প্রকাশিত: ১৬/০৪/২০১৮ ৭:১৩ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:০৭ এএম

নিউজ ডেস্ক::

পুলিশের অবহেলার কারণে জেলে যেতে হয়েছে পঁয়ষট্টি বছরের বৃদ্ধা নুর বেগম ও তার মেয়ে পারভীনকে। তিন বছরের নিখোঁজ নাতিকে খুঁজতে গিয়ে ২০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নুর বেগম পড়েছেন আইনের মারপ্যাঁচে। ষাট বছরের বৃদ্ধা ফাতেমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অপরাধে মা-মেয়েকে কারবন্দি দিন কাটাতে হচ্ছে। ছয়মাস অতিবাহিত হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ শিশু হাসান তাহসিনের। নিহত ফাতেমা পেশায় ধাত্রী। নিখোঁজ শিশু হাসানের সন্ধান পাবার পর পুলিশ অভিযানে গেলে ফাতেমাকে যেমন আত্মহত্যা করতে হতো না তেমনি নুর বেগম ও তার মেয়েকে জেলেও যেতে হতো না।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর সকাল দশটায় বন্দর থানার সল্টগোলা ক্রসিংয়ের আলম ভবনের ভাড়াটিয়া হালিমা আক্তারের তিন বছরের শিশু হাসান নিখোঁজ হয়। হালিমা নুর বেগমের মেয়ে। এ ব্যাপারে ২৯ অক্টোবর বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন (ডায়েরি নম্বর-১৪০৩) হালিমা। কয়দিন পর একই এলাকার বাসিন্দা ধাত্রী ফাতেমা ওরফে সাজেদা খাতুন (৬০) নুর বেগমকে বলেন, ২০ হাজার টাকা দিলে নিখোঁজ হাসানকে তিনি এনে দিতে পারবেন। হাসান কক্সবাজারে তার ভাইয়ের বাসায় আছে। কথা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা প্রদানও করেন নুর বেগম। গত ২৬ মার্চ নিখোঁজ হাসানকে নিয়ে আসার কথা ছিল। সময়মতো নাতিকে না পেয়ে বন্দর থানার ওসি (তদন্ত) বিকাশ সরকারের কাছে নিয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন নুর বেগম। পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফাতেমা জানিয়েছিলেন নিখোঁজ হাসান কক্সবাজারে তার ভাইয়ের কাছেই আছে। সময় দিলে হাসানকে এনে দেবেন। সবকিছু শুনে পুলিশ কর্মকতা বিকাশ সরকার ফাতেমাকে নুর বেগমের জিম্মায় থানা থেকে ছেড়ে দেন। থানা থেকে বের হবার পর ধাত্রী ফাতেমাকে সদরঘাট থানার রহমান গলিতে তার মেয়ে পারভীনের বাসায় রাখেন নুর বেগম। থানা থেকে আসার পরদিন (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে এগারোটায় বিষপান করলে মুমূর্ষু অবস্থায় ফাতেমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে যান নুর বেগম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩১ মার্চ চমেক হাসপাতালে মারা যান ফাতেমা। ষাট বছরের বৃদ্ধা ফাতেমাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তা করার অপরাধে নুর বেগম ও তার মেয়ে পারভীনকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন বড়ুয়া বাদী হয়ে এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেন।
জানতে চাইলে বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ সরকার বলেন, শিশু আহসান নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। গত ২৬ মার্চ ফাতেমাকে নিয়ে থানায় এসেছিলেন নুর বেগম। তার দাবি, নিখোঁজ হাসানকে এনে দেয়ার কথা বলে ফাতেমা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ফাতেমাও জানিয়েছিলেন নিখোঁজ হাসান কক্সবাজার তার ভাইয়ের বাসায় আছে। ইতিমধ্যে মহিউদ্দিন নিহত হওয়ায় শিশু আহসানকে খুঁজতে যাওয়া হয়নি। ফাতেমা স্বেচ্ছায় নুর বেগমের কাছে থাকতে চেয়েছিল। পরদিন নুর বেগম ফোন করে জানান, ফাতেমা রাতে বিষপান করেছেন। ফাতেমাকে দ্রুত হাসপতাালে নিয়ে যেতে আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম।
সদরঘাট থানার পরিদর্শক (ওসি) নেজাম উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয় মর্গে এক মহিলার লাশ পড়ে আছে। হাসপাতালে গিয়ে নুর বেগম জানান বিষপান করে মারা যাওয়া উক্ত মহিলা তার মেয়ের বাসায় ছিলেন। তার নিখোঁজ নাতিকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আর দেননি। পেশায় ধাত্রী নিহত মহিলার নাম ফাতেমা ওরফে সাজেদা খাতুন।

পাঠকের মতামত