প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০১৯ ৮:০০ পিএম

শফিউল্লাহ শফি, যুগান্তর::
কক্সবাজার পর্যটন এলাকার কলাতলীর সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলছে হরদম দখলবাজি। সরকারি শত কোটি টাকার জমির ওপর প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে অবৈধ স্থাপনা।

দিনে যেমন-তেমন গভীর রাতেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে দখলের মহোৎসব। প্রশাসন কোনো মতেই দমাতে পারছে না শক্তিশালী দখলবাজদের। কয়েক দফা উচ্ছেদের মাইকিং করার পরও থেমে নেই তারা।

সূত্রমতে, কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলবাজ সিন্ডিকেটের সারিবদ্ধ হরেক রকমের অবৈধ দোকান। যেখানে রয়েছে শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই, ওষুধের ফার্মেসি, ট্যুরিজম অফিসসহ নানা পেশার দোকান। এ উত্তর সারির অবৈধ স্থাপনার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দুই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। যারা সম্প্রতি এ অবৈধ স্থাপনা বা মার্কেটের নামে সুগন্ধা বৃহত্তর শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাই ব্যবসায়ী সমিতির জন্ম দিয়েছে।

এ সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন। মূলত এ দু’জনের নেতৃত্বে সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর সারির সরকারি শত কোটি টাকার জমি দখলে রয়েছে।

তাদের সঙ্গে যারা দখলবাজদের তালিকায় রয়েছে- মহেশখালীর মুফিজ, কলাতলীর নূর মোহাম্মদ, রবিন, তার বড় ভাই নাছির, রাসেল, মো. হানিফ, আরিফ, বাবু, পরিবেশ অধিদফতরের অফিস সহকারী আলম, সোহেল, সৈকত, আল্লার দান হোটেলের মালিক মনির, নয়ন, কিবরিয়া, ইয়াহিয়া, ভারুয়াখালী খালেক, মো. মেহেদী, হালিম, হামিদ সওদাগর, ছোট হামিদ, সাদেক, আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ ও সাহেদ।

কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে এস আলম কোম্পানির দখলে ছিল। পরে দীর্ঘদিন উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার পর পুনরায় সরকারি কোষাগারে চলে আসে। বর্তমানে পরিত্যক্ত থাকায় দলের ছেলেরা দোকান নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছে। তবে সরকারের প্রয়োজন হলে ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও জানান এ নেতা।

সূত্র জানায়, সরকারি মূল্যবান জমি দখলের জন্য প্রশাসন ম্যানেজ ও মামলা, হামলাসহ নানা কৌশল চালিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জসিম উদ্দিন। মূলত তার নেতৃত্বে চলে দখলের সব কার্যক্রম। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের মাইকিংয়ের পরও নানা কৌশলে বহাল তবিয়তে টিকে আছে তারা। ভয়ভীতি দেখিয়ে উচ্ছেদ অভিযান থামানো হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, আগে যেসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তা আমরা কয়েকজন মিলে করেছি। বর্তমানে যেসব দোকান নির্মাণ চলছে সেগুলোর সঙ্গে আমি জড়িত নই।

জসিমের বক্তব্য নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে দখলের যে মহোৎসব চলছে তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে শীর্ষ দখলবাজ শহরের বাহারছড়া এলাকার পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জয়নাল। তার সঙ্গে রয়েছে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের হোতা সাতকানিয়ার হাফেজ ও বাহারছড়ার মনিয়া, সৈকতপাড়ার নজু এবং কলাতলীর মিঠু। এ পাঁচজনের নেতৃত্বে চলছে অর্ধশত অবৈধ স্থাপনা বসানোর কাজ। ইতিমধ্যে ১০-১২টি দোকান চড়া দামে বিক্রিও হয়ে গেছে। পাশাপাশি মাসিক ১-১২ হাজার টাকায় ভাড়াও হয়েছে বেশ কয়েকটি।

সরকারি জমি দখল করে চড়া দামে বিক্রির ব্যাপারে জয়নাল বলেন, বারবার উচ্ছেদের পর অন্যরা যেমন করেছে আমিও আমার দোকান করেছি। তবে মিঠু জানান, দখল হচ্ছে তা সত্য। কিন্তু আমি কোনো প্রকার দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। জয়নাল ও হাফেজ কি করছে তা আমি জানি না।

প্রশাসনের একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণের কারণে পর্যটন এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে ৭ জুলাই রোববার সকালে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তারের নেতৃত্বে সুগন্ধা এলাকায় মাইকিং করে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় হয়।

প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যদি নিজ উদ্যোগে তা সরানো না হয় তাহলে ৮ জুলাই সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে বলে ওই সময় হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন সহকারী কমিশনার ভূমি। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও উচ্ছেদ মাইকিংয়ের কার্যকারিতা দেখেননি পর্যটন এলাকার মানুষ।

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ৭ জুলাই রোববারের মধ্যে সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশ মুখ (প্রধান সড়ক) থেকে শুরু করে সৈকতের মুখ পর্যন্ত দু’পাশে গড়ে তোলা অবৈধ দোকানগুলো সরিয়ে ফেলতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সরায়নি। ভিভিআইপির প্রটোকলসহ অফিসের জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের জন্য উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়টি হয়ে ওঠেনি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সুগন্ধা পয়েন্টের এ অবৈধ স্থাপনার সিংহভাগ ইতিপূর্বে ৯ বার উচ্ছেদ করে উদ্ধার সরকারি জমিতে তারকাটা দেয়াসহ ৯০টি নারকেল গাছের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিছু দিন যেতে না যেতেই তারকাঁটা, নারকেল গাছ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে যায় সৈকত এলাকার শীর্ষ দখলবাজ যুবদল নেতা জয়নাল ও সাতকানিয়ার হাফেজ।

কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম মাহফুজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারি জমি দখল করে অবৈধ দোকান নির্মাণকারীদের উচ্ছেদের ব্যাপারে ইতিপূর্বে মাইকিং করা হয়েছিল। যদি তারা নিজেদের উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেয় তাহলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ করা হবে। তাছাড়া এটি উচ্ছেদের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...