।”

পাঠকের মতামত