প্রকাশিত: ০৩/১২/২০২১ ৯:৩১ এএম

কক্সবাজারে সদ্য সমাপ্ত ৫০টি ইউনিয়নের নির্বাচনের ফলাফলে ২৪টিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। তৎমধ্যে ১৪টিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ১২টি বিএনপি জামায়াত সমর্থিত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

বিদ্রোহীদের প্রতি কিছু প্রভাবশালী নেতার গোপন সমর্থন থাকায় নির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয় বলে জানালেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
কক্সবাজারে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ৫০টি ইউনিয়নের ২৪টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ২৬টিতে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।
এতে জামানত হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৪ জন প্রার্থী। ৫০টি ইউপিতে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা জোর প্রচারণা চালালেও রামু,পেকুয়া ও চকরিয়ায় কয়েকজন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির বিরোধীতার কারণে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। রামু,চকরিয়া ও পেকুয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধীক প্রার্থী এসব নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেও কোন কুলকিনারা পায়নি।

পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহিদুল ইসলাম স্থানীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ এনেছেন। তিনি নির্বাচনের আগেও অভিযোগ করে বলেন নৌকা প্রতীককে পরাজিত করতে কাজ করছেন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থীকে মদদ দিয়ে নৌকার পরাজয় তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বিদ্রোহীদের বিজয়ে শীর্ষে রয়েছেন রামু উপজেলা। এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৭টিতে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে আওয়ামী লীগের জন্য নয়, নিজস্ব স্থানীয় বলয় সৃষ্টি করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিভিন্ন ভাবে সমর্থন যুগিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতা।
১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীরা পক্ষে ওই নেতা কোন ভূমিকায়ই রাখেননি এমন অভিযোগ রয়েছে। ওই জনপ্রতিনিধি সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গোপনে বিরোধীতা করলেও ৫টি ইউনিয়নের ৪টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এতে সদর উপজেলায় গত ইউপি নির্বাচনের চাইতে প্রাপ্ত ভোট দ্বিগুণ হয়েছে নৌকা প্রতীকের।
রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন গত ইউপি নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনি শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন।
স্থানীয়ভাবে নিজস্ব বলয় তৈরী করতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করতে কাজ করেছেন। যার ফলে ১১টি ইউনিয়নে ৭টিতে নৌকা প্রতীক পরাজিত হয়েছে। টেকনাফ উপজেলায় অভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। প্রথম দফার নির্বাচনে টেকনাফের ৪টি ইউনিয়নের মাত্র একটিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী।
নির্বাচন স্থগিত থাকা হোয়াইক্যং ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন জেলা জামায়াতের আমির নুর মোহাম্মদ আনোয়ারী। টেকনাফেও নিজস্ব বলয় সৃস্টি করতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি। যার ফলে ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগ,একটিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, একটিতে বিএনপি সমর্থিত একটিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। প্রভাবশালী নেতারা দলের প্রার্থীর বিরোধীতা করায় জয়লাভ করতে পারেনি এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিমুল হাসান জানান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা এবং কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগেরাজোর তৎপরতার কারণে সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন স্থগিত একটি ইউনিয়নেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এগিয়ে আছেন। গোপনে অনেকে বিরোধীতা করলেও কোন কাজ হয়নি। যার সুফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
মহেশখালী উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার আলম জানান, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করায় পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়নের ৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ হারাতে পারে না।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ করলে নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করতে হবে। নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করা দলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল। কারা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তা সকলেই দেখেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ বিবেচনা করবেন। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত