প্রকাশিত: ১৯/০৯/২০২১ ৮:৪৯ পিএম
সংসদ ভবন

সংসদ ভবন
কক্সবাজারে বন বিভাগের ৭০০ একর বনভূমিতে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে বন অধিদফতর। বন অধিদপ্তরের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে ওই বনভূমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছে সংসদীয় কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে ওই জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আজ ররিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল জয়, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো. শাহীন চাকলাদার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বনভূমির ওই জমি বরাদ্দ দেওয়া ‘বিধিসম্মত’ হয়নি। তাই আমরা ওই প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমতি দিতে না করেছি। পাশাপাশি সঠিক তথ্য তুলে ধরতে বলেছি। পরিবেশমন্ত্রীও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, যেখানে বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার চলছে। সেখানে সরকারের আরেকটি সংস্থা যদি বনবিভাগের জমি নিয়ে নেয়, এটা তো সঠিক নয়। তিনি আরো বলেন, জনপ্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে আমরা সমর্থন করি। তবে ওই জায়গায় প্রকল্পটি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এটা আমাদের বিধি-নিয়ম এমনকি সংবিধান পরিপন্থী। প্রকল্পটা অন্য জায়গায় হোক।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠাবে জানিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, এটা কীভাবে হলো। যদি কেবল জমির দাগ ও খতিয়ান দেওয়া হয় এবং ভূমির আকার ও প্রকৃত বর্ণনা না করে, সেটা হতে পারে। আমরা মনে করি, সেটাই হয়েছে। এটা আমরা দেখবো। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে অনুমতি এসেছে, সেই দফতরও হয়তো এই বিষয়টি পুরোপুরি জানে না বলে তিনি ধারণা প্রকাশ করেন।

বনবিভাগ থেকে আগেই আপত্তি দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি বলেন, বন বিভাগ থেকে আগেই বলেছিল, এটা দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতর থেকে একটা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা জানতো না জমির ধরন কী। তাদের কাছে হয়তো দাগ ও খতিয়ান নম্বর দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই জমির বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সংরক্ষিত বন হিসেবে এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। আর এ জমি কোনও অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয়।
কমিটি সূত্র জানায়, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ করতে সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। অ্যাকাডেমি নির্মাণের জন্য ওই জমি এক টাকা প্রতীকী মূল্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্টেশন’ নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদফতরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়। সংস্থাটি ওই বছরই বিভিন্ন শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জমি বরাদ্দ নিয়েছে।
সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই জমিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান রয়েছে। ২০-২০০ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় রয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। ওই এলাকা হাতি, বানর, বন্য শুকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল। ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ঝিলংজা বনভূমির ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। সুত্র: কালের কন্ঠ

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...