প্রকাশিত: ১৯/০৭/২০১৭ ১১:২৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:৩৫ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক ::
মন্ত্রণালয়ের কঠোর হুঁশিয়ারিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কক্সবাজারের কলেজ গুলোতে চরম ভর্তি বাণিজ্য করা হয়েছে। জেলার চার কলেজ ছাড়া অন্যসব কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করেছে। এসব কলেজগুলো নির্ধারিত ভর্তি ফি’র স্থলে প্রায় তিনগুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে। এই নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগই পায়নি। কারণ পছন্দের কলেজে ভর্তির ‘মারপ্যাঁচে’ পড়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নিয়েছেন। এক হিসাবে দেখা গেছে জেলায় একাদশের ভর্তি নিয়ে ৭০ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে কলেজগুলো।

জানা গেছে, গত ৯ থেমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। আবেদনে একজন শিক্ষার্থী পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কলেজ পছন্দ করার সুযোগ রাখা হয়। মূল পর্বে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হলেও রোববার অপেক্ষামানদের জন্য সর্বশেষ আবেদনের ফলাফল ঘোষিত হয়।

মন্ত্রণালয়ে বিধি মতে, মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনচার্জসহ সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা। আবার দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় সর্বোচ্চ ভর্তি আদায় করেছে কক্সবাজার হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ ৫৪০০ টাকা (বিজ্ঞান বিভাগ) আদায় করেছে। এছাড়া মানবিক ও বাণিজ্যে নিয়েছে ৪৯৫০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ২০০জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিজন থেকে গড় ৩০০০ টাকা অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়েছে। সে হিসাবে ৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নিয়েছে কক্সবাজার হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল কলেজ ।

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কক্সবাজার কমার্স কলেজ। এই কলেজে একমাত্র শাখা বাণিজ্য বিভাগের প্রতিজন শিক্ষার্থী ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ৫২০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ১৩২জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এই কলেজ প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত ৩২০০ টাকা নিয়েছে। সে হিসাবে ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

মহেশখালী বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি ফি নিয়ে হয়েছে ৩৫০০ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে নেয়া হয়েছে ৩৩০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ২৫১জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এই কলেজে প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ২৩০০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে পৌনে ৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

ঈদগাঁও ফরিদ আহামদ ডিগ্রি কলেজে প্রতি বিভাগে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ৪০০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ৪০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ২০০০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে ৮লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

রামু কলেজে প্রতি বিভাগে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ২৯০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত বিএম শাখাসহ চার বিভাগে প্রায় ৯০০জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ১৯০০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে ১৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

কুতুবদিয়া কলেজে প্রতি বিভাগে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ৩৩২০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে ‘অতিরিক্ত গড়ে ২৩২০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ২৭০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ৪৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ১৭০০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে প্রায় সাড়ে ৭লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

মহেশখালী কলেজে প্রতি বিভাগে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ২৫০০ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ৬১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ১৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। সে হিসাবে প্রায় ৯লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

বদরখালী কলেজে প্রতি বিভাগে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে ২৯৩৫ টাকা করে। এই কলেজে এখন পর্যন্ত ২১৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। সে হিসাবে প্রতিজন শিক্ষার্থী থেকে অতিরিক্ত গড়ে ১৯০০ টাকা করে নিয়েছে। সে হিসাবে প্রায় ৪লাখ টাকা অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও পেকুয়া শহীদ জিয়ার উপকূলীয় কলেজ, উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজ, মহেশখালী আলমগীর ফরিদ টেকনিক্যাল এ- বিজনেস ম্যানেজমেন্টা কলেজ, পেকুয়া বিএমআইটি ও হোয়ানক কলেজেও অতিরিক্ত ফি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফি’র বেশি নেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ফি নিলে পাঠদানের অনুমতি, অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিও বাতিল করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন স্পষ্ট হুঁশিয়ারিকে কলেজগুলো তোয়াক্কাই করেনি।

তবে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কক্সবাজার সরকারি কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ এবং কক্সবাজার সিটি কলেজ ও টেকনাফ কলেজে কোনো রকম অতিরিক্ত ফি নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। মন্ত্রণালয়ের বিধি অমান্য করে অতিরিক্ত ফি নেয়া অপরাধ। এটা কোনো ভাবে মানা যায় না। এ ব্যাপারে আমি খোঁজ নেবো। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।সুত্র :সিবিএন

পাঠকের মতামত

নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, এখন বিসিএস ক্যাডার

গল্প-আড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়জীবনটা উপভোগের সুযোগ আবদুল মোত্তালিবের হয়নি। দুপুর গড়ালেই তাঁকে ছুটতে হতো কাজে। অসচ্ছলতার কারণে ...